মাত্র আড়াই দিন লাগল। বিশ্বের এক নম্বর দলকে হারাতে। ইনিংস ও ১৩২ রানে জিতল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে এক সেশনেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া। অবিশ্বাস্য ব্যাপার! ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। এত কঠোর প্রস্তুতি নিয়ে লাভটা কি হল অস্ট্রেলিয়ার? সেই স্পিন আতঙ্কেই ভরাডুবি হলো অসিদের। ভারতের আসার আগে সিডনিতে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে প্র্যাকটিস। এ দেশে এসে ‘নকল’ অশ্বিন মহেশ পিথিয়ার বলে দীর্ঘক্ষন অনুশীলন। তারপরও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সামলাতে ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংসে মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিলেন অশ্বিনই। আট উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে একাই শেষ করলেন বিপক্ষকে। ৯১ রানে গুটিয়ে দিলেন প্যাট কামিন্সদের। নেটে পিথিয়াকে খেলা আর ম্যাচে ৪৫০ টেস্ট উইকেট নেওয়া কিংবদন্তি স্পিনারের বিরুদ্ধে খেলা একরকম নয়, দু’য়ের পার্থক্যটা হাড়ে হাড়ে টের পেল অসি ব্যাটাররা।
পিচে কোনও জুজু ছিল না। বল খুব একটা টার্ন করেনি। এক-দু’টো ছাড়া। বেশ কয়েকটা বল হঠাৎ নিচু হয়েছে। এই আর কি! অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা আউট হয়েছেন সোজা বলে। ভারতের মাটিতে শেষবার অস্ট্রেলিয়া ১০০’র কমে অলআউট হয়েছিল ২০০৪ সালে। মুম্বাইতে। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে। সেই ম্যাচের বাইশ গজ ছিল যথেষ্ট স্পিন সহায়ক। ধুলোভরা উইকেট। সেখানে যদি এই অস্ট্রেলিয়া দলটা খেলত, ৫০’য়ের কমে অলআউট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল! গত সফরের বেশিরভাগ ক্রিকেটাররা এই সফরে খেলছেন। তাই অভিজ্ঞতা নেই বলা যাবে না। দ্বিতীয় ইনিংসে আশা করা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া অন্তত লড়াই ফিরিয়ে দেবে, স্পিনের বিরুদ্ধে সঠিক টেকনিক ও স্কিল দিয়ে রান করার চেষ্টা করবে। কিন্তু কোথায় কি? নির্ভেজাল আত্মসমর্পণ করল অসিরা। তাই ম্যাচ শেষে কামিন্স বলে গেলেন, ‘আমাদের আরও সাহসী এবং প্রো-অ্যাক্টিভ হতে হবে।’
এদিন ৩২২/৭ অবস্থায় শুরু করেছিল ভারত। লিড ছিল ১৪৪ রানের। সেখান থেকে ভারত লিডটা নিয়ে যায় ২২৩ রান অবধি। এটাই অস্ট্রেলিয়ার মনস্তাত্তিক চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। শনিবার রবীন্দ্র জাদেজা ৪ রান যোগ করেই আউট হয়ে যান। তাঁর অফস্টাম্প ভাঙেন টড মার্ফি। জাদেজা আউট হয়ে গেলে দলকে টেনে নিয়ে যান অক্ষর প্যাটেল ও মহম্মদ সামি। ক্রিজে এসে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন সামি। সামিকে মারতে দেখে স্ট্রাইক রোটেট করতে থাকেন অক্ষর। ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া মার্ফিকে একাই তিনটি ছক্কা মারেন সামি। মার্ফির বলে আউট হওয়ার আগে অবধি ৪৭ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৭ রান করেন। ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসটি মেরেছেন ৩ টি চার ও দু’টি ছক্কা। ব্যক্তিগত ৮৪ রানে ফেরেন অক্ষর। কামিন্সের বলে বোল্ড হন তিনি। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৪০০ রানে। নয় নম্বরে নেমে যে ইনিংসটি খেলেছেন অক্ষর, প্রশংসা আদায় করেছেন বিশেষজ্ঞদের। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী, স্পিনের বিরুদ্ধে অক্ষরের টেকনিকের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘অক্ষর আদর্শ ব্যাটারের মতো ব্যাটিং করেছেন। অনবদ্য ফুটওয়ার্ক।’
পাহাড়প্রমাণ লিডের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের ১১তম বলেই প্রথম উইকেটের পতন হয় অস্ট্রেলিয়ার। অশ্বিনের বলটা রাফে পড়ে টার্ন করে। খোয়াজা ড্রাইভ করতে যান। বল তাঁর ব্যাটের কানা নিয়ে প্রথম স্লিপে বিরাট কোহলির মুঠোবন্দি। ওয়ার্নারকে কখনই স্বচ্ছন্দে লাগেনি। বিরাট ক্যাচ না ফেললে ৪১ বল অবধি ক্রিজে টিকতেই পারতেন না। বরঞ্চ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল কিছুটা মার্নাস লাবুশানের মধ্যে। সেই সোজা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ মার্নাস। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে জাদেজার শিকার হন তিনি। কয়েকওভার পর ওয়ার্নারকে ফেরান অশ্বিন। এরপর বাকি সব আয়ারাম গয়ারাম। রেনশ (২), হ্যান্ডসকম্ব (৬), কেরি (১০), কামিন্স (১), মার্ফি (২), লিও (৮)। সামির বলে বোল্যান্ড (০) এলবিডব্লিউ হতেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয়। নিজের উইকেট বাঁচানোর তাগিদেই অপরাজিত থাকলেন স্মিথ (২৫)। সেভাবে কারোর মধ্যেই চোয়াল চাপা লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। অশ্বিন ছাড়া জাদেজা ও সামি পেয়েছেন দু’উইকেট। একটি অক্ষর। জয়ের পর রোহিত শর্মা বললেন, ‘পিচ-কন্ডিশন এই সব নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’
অস্ট্রেলিয়া- প্রথম ইনিংস ১৭৭, দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ (স্মিথ অপরা: ২৫, অশ্বিন ৫/৩৭, সামি ২/১৩)
ভারত- প্রথম ইনিংস ৪০০ (রোহিত ১২০, অক্ষর ৮৪, জাদেজা ৭০, মার্ফি ৭/১২৪)
ভারত জয়ী ইনিংস ও ১৩২ রানে।
ম্যাচের সেরা- রবীন্দ্র জাদেজা
Comments :0