Editorial

ডাবল ইঞ্জিনের মাহাত্ম্য

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের ডাবল ইঞ্জিনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। এবার কর্ণাটকে বিনিয়োগ সম্মেলনে। দেশি ও বিদেশি কয়েক শত বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে তিনি কর্ণাটককে বিনিয়োগের অন্যতম সেরা ঠিকানা হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। সেই সূত্রেই ‍‌এসেছে ডাবল ইঞ্জিনের প্রসঙ্গ। মোদীর মতে কর্ণাটকে বিজেপি’র সরকার আছে বলেই বিনিয়োগের উজ্জ্বল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিক সম্মেলনে ডাবল ইঞ্জিনের প্রসঙ্গ সেই অর্থে প্রাসঙ্গিক না হলেও মোদী সচেতনভাবেই প্রসঙ্গটি তুলেছেন ভোটের কথা মাথায় রেখে। কয়েক মাস পরে আগামী বছরেই কর্ণাটকে ভোট হবার কথা। মোদী-শাহসহ বিজেপি নেতারাই ডাবল ইঞ্জিনের তত্ত্ব নিয়ে সদা মুখর। বিশেষ করে কোনো রাজ্যে ভোট এলেই ডাবল ইঞ্জিন নিয়ে তাদের মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। মোদীরা বলতে চান কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের অর্থাৎ তাদের দলের সরকার থাকলে নাকি উন্নয়নের গতি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে ২০১৪ সালের পরে যেখানে বিজেপি’র সরকার ছিল বা আছে সেখানে দারুণ উন্নতি হচ্ছে। আর যেখানে বিরোধী দলের সরকার আছে সেখানে উন্নয়ন হচ্ছে না। মোদীদের যদি সাহস থাকে তবে তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দেখাক যে বিরোধী শাসিত রাজ্যে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যে ঢেলে উন্নয়ন হচ্ছে। তেমন তথ্য মোদীরা কোনদিনই হাজির করতে পারবেন? উন্নয়নের কথা উঠলে বামপন্থী কেরালা বলে বলে গোল দেবে মোদীর গুজরাটকে। অর্থনীতিতে উন্নয়ন মানে কটা কারখানা, ঝাঁ চকচকে শহর, বড় শপিং মল বা জিডিপি’র পরিমাণ বা হার নয়। প্রকৃত উন্নয়ন তাকেই বলা হয় যেখানে মানবোন্নয়নের সূচক ওপরে থাকে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কাজ রুজি, বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন মিটছে কিনা। কটা আদানি-আম্বানি তৈরি করাকে আর যাই হোক উন্নয়ন বলা যায় না। কোন দল সরকারে বা কোন নেতা মন্ত্রী তার উপরে উন্নয়ন নির্ভর করে না। উন্নয়ন নির্ভর করে দল বা সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। ক্ষমতাসীন সরকার বা মন্ত্রীর কথায় বা ভাষণে উন্নয়ন হয় না। বিজেপি এবং তার নেতারা ক্ষমতার কাঙাল, উন্নয়নের কাঙাল নয়। তাই ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত ইত্যাদি ইস্যুতে উস্‌কানি দিয়ে মানুষকে ভাগ করে জিততে চায়। সর্বস্তরের বি‍‌শেষ করে গবির সাধারণের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন চায় না। চাইলে সম্পদের বণ্টনে বে‍‌শি নজর দিত। এমন নীতি নিত না যাতে ক্রমাগত সম্পদ ও আয় বৈষম্য বাড়ে, গুটিকতক বিত্তবানের ঘরে দে‍‌শের ভাগ সম্পদ জড়ো হয়। বিজেপি উন্নয়ন চায় না বলেই দেশে বেকারির হাহাকার। খাদ্যের হাহাকার। গরিব মানুষের রুজির সুযোগ নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সমস্ত ধরনের প্রাথমিক ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের খরচ হুহু করে বাড়ছে। তার থেকে দুহাতে মুনাফা লুটছে বিত্তবানরা। সাধারণ মানুষের সঙ্কট যত ঘনীভূত হয় ততই বিত্তবানের সম্পদ বাড়ে। মোদী জমানায় এটাই নির্মম সত্য। এটাই আরএসএস, বিজেপি তথা মোদীদের আসল লক্ষ্য। একাজ আরও সহজে করার জন্যই তাদের ডাবল ইঞ্জিনের দরকার। রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী সরকার থাকলে তাদের লক্ষ্যপূরণে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া তাদের রাজ্য সরকারে দুর্নীতি ও অপদার্থ আড়াল করা সহজ নয়। রাজ্যের দুর্নীতি-অনিয়ম কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে চাপা দেওয়া যায়। দুই সরকারের যুগল মিলনে চুটিয়ে দুর্নীতি করা যায়। কেউ কারো বাধা হয় না। অতীতে কংগ্রেস আমলে ডাবল ইঞ্জিন ছিল। কিন্তু পরে মানুষ সব বদলে দিয়েছেন। এখন বিজেপি মরীয়া হয়ে উঠেছে ডাবল ইঞ্জিনের জন্য। তাতে ডাবল ডাবল দুর্নীতি, স্বজনপোষণ করা যাবে। বন্ধু শিল্পপতিদের হাতে দে‍‌শের জনগণের সম্পদ তুলে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ বিত্তবান-শিল্পপতিদের জন্যে আরও বে‍‌শি বেশি দালালি করা যাবে।

Comments :0

Login to leave a comment