Mamata Banerjee

কোষাগারে টান, বাইপাস লাগোয়া সরকারি জমি বেচতে তৎপর নবান্ন

রাজ্য

 মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইএম বাইপাস লাগোয়া বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি বিক্রির উপর নজর দিয়েছে নবান্ন। 
কলকাতা কর্পোরেশন এলাকার ১০৭, ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সরকারি জমিকে কীভাবে দখলমুক্ত করা যায়, তার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, বাইপাস লাগোয়া এই তিন ওয়ার্ডে সরকারি খাস জমির বর্তমান অবস্থা জানার জন্য ভূমি সংস্কার দপ্তরকে সমীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, কতটা জমি সরকারের হাতে আছে, খাস জমির কত পরিমাণ এখনও ফাঁকা পড়ে আছে, কতটা জমি দখল হয়ে আছে— তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে।
বাইপাস লাগোয়া জমি বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে টাকা আনাই এখন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের প্রধান লক্ষ্য। ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মধ্যে এই তল্লাট জুড়ে ১৬০০ একরের বেশি সরকারি খাস জমি আছে। দখল হয়ে যাওয়া জমির পাশাপাশি এখনও বিপুল জমি পড়ে আছে। তার মধ্যে পিয়ারলেস হাসপাতাল সংলগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকগড়িয়া মৌজাতে প্রায় ৭০ একরের উপর জমি আছে। তারই সঙ্গে কালিকাপুর মৌজার ৩৫৬ নম্বর দাগে ৯০ একরের বেশি জমি আছে। ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সামান্য কিছু দখল ছাড়া এই দুই জমি বিক্রি করলে সরকারি কোষাগারে বিপুল টাকা চলে আসতে পারে। দখলমুক্ত জমি বিক্রি করার প্রধান লক্ষ্য নিয়েই ভূমি সংস্কার দপ্তরকে নামানো হয়েছে।’’ 
ফাঁকা জমির বাইরেও ১০৭ থেকে ১০৯, এই তিন ওয়ার্ডেই জমির প্রায় পুরোটার মালিক রাজ্যের ভূমি সংস্কার দপ্তর। যে জমি ফাঁকা পড়ে আছে,তাকে বিক্রি করে কোষাগারের সঙ্কট মেটানো সরকারের প্রথম লক্ষ্য। কিন্তু তার বাইরে গোটা তল্লাটে সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফ্ল্যাট। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা একের পর এক আবাসন প্রকল্পে বহু ধনী পরিবারের বাস। ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দিনে ওই সব আবাসনের মালিকদের সরকার ডেকে পাঠিয়ে জমির সেটেলমেন্ট করাতে তৎপর হবে। তার থেকেও বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে বলে সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে। 
কিন্তু সরকারি জমিতে প্রোমোটিং হওয়ার পরও বহু গরিব মানুষ খাস জমিতে বসবাস করেন। বেশ কিছু এলাকায় এখনও টিকে আছে প্রান্তিক মানুষের কলোনি। সরকার যদি জমি বিক্রি করতে নামে, তাহলে উচ্ছেদের মুখে পড়তে হবে গরিব মানুষকেও। এরাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনের হাত ধরেই শহরের বুকে বিপুল জমি খাস হয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার আসার পর ধাপে ধাপে ভূমি সংস্কার আইন সংশোধন করে বাইপাস লাগোয়া এলাকায় খাস জমির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জমিদারি অধিগ্রহণ আইন বলবৎ হওয়ার আগে বাইপাস লাগোয়া চিংড়িহাটা থেকে গড়িয়া রেল স্টেশন পর্যন্ত এলাকা জুড়ে চার জন জমিদারের অধীনে ছিল সব জমি। সেই জমি অধিগ্রহণ করার পর ভূমি সংস্কার আইনে একের পর এক সংশোধনী এনে খাস জমির তালিকায় যুক্ত হয়েছিল আরও বিপুল জমি।’’ সরকারি সেই জমি এখন বিক্রি করতে উদ্যোগ নিয়েছে নবান্ন। 
বাইপাস লাগোয়া এলাকায় জমি বিক্রির উপর সরকারের নজর একদিনে পড়েনি। কিংবা আকস্মিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী বাইপাস লাগোয়া তিন ওয়ার্ডের জমির হাল হকিকত জানার জন্য রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দেননি। গত তিন বছর আগে কেএমডিএ-কে দিয়ে বাইপাসের লাগোয়া সমস্ত জমির জরিপের কাজ সম্পন্ন করেছিল রাজ্য সরকার। স্যাটেলাইটকে ব্যবহার করে ওই তল্লাটের সমস্ত প্লটের ম্যাপিং করে প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে কম্পিউটার নম্বর দিয়ে ধাতব অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 
পরের ধাপে গত ছয় মাস আগে জরিপ করা প্রতিটি প্লটের আবাসিকদের কাছে পৌঁছেছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। আবাসিকদের কাছ থেকে কত দিন ধরে বাস করছেন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে ভূমি সংস্কার দপ্তর ও কলকাতা কর্পোরেশনের যৌথ টিম। ফলে এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সমীক্ষায় নামা নতুন কিছু ঘটনা নয় বলেই জানাচ্ছেন ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরাই। 
আসলে জমি বিক্রি করে কোষাগারে টাকা আনাই সরকারের এখন লক্ষ্য। দু’দিন আগেই রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করে তৃণমূল কংগ্রেসকে জমি দখলমুক্ত করার কাজে শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করার পরিকল্পনা। কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস লাগোয়া এলাকা ও বেহালা সহ শহরের বহু এলাকায় বিপুল জমি একবার উদ্ধার হলে তা বিক্রি করলে সরকারি কোষাগারে বিপুল টাকা আসতে পারে বুঝেই এখন ঝাঁপাতে চাইছে রাজ্য সরকার।   
সরকারের হাতে যে পরিমাণ জমি আছে, তার অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকায়। তাই চটজলদি টাকা আদায় করার জন্য নবান্নের নজর এখন কলকাতার বাইপাস লাগোয়া বিপুল সরকারি জমির উপরেই।  

 

Comments :0

Login to leave a comment