নতুনপাতা
জানা অজানা
নোবেলের গল্প
তপন কুমার বৈরাগ্য
যে ছেলেটা সারাজীবন বিদ্যালয়ে যায় নি,বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা
কোনোদিন শোনে নি, যে ছেলেটা মাঠে কোনোদিন খেলে নি
সেই ছেলেটার নামে আজ বিশ্বের সেরা পুরস্কার নোবেল।
এই পুরস্কার বর্তমানে দেওয়া হয় পদার্থ বিজ্ঞানে,রসায়নে,সাহিত্যে,
চিকিৎসায়, অর্থনীতিতে ও বিশ্বশান্তিতে। প্রথম পাঁচটি দেওয়া হয়
সুইডেনে কিন্তু বিশ্বশান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়েতে।
পুরস্কার প্রাপকদের পুরস্কার তুলে দেন দুটি দেশের নোবেল কমিটি।
এই পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁর মৃত্যু দিবস ১০ই ডিসেম্বর তারিখে।
স্যার আলফ্রেড বেনহার্ড নোবেল এই পুরস্কারের জন্য উইল করার
একমাস তেরো দিন পর মারা যান। সময়টা ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের
১০ই ডিসেম্বর। তাঁর পরলোক গমনের পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ
থেকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।
আলফ্রেডের নোবেলের পিতা ইমানোয়েল প্রথাগত শিক্ষা একদম
পছন্দ করতেন না।বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে নোবেলকে কিছুদিন
পড়িয়েছিলেন।এই সময় থেকে তাঁর বই পড়ার অভ্যাস শুরু হয়।
শেষ জীবন পর্যন্ত তিনি এই বই পড়ার অভ্যাস বজায় রেখেছিলেন।
এই বই পড়তে পড়তে তিনি লিখে ফেলেন কবিতা,গল্প,নাটক,
উপন্যাস।কিশোর ছেলেটার এই বিষয়গুলো বাবা কিন্তু পছন্দ করতেন
না।তাই তিনি বাবার অবর্তমানে মনের আকাশ সাহিত্যে রেঙে তুলতেন।
বাবা ইমানুয়েলের ছিলো টর্পোডো ও মাইন তৈরীর কারখানা।
ছেলেকে সেখানেই লাগিয়ে দিলেন। এখান থেকেই তাঁর রসায়ন
ও কারিগরী বিদ্যার প্রতি ঝোঁক বেড়ে গেল। সাহিত্যের প্রতি আস্তে আস্তে
তাঁর ঝোঁক কমে গেল কিন্তু বই পড়ার নেশা তিনি ত্যাগ করতে পারলেন
না। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবিষ্কার করলেন ডিনামাইট। তারপরে একে
একে আরও উন্নত ডিনামাইট যেমন অ্যামোনিয়াম ডিনামাইট , ব্যালিস্টাইন
ডিনামাইট আবিষ্কার করলেন। আবিষ্কার করলেন ব্লাস্টিং জিলাটিন।
এই সময় তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেন। কিন্তু এই মহান ও
মানবপ্রেমিক শান্তির দূত খুবই ব্যথা পেলেন যখন দেখলেন তাঁর
আবিষ্কৃত ডিনামাইট মানুষ মারার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।তিনি
চেয়েছিলেন তাঁর আবিষ্কৃত বস্তু ধ্বংসাত্মক কাজে নয় মানব কল্যাণে
ব্যবহার করা হবে। মানুষের এই হিংসাত্মক কার্যকলাপ দেখে তিনি
নিজের হাতে আর ডিনামাইট তৈরী করলেন না।তাঁর উপার্জিত অর্থ
পৃথিবীর সেরা স্মরণীয় কাজের জন্য উইল করে গেলেন। যা ছিল
৯০ লক্ষ ডলার মূল্যের অর্থ তহবিল।যেটা দেশের স্বদেশের সেন্ট্রাল
ব্যাঙ্কে জমা দেন। এর বিপুল পরিমাণ সুদের টাকায় পৃথিবীর
বিশ্বসেরাদের হাতে প্রতি বছর ১০ই ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কার তুলে
দেওয়া হয়। আর তাঁর মৃত্যু দিবসে তাঁকে অন্তর থেকে স্মরণ ও বরণ
করা হয়।
Comments :0