DGP Editorial Ganashakti

জিডিপি’র মায়াজাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

DGP Editorial Ganashakti

একই দিনে প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের দুটি পরিসংখ্যান। একটি মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত, অন্যটি শিল্পোৎপাদন সংক্রান্ত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী নভেম্বর মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটাই নেমে হয়েছে ৫.৮৮ শতাংশ, যা আগের মাসে (অক্টোবর) ছিল ৬.৭৭ শতাংশ। 

 

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূল্যবৃদ্ধির সহনশীল সীমারেখা অনুযায়ী খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার থাকার কথা ২ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। এই সীমার বাইরে মূল্যবৃদ্ধির হার থাকলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করে সুদের হার বাড়িয়ে কমিয়ে। গত ১১ মাস ধরে টানা খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে ছিল। এক সময় তা দুই অঙ্ক ছুঁয়েছিল।

 

 এমন মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হবার পাশাপাশি বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যায়। পাশাপাশি ডলারের তুলনায় টাকার অস্বাভাবিক মূল্য পতন অর্থনীতির উপর প্রবল নেতিবাচক চাপ তৈরি করে। টাকার মূল্য পতন ঠেকাতে গিয়ে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ে ধস নামে। আবার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়াতে হয় সুদের হার। সব মিলিয়ে এক অস্থির, অনিশ্চিত এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।


এমন অস্থিরতার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ঝোঁক হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, উচ্চ হারে বেকারি এবং মানুষের আয় না বাড়া। সাধারণ মানুষের জীবনের এই সঙ্কট জিডিপি’র মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় না। মোট অভ্যন্তরীণ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি মানে কোনও অবস্থাতেই বেকারি হ্রাস, মজুরি যা আয় বৃদ্ধি নয়। উদার অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো কর্মসংস্থানহীন বৃদ্ধি। অর্থাৎ জিডিপি বাড়বে কিন্তু কর্মসংস্থান তৈরি হবে না, বেকারি কমবে না, মজুরি বা আয় বাড়বে না। ভারতীয় অর্থনীতি এখন এই গোলকধাঁধার মধ্যে চক্কর খাচ্ছে। 

 

সরকার জিডিপি বৃদ্ধির হার দেখিয়ে বড়াই করছে। অন্য দেশ থেকে বৃদ্ধির হার বেশি বলে গর্ব করছে। কিন্তু তাতে দেশের সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের জীবনধারণের সমস্যা বাড়ছে।
অপর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে অক্টোবর মাসে শিল্পোৎপাদনের হার বাড়ার বদলে ৪ শতাংশ কমে গেছে। গত ২৬ মাসের মধ্যে শিল্পক্ষেত্রে এমন দুরবস্থা দেখা যায়নি। শিল্পোৎপাদনের মধ্যে পণ্যোৎপাদনের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এখানে উৎপাদন কমেছে ৫.৬ শতাংশ। মনে রাখা দরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান জায়গা শিল্প, বিশেষ করে পণ্য উৎপাদন। সেখানে এইভাবে ক্রমাগত উৎপাদন কমতে থাকলে রুজির জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাবে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। অন্যদিকে যেসব ক্ষেত্র কম শ্রমনিবিড় সেক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ বেশি থাকায় জিডিপি’র বেশি অংশ আসছে সেখান থেকে। সরকারের নীতির কারণেই কর্মসংস্থানমুখী অর্থনীতির বিকাশ থমকে গেছে। তার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বেকারি, কম মজুরি তাদের গ্রাস করছে। জীবন থেকে সচ্ছলতার স্বপ্নও মুছে যাচ্ছে। মানুষকে দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত করে জিডিপি’র কৌশল আসলে বন্ধু কর্পোরেটের মুনাফা বৃদ্ধি। অসাম্য ও দারিদ্র বৃদ্ধি।

Comments :0

Login to leave a comment