Godhra verdict

দাঙ্গাবাজদের উৎসাহ দেবে এই রায়, বলছেন আদিব-ইমতিয়াজরা

জাতীয়

ইমতিয়াজের চোখের সামনে তিন জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল বাবু বজরঙ্গী, মায়া কোদনানির নেতৃত্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। পরপর বাড়িতে লুঠপাট চালায় তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ বিজেপি’র প্রাক্তন মন্ত্রী সহ অভিযুক্ত জীবিত ৬৭ জনকেই বৃহস্পতিবার বেকসুর খালাস করে দেওয়ার পরের দিন শরিফ মালেক, ইমতিয়াজ কুরেশিরা বলছেন, ‘‘বুঝতে পারছি, বিচারব্যবস্থা ঠিক কতটা চাপের মধ্যে আছে। এই রায় দাঙ্গাবাজদের আরও উৎসাহ দেবে।’’
আমেদাবাদের নারোদা গামে ২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী গণহত্যা পর্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১১ জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল। ভয়াবহ সেই স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে রয়েছেন স্থানীয়রা। পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো ঝুলে, আগাছায় ভরে গিয়েছে। সেই বাড়িগুলো এখনও প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয় সেদিনের বীভৎসতা। ‘‘আইনের রক্ষকরাই যদি আইনের হত্যাকারী হয়ে ওঠেন, তাহলে তো দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবেই,’’ বলছিলেন আদিব পাঠান। সেদিনের লুঠপাট থেকে বাদ যায়নি তাঁর বাড়িও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ আছে তাঁদের কাছে। বললেন, সিটের কাছেও সব প্রমাণ আছে। কিন্তু আদালতে কোনও কিছুই গুরুত্ব পেল না। ওই মহল্লারই শরিফ মালেক বলেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশেই দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন এক মহিলা। দেখেছি কীভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ওদের।’’ দাঙ্গার আগে যেখানে প্রায় ১১০টি পরিবার থাকত, এখন সেখানে মেরে কেটে ১০-১৫ পরিবারের বাস। মালেকের কথায়, ‘‘যে রায় দেওয়া হলো, এতে তো দাঙ্গাবাজরা আর কখনো আইনের ভয়ই পাবে না। বিচারব্যবস্থা যে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিশেষ করে গুজরাটে বিচারব্যবস্থাকে রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদি কোনও চাপ না থাকত, পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা হতো, তাহলে কমপক্ষে ২৫-৩০ জন অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতো।’’ 
ইমতিয়াজ এখন নারোদা গামে মূদ্রণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিষাদ ভরা গলায় বললেন, ‘‘বহু পরিবারই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। গুটিকতক পরিবার থাকে। এক দম্পতি এবং তাদের মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। আরেক মহিলার পরিবারের ছ’জনকে হত্যা করেছিল ওরা। ওই মহিলা পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে চেয়েছিলেন। তাঁকে কুপিয়ে খুন করেছে আমার চোখের সামনে। বাঁচাতে পারিনি। সাক্ষী হিসাবে আদালতে দাঁড়িয়ে আমি ১৭জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছিলাম। সুপ্রিম কোর্টই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করেছিল। ফলে আজ একথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, আইন আইনের মাধ্যমেই মিথ্যা প্রমাণিত হলো।’’ 
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের আগাম মুক্তির মতোই নারোদা গাম গণহত্যার অভিযুক্তদের ছাড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা খালাস হতেই স্লোগান উঠেছিল ‘জয় শ্রী রাম’। কংগ্রেস এদিন অভিযোগ করেছে, বিচারপ্রক্রিয়ার গলদেই অভিযুক্তরা ছাড় পেয়ে গেল। যে পরিবারগুলি এই জঘন্য অপরাধের শিকার, আমরা তাদের পাশে আছি।’’ রাজ্যসভার সাংসদ প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ‘‘১২ বছরের এক কিশোরী সহ দেশের ১১ জন নাগরিককে খুন করার ২১ বছর পর ৬৭ জন অভিযুক্তকে খালাস করে দেওয়া হলো। আমাদের কী আইনের ভূমিকা নিয়ে উৎসব করা উচিত নাকি আইনের মৃত্যুতে হতাশ হওয়া উচিত?’’ এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারও একইভাবে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘এই রায় আইনের হত্যা, সংবিধানের খুন।’’

Comments :0

Login to leave a comment