ISL 2022-23 semifinal

বিশালের বিশস্ত হাতে ফাইনালে মোহনবাগান

খেলা

ISL 2022-23 semifinal


এটিকে মোহনবাগান — ০ হায়দরাবাদ— ০ 
টাইব্রেকার— (এটিকে মোহনবাগান- দিমিত্র গোল, গালেগো গোল, মনবীর গোল, হামিল মিস, প্রীতম গোল)
(হায়দরাবাদ- ভিক্টর গোল, সিভেরিও মিস, ওগবেচে মিস, রোহিত দানু গোল, রেগান সিং গোল) 

সোমবার রাতের যুবভারতী। ফ্লাডলাইটের আলোয় ভেসে যাওয়া সবুজ গালিচার মতো মাঠ। তাতে ভাসছে সবুজ মেরুন নৌকা। এবার আর সেমিফাইনালে ডুবল না তরী। সেমিফাইনাল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসিকে টাইব্রেকারে উড়িয়ে দিয়ে আইএসএলে ফাইনালে উঠল এটিকে মোহনবাগান। বিশাল কেইথের দু’টি সেভের পর ও অধিনায়কের প্রীতম কোটালের বুদ্ধিদীপ্ত শট জালে জড়াতেই ফুটবলাররা  উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। গ্যালারি রেঙে উঠে আলোর রোশনাইয়ে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত মোহনবাগান সমর্থকরা বাধভাঙা সেলিব্রেশন মেতে উঠে। 
ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসিকে হারিয়ে ফাইনালে যাবে মোহনবাগান। সেই আশা নিয়ে সপ্তাহের প্রথম দিন প্রায় ৫৩ হাজার সমর্থক ভিড় করেছিল যুবভারতীতে। স্টেডিয়ামের ঢোকার সময়, মেরিনার্সদের উম্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও ম্যাচ শেষ না হওয়া অবধি আশঙ্কার দোলাচলে ভুগছিল তাঁরা। দল জিতবে তো? কারণ, মনবীরদের একের পর এক চেষ্টা চরিত্র ব্যর্থ হওয়ায়, স্নায়ুর চাপ বেড়ে গিয়েছিল তাঁদেরও। টাইব্রেকারে পৌঁছালে গোলের নিচে ছিলেন চলতি মরসুমে আইএসএলে ১২ ক্লিনশিট রাখা বিশাল। বাগান সমর্থকদের ওই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ভরসার পাত্র। জেতাতে তিনিই পারবেন! বিশাল যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গোটা প্রতিযোগিতা জুড়ে খেলেছেন। এক, দু’টি শট বাঁচাতে না পারলে সেটি অঘটন হিসেবে ধরা নেওয়া হত! দিনের শেষ নিরাশ করলেন না তিনি। সিভিয়েরো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়ে দেন। পরেরবার চাপে পড়েই মিস করেন বার্থেলোমিউ ওগবেচে। তখনই সবুজ মেরুনের জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্ডোকে যুবভারতী কখনও খালি হাতে ফেরায় না। বছর দেড়েক আগে, ডুরান্ড জিতেছিলেন এই মাঠেই। এবার এটিকে মোহনবাগানের কোচের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ফাইনালে উঠলেন। নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে। আগামী ১৮ মার্চ গোয়ায় আইএসএল ফাইনালে এটিকে মোহনবাগান মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু এফসির। 
এদিন, দুটি পরিবর্তন করে দল নামান কোচ জুয়ান ফেরান্ডো। মিডফিল্ডে পুইতিয়ার জায়গায় গ্লেন মার্টিন্স। লিস্টনের পরিবর্তে কিয়ান নাসিরি। সেমিফাইনালের মত বড় ম্যাচে প্রথম থেকে কিয়ানকে খেলানোর সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। ম্যাচে যদিও তিনি আহামরি কিছু প্রভাব ফেলতে পারিনি। তাই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তাঁকে তুলে লিস্টনকে নামান। তবে মার্টিন্স আসায় বল ধরে খেলার, লোড নিয়ে খেলার লোক বেড়েছে। 
এদিন শুরু থেকে সমর্থকদের গর্জনে তেতে গিয়ে আগ্রাসী ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছিল এটিকে মোহনবাগান। তবুও প্রথমার্ধে গোলমুখ খুলতে পারেনি। ২২ মিনিটে মনবীরের বা পায়ের শট বারে না লাগলে এগিয়ে যেত পারত সবুজ মেরুন। হাফ চান্স কিছু মিস করেছেন পেত্রাটোসরা। তাছাড়া হায়দরাবাদ রক্ষণকে চাপে রাখতে পেরেছে এমনও নয়। দু'প্রান্তকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণ তৈরি করে মোহনবাগান। এদিন সেটা পারেনি। ফাঁকা জায়গা দেয়নি। অন্যদিকে, বার্থেলোমিউ ওগবেচে শুরু থেকে খেলায় আলাদা কোনও সুবিধা হয়নি হায়দরাবাদের। তিনি বল ধরলেই তাঁকে ঘিরে ধরছিল প্রীতমরা। আটকে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগানো উচিত ছিল কিয়েনিসি, ইয়াসিরদের। মহম্মদ ইয়াসিরদের শটে বিপদ তৈরি হলেও গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম দশ মিনিটের পর হায়দরাবাদ নিজেদের গুটিয়ে নেয়। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ম্যাচটা যে কোনও উপায়ে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু তাঁদের রক্ষন যথেষ্ট শক্তিশালী। মোহনবাগানের আক্রমণের তীব্রতাও খুব বেশি না থাকায়, তাঁদের পরিকল্পনায় শেষ অবধি সফল হয়। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে গোলকিপার গুরুমিত সিং একটি দুর্ধর্ষ শট বাঁচান। বুমোসের ভলি শট। ৮২ মিনিটে দিমিত্রির ফ্রিকিক থেকে হ্যান্ডশেক দূরত্ব থেকে গোল মিস করেন ডিফেন্ডার স্লাভকো। গোটা ম্যাচে হায়দরাবাদের গোল লক্ষ্য করে শট ছিল মাত্র একটি। নির্ধারিত সময়ে কোনও দল গোল করতে না পারায় ম্যাচ যায় অতিরিক্ত সময়ে। ওই আধঘন্টাতেও স্কোরশিটে কোনও বদল আসেনি। দু’লেগ মিলিয়ে ২১০ মিনিট খেলার পরও গোলশূণ্য। তবে টাইব্রেকারে ৪-৩ হায়দরাবাদকে ছিটকে দিল এটিকে মোহনবাগান। 
মোহনবাগান: বিশাল, আশিস, প্রীতম, স্লাভকো, শুভাশিস, ম্যাকহিউ (হামিল), গ্লেন(হামতে), মনবীর, বুমোস( গালেগো) কিয়ান(কোলাসো), পেত্রাতোস

Comments :0

Login to leave a comment