Editorial Ganashakti aspect

দৃষ্টিভঙ্গি

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti aspect


খুচরা মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে জানুয়ারি মাসে ৬.৫২ শতাংশ হবার পর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন মূল্যবৃদ্ধি কমানোর জন্য সরকার সব রকমের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদিও সেসব পদক্ষেপ যে ঠিক কোন ধরনের তা স্পষ্ট নয়। আগের মাসে (ডিসেম্বর) মূল্যবৃদ্ধির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ গণ্ডি ৬শতাংশের কিঞ্চিত নিচে নামায় সরকারি তরফে ঢাক ঢোল পিটিয়ে সাফল্য প্রচারের ঝড় তোলা হয়েছিল। এর আগে গত প্রায় দুবছর ধরে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৬শতাংশের বহু উপরে। এক সময় সেটা ১০শতাংশের দিকে পাড়ি দিয়েছিল।

তখনও অর্থমন্ত্রী প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে বলে গেছে মূল্যবৃদ্ধি হ্রাসে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। তখনও মন্ত্রী কথিত পদক্ষেপগুলি দৃশ্যগোচর বা বোধগোচর হয়নি। একমাত্র সুদের হার বাড়ানোর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হয়েছে। লক্ষ্যণীয় মূল্যবৃদ্ধির হার তখনই খানিকটা কমেছিল যখন বাজারে নতুন কৃষিজপণ্য এসেছে অর্থাৎ জোগান বেড়েছে। তাতে সরকারের কোথায় কৃতিত্ব তা বোঝা গেল না। বাস্তবে মূল্যবৃদ্ধি। নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার বাড়ানো ছাড়া সরকার সেই অর্থে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপই নেয়নি। শুধু ভাষণ বিবৃতি আর আশ্বাস প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে।

বিগত দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির হারের সর্বাধিক কোপে পড়েছে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশের অধিকাংশ মানুষ। মূল্যবৃদ্ধির যে সূচক সরকার প্রকাশ করে তার সিংহভাগটাই আসে খাদ্যপণ্য থেকে। অন্যান্য জিনিসের দাম যতটা বাড়ে তার থেকে অনেক বেশি হারে বাড়ে খাদ্যপণ্যের দাম। গরিব মানুষ তাদের আয়ের বেশি অংশ ব্যয় করে খাদ্যপণ্যের পেছনে। যাদের যত বেশি আয় তাদের আয়ের তত কম অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে।


বিপরীতে যাদের যত কম আয় তাদের আয়ের তত বেশি অংশ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কাও আনুপাতিক হারে সর্বাধিক পড়ে কম আয়ের মানুষদের ওপর। মূল্যবৃদ্ধি মানুষের বিশেষ কম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে। গরিব মানুষকে যেহেতু খাদ্যের পেছনে আয়ের বেশিরভাগ অংশ খরচ করতে হয় তাই অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের সামর্থ তাদের কমে যায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমে যায়। দেশে এখন সেটাই ঘটছে।
কোভিডে ধসে যাওয়া শিল্প সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার নানা ধরনের প্যাকেজের মাধ্যমে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য দেয়। কিন্তু বাস্তবে তাতে বিশেষ সুফল আসেনি। কারণ বাজারে যদি পণ্যের চাহিদা না বাড়ে তাহলে পণ্য উৎপাদন বাড়ানো যায় না। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে পণ্যের চাহিদা বাড়বে কি করে? মজার ব্যাপার হলো সরকার ক্রেতার হাতে অর্থের জোগান না বাড়িয়ে বাজারে পণ্যের জোগান বাড়িয়েছে শিল্পসংস্থার মালিকদের অর্থ জুগিয়ে। অন্যদিকে উচ্চ জ্বালানিমূল্য রেখে পণ্যের মূল্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। ফলে উচ্চ মূল্যের পণ্য বাজারে বিকোচ্ছে না মানুষের কেনার টাকা নেই বলে।

যেটা সরকারের করার কথা ছিল সেটা হলো শিল্পসংস্থাকে আর্থিক সুবিধা না দিয়ে মানুষের আয় বা রোজগার বাড়ানোর দিকে সর্বাধিক নজর দেওয়া। দরকার ছিল মানুষের হাতে কাজ দেওয়া, তাদের মজুরি বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ জোগান বাড়ানোর বদলে চাহিদা বৃদ্ধিতে বেশিনজর দেওয়া জরুরি ছিল। সরকার তা করেনি। এখানেও সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। জোগান বৃদ্ধিতে সরাসরি উপকৃত হয় বড়লোকরা, মালিকরা। আর চাহিদা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় উপকৃত হয় সাধারণ মানুষ। মোদী সরকার যেহেতু বিত্তবান কর্পোরেটের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে তাই সাধারণ মানুষের কথা ভাবার প্রশ্নই ওঠে না।

Comments :0

Login to leave a comment