TMC BJP

বিজেপি-তৃণমূলের উত্তরবঙ্গে হাওয়া গরম করার রাজনীতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

TMC BJP

উত্তরবঙ্গে আবার নতুন করে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে যখনই কোনো নির্বাচন আসন্ন হয় তখনই পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা সোচ্চার হয়। অতীতে আমরা দেখেছি পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবির আন্দোলন যা হিংসাত্মক রূপ নিয়েছিল। আবার কেএলও, গ্রেটার কোচবিহার ইত্যাদি পার্টির বা গোষ্ঠীর নামে পৃথক উত্তরবঙ্গ বা পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে হিংসাত্মক ও সশস্ত্র আন্দোলনও আমরা দেখেছি। সেই সময়ে এই সমস্ত আন্দোলনকারী বা দাবিদারদের দ্বারা সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল সিপিআই(এম) বা বামপন্থী নেতা-কর্মীরা। আবার সেই সময় পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়েছিল বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস দু’দলই। বিজেপি পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে পর পর তিনবার জয়ী হয়ে‍‌ছিল দার্জিলিঙ লোকসভার আসনে। পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করে উত্তরবঙ্গের বিগত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনে অনেকগুলি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। একই কৌশল অবলম্বন করে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসও অনেক সুবিধা অর্জন করেছে। বিমল গুরুঙ বা অনন্ত মহারাজদের মতো পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা কখনও বিজেপি-কে মদত দিয়েছেন কখনও বা তৃণমূল, কংগ্রেসকে সমর্থন করেছেন। আজও এই সমস্ত নেতারা রয়েছেন দুটি পার্টিতেই।
বিজেপি’র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার দার্জিলিঙ বা উত্তরবঙ্গ নিয়ে নানা খেলা খেলে চলেছে, স্রেফ নির্বাচনী রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। বিজেপি’র নেতারা পাহাড়ে গিয়ে, নির্বাচন এলেই গোর্খাল্যান্ড পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করেন, আবার সমতলে এসেই উলটো কথা বলেন। পাহাড়ের মানুষের আবেগ নিয়ে তারা রাজনীতি করেন। গোর্খাল্যান্ড রাজ্য তো দূরের কথা, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আজও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যূনতম উন্নয়নের কাজেও কোনও বিশেষ কেন্দ্রীয় সহযোগিতাও করেনি। অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তারা অনেকগুলি পাহাড়ি, জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেয়নি। এরা হিন্দুত্বের স্লোগান তুলে পাহাড়ের স্থানীয় বা আঞ্চলিক পার্টিগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস দলও নানাভাবে পাহাড়ের মানুষের আবেগের অপব্যবহার করছে। আজ পাহাড়ের অনেকগুলি আঞ্চলিক পার্টির সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে জিটিএর বোর্ড সভায় সরকারিভাবে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড গঠনের দাবির পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একই সভায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের পার্ষদরাও উপস্থিত থেকে এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে এক সরকারি বিজয়া সম্মিলনীতে যারা উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্য চান এমন সমস্ত নেতৃত্বই কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উপস্থিত ছিলেন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মাঝেই রাজ্য ভাগের বিরোধিতা করে প্রস্তাব দেন। অনন্ত মহারাজ তো শিলিগুড়ির বিজয়া সম্মিলনীতে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে বসেছেন। আবার তিনিই মঞ্চ থেকে নেমেই মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই পৃথক রাজ্য কোচবিহারের দাবি জানিয়ে গেছেন। এরকমই সব চালাকির রাজনীতি চলেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে বিভিন্ন ভাবে।
অথচ উত্তরবঙ্গ তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কত সমস্যা আছে! উত্তরবঙ্গের কতগুলি বিশেষ সমস্যা আছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বহু জাতি, উপজাতি, জনজাতি, সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। এই অঞ্চলে রয়েছে অনেক ভাষা ও উপ ভাষার মানুষ। দুটি জেলাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, দুটি জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ একটি বিশেষ ভাষা গোষ্ঠীর, একটি জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তফসিলি জাতিভুক্ত। দুটি জেলার ভালো অং‍‌শের মানুষ তফসিলি উপজাতির। তাই উত্তরবঙ্গের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে বেশ কিছু বিভিন্নতা আছে। উত্তরবঙ্গের অনেক জেলাতে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের সংখ্যা রাজ্যের অনেক জেলা থেকে বেশি। উত্তবঙ্গের কয়েকটি অঞ্চলে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত বাংলার সাথে নেপালি ও উর্দু। সম্প্রতি রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে রাজবংশী ও কুরক ভাষাকে স্থানীয় সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আজও তা আন্তরিকতার সাথে কার্যকরি হয়নি। এছাড়াও উত্তরবঙ্গে রয়েছে শাদ্রী, সেচ, লেপচা, রাভা পলিয়া ইত্যাদি উপ ভাষা বা ভাষী মানুষ। এগুলিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার দাবিও ন্যায়সঙ্গত দাবি। নেপালি ভাষাকে অষ্টম তফসিলিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সব ভাষাভাষীর মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে। রাজবংশী ভাষাকেও অষ্টম তফসিলিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির মধ্যে কোনও অন্যায় নেই আমার চোখে। উত্তববঙ্গের চা-বাগানের আদিবাসীদের সংস্কৃতি, পাহাড়ের লেপচা, ভুটিয়া, ভাওয়াইয়া, রাভা-মেচ সংস্কৃতিগুলি যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায়, তার দাবিও ন্যায়সঙ্গত। আগেই লিখেছি অনেকগুলি পাহাড়ি জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতির দাবির কথা। তরাই এলাকায় রয়েছে বহু ধামাল জনগোষ্ঠীর মানুষ। কয়েক শত বছর ধরে তারা এই অঞ্চলে বসবাস করছে। তাদের ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। তারা চায় তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি। অবশ্যই এই দাবিও ন্যায়সঙ্গত। উত্তরবঙ্গে রয়েছে বহু হিন্দিভাষী মানুষ। তারা চায় আরও হিন্দি মাধ্যম উচ্চ বিদ্যালয়।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বহু ভূমিহীন কৃষকরা কৃষি জমি বা বাস্তু জমি পেয়েছিল। আজও অনেক ক্ষেত্রে এই কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। যেমন কয়েক লক্ষ চা বাগান শ্রমিক বা অশ্রমিকরা আজও বাস্তু জমিহীন। তাদের বাস্তু জমির দাবি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি। একই ভাবে তাদের ন্যূনতম মজুরি নীতি ঘোষণার দাবিও ন্যায্য দাবি।
আজও কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে উত্তরবঙ্গের বহু বনবস্তির মানুষরা পায়নি বাস্তু জমির পাট্টা। উত্তরবঙ্গ অনেক পিছিয়ে শিল্পায়ন ও নগরায়নের দিক দিয়ে। চা বাগান ব্যতীত সংগঠিত ক্ষেত্রে অন্য কোনো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নেই। বহু অঞ্চলে আজও যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। কৃষির অলাভজনকতা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। কৃষি থেকে উদ্বৃত্ত শ্রমজীবী মানুষদের হচ্ছে না বিকল্প কর্মসংস্থান। শিক্ষা ও মেয়েদের কর্মসংস্থানের হারের দিক দিয়েও উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে। উত্তরবঙ্গে মানুষ যদি মর্যাদা চায়, সম্মান চায় তার মধ্যেকোনো অন্যায় নেই।
এই সব নিয়ে উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে যে আবেগ আছে, তাকে অস্বীকার করা উচিত নয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গের এই সমস্ত বিশেষ সমস্যাগুলির সমাধান বা নিরসন করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু তার জন্যে পৃথক রাজ্য গঠনের প্রয়োজন নেই। উত্তরবঙ্গে একটি এআইআইএমএস বা আইআইটি হওয়া উচিত। এই দাবি আদায়ের জন্যে পৃথকতাবাদী আন্দোলন করার দরকার নেই। এর জন্যে প্রয়োজন দুর্বার গণ-আন্দোলন। একথা সঠিক বর্তমানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গের এই সমস্ত বি‍‌শেষ সমস্যাগুলির নিরসনের কোনো আন্তরিকতা বা সদিচ্ছা নেই। তারা জানে শুধু মানুষের আবেগ নিগে সংকীর্ণ রাজনীতি। তারা জানে মানুষের কতগুলি মূল সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে দিতে পারলেই তাদের কেল্লা ফতে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তারা মানুষকে কাজ দিতে পারছে না, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করতে পারছে না। পারছে না বলেই তারা ধর্ম, অঞ্চল, সমাজ ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতিকে উৎসাহিত করছে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনীতি করছে। উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবির সাথে বিজেপি’র এই বিভেদ, বিভাজন সার্বিক ব্যর্থতার রাজনীতি যুক্ত। এটা ঠিক কোচবিহার, দেশের স্বাধীনতার আগে একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। তা যে নামেই হোক না কেন। ভারতে এই রকম করদ রাজ্যে বা‍‌ প্রিন্সলি স্টেটের সংখ্যা ছিল দে‍‌শের স্বাধীনতার প্রাক্কালে বা অব্যবহিত পরে ৫৫৬টি। দেশের স্বাধীনতার পরে এই সমস্ত রাজ্যগুলিকে মিশিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে। আর আর এবিসি ইত্যাদি ধরনের রাজ্য নেই। আজ আর আগের মতো রাজ্যগুলিকে প্রদেশ বলা হয় না। দু-একটি মাত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। কোচবিহারকেও একইভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল প‍‌শ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে। কোচবিহারকে যদি রাজ্য করতে হয় তাহলে আমাদের দে‍‌শের আরও ৫০০টি নতুন রাজ্য গঠন করতে হয়। তা কখনও সম্ভব নয়। পৃথক রাজ্য হলেই যদি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তাহলে আমাদের দেশের অনেকগুলি নতুন রাজ্যের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তা কিন্তু হয়নি। আসাম ভেঙে অনেকগুলি নতুন রাজ্য গঠিত হলেও এই সমস্ত রাজ্যের মানুষের সব সমস্যা সমাধান হয়নি।
ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে দার্জিলিঙ পাহাড় এক সময়ে ছিল সিকিম রাজ্যের সাথে, ডুয়ার্স বা কালিম্পঙ ছিল ভুটানের অধীনে। তাহলে কি এই সমস্ত অঞ্চলগুলিকে ফিরে যেতে হবে সিকিম বা ভুটানের সাথে?
১৯৫২ সালে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন হয়। বিহারের বেশ কিছু বাংলাভাষী অঞ্চল যুক্ত হয় প‍‌শ্চিমবঙ্গের সাথে। তারই ফলে সৃষ্টি হয় পুরুলিয়া জেলা, ইসলামপুর মহকুমা। দার্জিলিঙ জেলার সাথে যুক্ত হয় বিধান নগর ও চটের হাট অঞ্চল। তৎকালিন পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাঙলা বিহার একীকরণ করার। বাংলা ও বিহারের মানুষ তা মেনে নেয়নি।
কেউ কেউ বলে থাকেন উত্তরবঙ্গ বলে কিছু নেই। তৃণমূল কংগ্রেস দলের এক তরুণ নেতা সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে এসে হুমকির সুরে বলে গেছেন, এখন থেকে কেউ যেন উত্তরবঙ্গ বলে কিছু না বলেন! শুধু বলতে হবে প‍‌শ্চিমবঙ্গ। উত্তরবঙ্গ কথাটা আজকের নয়। দীর্ঘকালের উত্তরবঙ্গ ডিভিসন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ইত্যাদিকে কীভাবে অস্বীকার করা যাবে? 
এই তরুণ তুর্কী তৃণমূলি নেতার রাজনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝার অভাব আছে। সব কিছুর সরলিকরণ করা ঠিক নয়। উত্তরবঙ্গ বা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে কিছু বি‍‌শেষ বৈশিষ্ট্য আছে তাই নয় ভৌগোলিক দিক দিয়েও রয়েছে অনেকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চলটি ৩টি দে‍‌শের বিস্তীর্ণ সীমান্তে অবস্থিত। বাংলা তথা ভারতের কোনও অঞ্চলে ভৌগোলিক দিক দিয়ে এতো বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই। উত্তরবঙ্গের বহু অঞ্চল ভারত ভুক্তির পেছনে আছে অনেকগুলি আর্ন্তজাতিক চুক্তির ভূমিকা। এই অঞ্চলে বসবাস করে অনেকগুলি জাতি জনজাতি বা ভাষা উপভাষা সম্প্রদায়ের মানুষ এসব বৈ‍‌শিষ্টকে নিয়েই উত্তরবঙ্গ সবা‍‌‍ই মিলেই থাকবে উত্তরবঙ্গ।
ইদানিং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ উত্তরবঙ্গের কিছু বিজেপি নেতার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গকে একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের কথা ছড়িয়ে দিয়ে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক হাওয়া গরম করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম আবার এমনভাবে সংবাদ পরিবেশ করছে, যেন ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বলে নাকি ঘোষণা করতে চলেছে। এই রটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গের মানুষ অনন্ত মহারাজ, অমিত থাপা, বিমল গুরুঙরা নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
উগ্রপন্থী কামতাপুরি তথা কেএলও নেতা জীবন সিংহকে প্রকাশ্যে আনার এক প্রক্রিয়া শুরু করেছে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিজেপি নেতা। এসবের পেছনে রয়েছেন বা সব পরিকল্পনা করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অমিত শাহ বা কেন্দ্রীয় সরকার ভালভাবেই জানেন উত্তরবঙ্গ বা কোচবিহারকে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বলে ঘোষণা করাটা কঠিন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রস্তাব অনুমোদন না করিয়ে কখনও রাজ্য ভাগ করা যায় না। কেন্দ্র যদি এককভাবে পারত তা হলে বহুদিন আগেই দার্জিলিঙ নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠন করে দিত। কিন্তু তা পারেনি। যদিও ভোট এলেই বিজেপি পৃথক রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে বিজয়ী হবার চেষ্টা করে থাকে। যদিও পাহাড়ের মানুষ বিজেপি’র ধোঁকাবাজি ও চালাকির রাজনীতি এখন ধরে ফেলেছে। কোচবিহার বা উত্তরবঙ্গ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কথা প্রচারও এই অঞ্চলে বিজেপি’র চালাকির রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। 
উত্তরবঙ্গে বিজেপি’র হাওয়া গরমের রাজনীতির সাথে তৃণমূল কংগ্রেস দলের রাজনৈতিক স্বার্থের রাজনীতিই যুক্ত। যেমন বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেস বাঙালী অস্মিতার প্রচার তুলে ভোটের রাজনীতি করে সফল হয়েছিল। তেমনই বিজেপি যত রাজ্য ভাগের রাজনীতি করবে, ততই তৃণমূল কংগ্রেস পালটা বাঙালী অস্মিতার রাজনীতি করে লাভবান হওয়ার অঙ্ক কষছে। যেমন বিজেপি যত হিন্দুত্বের রাজনীতি করে তৃণমূল কংগ্রেস ততই বিপরীত ধর্মী রাজনীতি করে লাভবান হওয়ার অঙ্ক কষে থাকে।
দেশে বা রা‍‌জ্যে, তা উত্তরবঙ্গ হোক, হোক দক্ষিণবঙ্গ, এতে মানুষের এতো সমস্যা রয়েছে, এখন এই রাজ্য ভাগের চর্চা তুলে মানুষের মূল সমস্যা থেকে মোড় ঘু‍‌রিয়ে দেবার এক পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস, উভয় দলই।
এই মুহূর্তে  রাজ্যের মানুষ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের দাবিতে আন্দোলনের ময়দানে। এই আন্দোলনে উত্তরবঙ্গের মানুষও পিছিয়ে নেই। বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিবাদী মানুষের দুর্বার আন্দোলন ও ঐক্যবদ্ধ ভাঙতে পারবে না, তারা যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন।

Comments :0

Login to leave a comment