শারদ নতুনপাতা
মণ্ডা মিঠাই
পার্বণ থেকে পার্বণে — মানিকপীরের ঘোড়া
সৌ র ভ দ ত্ত
শিশির ভেজা মহানবমীর সকাল। ঘুমটা ভাঙতেই চোখ চলে যায় টেবিলে রাখা পোড়ামাটির ঘোড়ার দিকে। ঘোড়া নিয়ে আমার মেয়ে মাঝে মধ্যে খেলে। ঘোড়ার গলায় মালা পরায়। শরীরের আলসেমি ভাব তখনও কাটেনি। তবুও উঠে বসি। ঘরের পিছনে দেখি কত দুধেআলতা ফুটেছে। আগেও নবমীর দিন দুধে আলতা ফুটত। দিদা সাজি করে ফুল তুলে নিয়ে যেত। ছেলেবেলায় মামুদাদুর পিঠে চড়ে আমরা চন্ডীমণ্ডপে ঘোড়াঘোড়া খেলতাম –"টাট্টু ঘোড়া, হ্যাট হ্যাট…"। পুজোয় মানিকপীরের ঘোড়া আসত, ফকিরের মাথায় ফেট্টি বাঁধা। উঠোনের সামনে ঘোড়া এসে দাঁড়াত। নবমীর দিন আমরা অপেক্ষায় থাকতুম– ঘোড়ার পিঠে চাপার জন্য। ঘোড়ায় চেপে মনস্কামনা করে তখন চারআনা-আটআনা নয়া দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। গাভীর বাছুর হলে প্রথম দুধ দিদা দিয়ে আসত মানিকপীরের মাজারে। মামুদাদুও যেত ধূপবাতি জ্বেলে দিতে। ফকিরের সাথে কত মজা করতুম।ঘোড়া চড়চড় করে উঠোনের সব ঘাস ফাঁকা করে দিত। ঘোড়ার চোখ দিয়ে পিচুটি কাটত। ওর নাম ছিল – পৌষালী। ফকির ডাক ছাড়ত – "আয় পৌষালী এদিকে আয়"। ওমনি ঘোড়ার গলার ঘন্টি টুংটাং নড়ে উঠত। নবমীর দিন দুর্গার ভোগ রাধত সতীপদকাকা। বাড়িতে সবাই ছাঁচে ফেলে নারকেল ছাপা তৈরি করত। সেই ছাপা পাঠানো হত বাড়ি বাড়ি। মহানবমী মানেই বিদায়ের ক্ষণ।
চৌধুরী বাড়ির নাটমন্দিরে বসবে ঠুংরি গানের আসর। গায়ক গান ধরবে–"ওরে নবমী নিশি!না হৈওরে অবসান"। গৌরীগাঙের ঘাট পরিষ্কার হবে। ওখানেই কাল উমার বিসর্জন। মাঝে অনেক বছর মানিকপীরের ঘোড়া আসেনি। আগেকার সেই ফকির, ঘোড়া দুজনেই মারা গেছে। তার নাতি এসেছিল চালপয়সা নিতে। লালচে রঙের ঘোড়া–পুজো প্যাণ্ডেলে ঘোড়া দেখেই মেয়ের বায়না – বাবা ঘোড়ায় উঠব – চাপিয়ে দিলাম জিনের উপর।
ছোট্ট ছেলেটি বলল —
"মানিকের নামে তোমরা হেলা করো না।
মানিকের নাম রাখলে বিপদ হবে না।"
Comments :0