মা নিয়েছিলেন ঋণের টাকা, শোধও করছিলেন প্রতি সপ্তাহে। কর্মসূত্রে বাইরে থাকায় মাত্র একটা সপ্তাহের কিস্তির টাকা পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থার লোকজন মায়ের অনুপস্থিতিতে এসে অপমান করে যায় মেয়েকে। সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন ওই তরুণী। সোমবার মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে নদীয়া জেলার তাহেরপুরের বীরনগরে। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। 
পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, এক বেসরকারি সংস্থার থেকে ওই তরুণীর মা ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। নিয়ম মেনে তিনি প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা পরিশোধ করছিলেন। আয়া সেন্টারে কাজ করেন তিনি। কাজের জন্য এলাকার বাইরে থাকায় এক সপ্তাহ ঋণের কিস্তির টাকা সময় মতো দিতে পারেননি। এর ফলে ওই ঋণ সংস্থার কর্মীরা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁর মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেন অভিযোগ। সেই সময় তরুণী একাই বাড়িতে ছিলেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। 
পরে ওই তরুণীর ভাই বাড়িতে এসে ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় থানায়। তরুণীকে উদ্ধার করে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনার পর আত্মঘাতী তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাহেরপুর থানায় ওই বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত। 
কাঁদতে কাঁদতে মৃতার মা এদিন বলেন, প্রতি রবিবার লোনের কিস্তি দিতে হয়। নিয়মিত তা দিচ্ছিলামও আমরা। আমি বাইরে একটি আয়া সেন্টারে কাজ করার কারণেই নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তির টাকা দিতে পারেনি। নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর কিস্তির টাকা দিলে ৫০ টাকা বেশি দিতে হয়। পরের দিন বেশি টাকা দিয়েই কিস্তি দেবো আমরা-এটাই ভেবেছিলাম। আমরা তো প্রতি সপ্তাহেই শোধ করছি। কিন্তু ওই ঋণ সংস্থার কর্মীরা মেয়েকে রবিবার রাতে এসে অকথ্য ভাষায় যা-তা করে বলে যায়। আবার পরের দিন সকালে এসেও অকথ্য ভাষায় ধমকি দিয়ে যায়। 
তাঁর বক্তব্য, আমি তো ঋণ নিয়েছি, তাহলে ওরা আমাকে বলুক যা বলার, মেয়েকে কেন বলবে। তাও পরপর দু’দিন ধরে নানা ভয় দেখিয়ে গেছে। সেসব সহ্য করতে না পেরে অপমানে ও ভয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। ঋণের টাকায় মেয়ে একটা সেলাই মেশিন কিনেছিল। বাড়িতে একটা শৌচাগার তৈরি করা হয়েছিল। সেসবের জন্য ঋণ নিয়েছিলাম। সমস্ত শেষ হয়ে গেল। কি দোষ করেছিল মেয়েটা। আমরা এর বিচার চাই।