Water Connection Wrongdoing

পাইপ বসেছে, জল নেই’ কবুল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

রাজ্য

পাইপ বসেছে, জল যায়নি, কবুল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি!
বাধ্য হয়ে ফের এক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের বেনিয়মের তদন্তে নামতে বাধ্য হচ্ছে নবান্ন! গত মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামীণ এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের। এখন নতুন করে আগামী বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। নবান্নে পর্যালোচনা বৈঠকে যেভাবে ‘পাইপ গেছে, জল নেই’ বলে খোদ মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন তাতে ৫৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও দুর্নীতি এড়াতে পারলো না রাজ্য সরকার। 
এবার দুর্নীতির নিশানায় কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন মিশন প্রকল্প। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ৫০ শতাংশ করে আর্থিক সহায়তায় রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সব পরিবারের জন্য জল জীবন মিশন প্রকল্প চালু হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশের ১৯ কোটি পরিবারের কাছে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প চালু করেছিলেন।
এরাজ্যে জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, জনস্বাস্থ্য কারিগরি(পিএইচই) দপ্তরের প্রধান সচিব সহ রাজ্য মন্ত্রীসভার বেশ কয়েক জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, গ্রামীণ এলাকায় নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের কাজ ৭৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরও পানীয় জল পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ।
এরপরই ঠিক হয়েছে, যে সমস্ত জেলাতে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ কাগজে কলমে সম্পূর্ণ হয়েছে গুটিয়ে যাওয়া সেইসব জল প্রকল্পের কাজ আবার নতুন করে তদন্তের আওতায় আনা হবে। বৈঠক শেষে মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের কাছে জানান, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় ৭৫ শতাংশ পানীয় জল পৌঁছে গেছে। শহরাঞ্চলে প্রায় ৭৩ শতাংশ পরিবারের কাছে নলবাহিত পানীয় জল চলে গেছে।’’ এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,‘‘পাইপ বসেছে, কিন্তু জল যায়নি। জলের উৎসের খোঁজ না করে ডিপিআর (ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করে কাজ শেষ করা হয়েছে। আমাদের কাছে তালিকা আছে। সেই তালিকা ধরে পুনরায় তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে।’’
এদিন বৈঠক থেকে মুখ্যসচিবকে তদন্ত কমিটির শীর্ষ রেখে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মন্ত্রীগোষ্ঠী। জেলা শাসকদের কাছে এদিন বৈঠক থেকে পাইপ পেতে জল সরবরাহ করার কাজ শেষ হওয়ার পর জল না পাওয়ার জন্য তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
এরাজ্যে এখন পর্যন্ত ৯৩ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের কাছে জল জীবন মিশন প্রকল্পে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করার দাবি করেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। রাজ্যে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের কাছে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। তারজন্য খরচ হওয়ার কথা ৫৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু যেভাবে ‘পাইপ বসেছে, জল যায়নি’ বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন তাতে বিপুল আর্থিক দুর্নীতি সামনে চলে এসেছে। আর সেই দুর্নীতির গভীরতা খুঁজতে এখন তদন্তে নামতে হচ্ছে রাজ্যকেই।
এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজ গত তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ বন্ধ করেছে। রেগার কাজে দুর্নীতির অভিযোগে আইনের ২৭ নং ধারায় এরাজ্যে বরাদ্দ বন্ধ। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকাও কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে রেখেছে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রেগার কাজ করে টাকা না পাওয়া ৫৯ লক্ষ জব কার্ডের গ্রাহকদের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। এখন আবাস যোজনার তথ্য যাচাই করতে নেমেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন আবাস যোজনার জন্য ১২ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ির তৈরির প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার করে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন মিশন প্রকল্পেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে দুর্নীতির অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে তদন্তে নামতে হচ্ছে রাজ্যকেই।
জল জীবন মিশন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ শতাংশ টাকা দেয়। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা দেয় রাজ্য ও উপভোক্তার কাছ থেকে ১০ শতাংশ টাকা নেওয়ার কথা। প্রকল্পের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন উপভোক্তার ১০ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকারই বহন করবে। ফলে রাজ্যের খরচ ৫০ শতাংশ। এখন প্রকল্প শেষ হওয়ার পর জল না পৌঁছালে যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে তার দায়ভার কে বহন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এদিন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন,‘‘ পিএইচই দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব সূত্র ও পিএমইউ (প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট) থেকে জানতে পারছি, প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জল পৌঁছায়নি। আমরা তাই পুনর্তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে, কোথাও ডিপিআর’এ ঘাটতি ছিল কিনা, জলের উৎস নেই কিন্তু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলি খোঁজ নেওয়া হবে।  প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও জল না পাওয়া মানুষের কাছে কীভাবে পানীয় জল আবার সরবরাহ করা যায় সেটাও দেখতে হবে।’’ ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে রাজ্যের অর্ধেক অংশীদারিত্ব থাকলেও দুর্নীতি শেষ পর্যন্ত এড়াতে পারছে না রাজ্য সরকার। 
গ্রামীণ এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প আর পাঁচটা প্রকল্পের মতো শুরুতে নাম জটে পড়েছিল। জল জীবন মিশন প্রকল্পকে এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জি জল স্বপ্ন নামকরণ করেছিলেন। ফলে শুরুতেই কেন্দ্রীয় সরকারি বরাদ্দ নিয়ে একদফা টানাপোড়েন হয়েছিল। পরে রাজ্য মেনে নেয় কেন্দ্রীয় জল জীবন মিশনকেই। কিন্তু এখন নতুন করে সমস্যার কথা মানতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকেই। 
 

Comments :0

Login to leave a comment