বিশ্বনাথ সিংহ
অগ্নিগর্ভ কালিয়াগঞ্জ। বিজেপি বিক্ষোভের নামে হিংসা ছড়িয়েছে কালিয়াগঞ্জে। ছড়াচ্ছে বিভাজনও। থানায় আগুন লাগানো হয়েছে। আহত একাধিক পুলিশকর্মী। সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। এলাকা থমথমে। মুহূর্তের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। রায়গঞ্জ-কালিয়াগঞ্জ সড়ক বন্ধ। চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুর জেলা বামফ্রন্ট নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। পুলিশের সংবেদনহীন আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে। বামপন্থী আন্দোলন এবং গণসংগঠনের নেতা ও কর্মীরা আগেই গিয়ে দেখা করেছেন বিপন্ন পরিবারের সঙ্গে। বিভাজনের রাজনীতি ঠেকাতে পথে নেমেছে বামফ্রন্ট।
বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে ওই স্কুল ছাত্রীর দেহ পাওয়া যায়। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ তৈরি হয় স্থানীয় মানুষের মধ্যে। অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, দলবদ্ধ ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে৷ পুলিশের দাবি, ময়না তদন্তে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের কাছে পুলিশের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। এর আগে বিক্ষোভ তুলতে পুলিশই নির্মমভাবে ছাত্রীর দেহ রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিভাজন তৈরিতে নেমে পড়েছে বিজেপি। হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে সাম্প্রদায়িক এই দল।
মঙ্গলবার রাজবংশী ও আদিবাসী সমন্বয় কমিটির বিক্ষোভে আগুন জ্বলে কালিয়াগঞ্জ থানায়। পুড়ে ছাই হয়েছে থানার একাংশে ছাউনি, যেখানে থাকা বাজেয়াপ্ত করা সাইকেল ও মোটরসাইকেল। থানার মন্দিরের গা ঘেঁষে থাকা একটি কোয়ার্টার পুড়েছে এই আগুনে। সময় মতো বেরিয়ে আসায় পুলিশ কোয়ার্টারের বাসিন্দারা রক্ষা পেয়েছেন। র্যা ফের জওয়ান সহ বহু পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট-পাথরে। ইটের আঘাতের তালিকায় আছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। বিক্ষোভকারীদের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কালিয়াগঞ্জ থানার বাহিরে ফুটপাতে থাকা দোকানপাট।
এই তান্ডবের খবর পেয়েই কালিয়াগঞ্জে ছুটে আসেন ডিআইজি রায়গঞ্জ রেঞ্জ অনুপ জয়সোয়াল, পুলিশ সুপার মহম্মদ সানা আখতার। সন্ধ্যায় কালিয়াগঞ্জ থানায় পৌঁছে গিয়েছেন এডিজি অজয় কুমার। এই ঘটনার পর বাড়তি পুলিশ বাহিনী আনা হয় কালিয়াগঞ্জে। এরপর ডিআইজি ও এসপি’র নেতৃত্বে র্যাপফ সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী কালিবাড়ি হয়ে সুকান্ত মোড় দিয়ে মেন রোডে রুটমার্চ শুরু করেছে। এর মধ্যেই পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে।
মঙ্গলবার সকালেই সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কালিয়াগঞ্জের মর্মান্তিক ঘটনাকে ব্যবহার করে আরএসএস-বিজেপি মানুষে মানুষে যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। সেই কারণেই ঘটনার দিন থেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিরুদ্ধে, কিশোরীর মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিতে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সামাজিক ন্যায় মঞ্চ এবং মহিলা সমিতির উদ্যোগে মিছিল হচ্ছে। কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে প্রতিদিন নিবিড় সম্পর্ক রাখা হচ্ছে।’’
তৃণমূল সরকারের প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছে বামফ্রন্ট। গত ২১ এপ্রিল জেলাশাসকের সময় চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। আনোয়ারুল হল বলেছেন, ‘‘কিশোরীর দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া চরম অন্যায়, অনৈতিক। সেই অপরাধে পুলিশের এএসআই পদমর্যাদার চার অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু ওপরতলা থেকে যারা নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের আড়াল করলে চলবে না।’’
কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের মধ্যেও তরজা চলছে। রাজ্যের তৃণমূল এবং কেন্দ্রে আসীন বিজেপি’র নোংরা রাজনীতিতে ক্ষোভ জানিয়েছে বামফ্রন্ট। সিপিআই নেতা শ্রীকুমার মুখার্জি বলেছেন, ‘‘এতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে।’’
এর আগে জেলার দাড়িভিটের ঘটনা মনে করিয়েছে বামফ্রন্ট। শিক্ষক চেয়ে আন্দোলনে নেমে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্র তাপস এবং রাজেশ দে। তৃণমূল এবং বিজেপি ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করলেও পরিবার সুবিচার পায়নি।
এদিন দুপুরে ফের বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ মৃত ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
Comments :0