GK \ DIPABALI — TAPAN KUMAR BIRAGYA \NATUNPATA \ 1 NOVEMBER 2024

জানা অজানা \ দীপাবলির লোককথা — তপন কুমার বৈরাগ্য \ নতুনপাতা \ ১ নভেম্বর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

GK  DIPABALI  TAPAN KUMAR BIRAGYA NATUNPATA  1 NOVEMBER 2024

জানা অজানা

দীপাবলির লোককথা
তপন কুমার বৈরাগ্য

নতুনপাতা

শিখজাতিরা কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। অন্যায়ের কাছে
তাঁরা কোনোদিন মাথা নত করেন নি।গুরু হরগোবিন্দ সিংহ
ছিলেন যুদ্ধবিদ্যায় নিপুণ ও একজন তুখোড় শিকারী।
তাঁর বয়েস যখন এগারো বছর  তখন তাঁর বাবা
অর্জন সিংহকে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর অন্যায়ভাবে নিহত
করেন। এই ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তাঁর হদয়টা ঝলসে
ওঠে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যতোদিন বাঁচবেন ততোদিন
মুগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত
তিনি তা করে গেছেন।কখনো মুগলদের কাছে বশ্যতা
স্বীকার করেন নি।এগারো বছর বয়েসে তিনি ষষ্ঠ গুরু হিসাবে
শপথ নেন।তারিখটা ছিল ৩০শে মে১৬০৬খ্রিস্টাব্দ।সেদিন তিনি
দুই হাতে দুটি অস্ত্র তুলে নেন।একটা আধ্যাত্মিক  কর্তৃত্বের
এবং অন্যটি ছিলো পার্থিব কর্তৃত্বের।প্রথমটিকে বলা হতো
পিরি এবং অপরটিকে বলা হতো মিরি।
জীবনে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনোদিন দুটি তরোয়াল
ছিলো না।একমাত্র গুরু হরগোবিন্দের কাছে দুটি
তরোয়াল ছিলো।যুদ্ধ যাবার আগে তিনি  পিরিকে ভক্তিভরে
মাথায় থেকাতেন। মাথায় ঠেকানোর পর তিনি যেন 
এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা পেতেন।
সম্রাট জাহাঙ্গীর ৫২ জন হিন্দু রাজাকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখেন।গুরু হরগোবিন্দ জাহাঙ্গীরের কাছে বার্তা পাঠান এদের
মুক্তি দেবার জন্য।কিন্তু জাহাঙ্গীর তাঁদের মুক্তি দেন নি।
উল্টে হরগোবিন্দের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর যুদ্ধ ঘোষণা করেন।পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ। তিনি তাঁর সুদক্ষ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে রোহিল্লাতে এলেন।মুগলদের সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়। সালটা ছিল ১৬১৯। মাসটা ছিলো কার্তিক মাস।
এই যুদ্ধে সম্রাট জাহাঙ্গীর পরাজিত হন। জাহাঙ্গীর 
গুরু হরগোবিন্দের দাবি মতো গোয়ালিয়র দুর্গ থেকে
বাহান্ন জন হিন্দু রাজাকে মুক্তি দেন। এরপর তিনি অমৃতসরে প্রত্যাবর্তন করেন। দিনটা ছিলো  কার্তিকমাসের
অমাবস্যা।শিখগণ এইদিন ঘরে ঘরে মাটির প্রদীপ জ্বেলে
দেওয়ালি উৎসব পালন করেন।শিখ জাতি এই দেওয়ালি পালনের
উৎসবের নাম দেন'বন্দী ছোড় দিবস'।এই দিন তাঁরা প্রদীপ
জ্বেলে ঘরে ঘরে আনন্দ পালন করেন। সেই থেকে  শিখেরা দেওয়ালি উৎসব পালন করে আসছে।রামচন্দ্র রাবণ বধ করে
কার্তিকী অমবস্যায় নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন।সেদিন
অযোধ্যার ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বেলে দীপাবলি উৎসব পালন
শুরু হয়।বুদ্ধদেব এইদিন গৃহত্যাগ করেছিলেন।তাঁর অনুগামীরা কপিলাবস্তুতে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বেলে এই উৎসবের সূচনা
করেন।মহাবীরের নির্বাণ লাভের দিন কার্তিকীয় অমাবস্যার 
আগেরদিন চতুর্থ তিথিতে।সেদিন থেকে জৈনরা ঘরে ঘরে
প্রদীপ জ্বালতে শুরু করেন।
ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে দীপাবলি বিভিন্ন নামে পালিত হয়।
এদিন জাতিধর্ম নির্বিশেষে আমরা ঘরে ঘরে দীপ জ্বালাই।আনন্দ করি।হাতে হাত মিলাই। দীপাবলি দেওয়ালি ,দীপান্বিতা, দীপালিকা,  যক্ষরাত্রি ,সুখরাত্রি ,সুখসুপ্তিকা বিভিন্ন নামে পরিচিত।
কার্তিকী অমাবস্যায় দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়।
হিন্দুধর্ম ছাড়াও বৌদ্ধ,শিখ, জৈনরাও এই দীপাবলি উৎসব
পালন করে।এদিন অন্তরের আলো জ্বেলে আমাদের হৃদয়কে
আমরা আলোকিত করার শপথ নিই।

Comments :0

Login to leave a comment