মুক্তধারা
অন্যকথা
"কপোতাক্ষ" জলে ভেসে যায় মধুসূদনের চতুর্দশপদী কবিতার আখরগুলি।।
সৌরভ দত্ত
জন্মের দ্বিতশবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা আবহমান কবিতার পাঠকদের স্মৃতি-সত্তায় সতত বিদ্যমান ।মধু কবির ছন্দের চতুর্দশপদী কবিতার জাদুতে বাংলা গীতিকবিতা ঋদ্ধ হয়েছে।প্রথম কাব্য 'The Captive Ladie' পর থেকে বাংলা মহাকাব্যময়তার মায়াজাল মধুসূদন বিস্তার করেছিলেন–'তিলোত্তমাসম্ভ','মেঘনাদবধ','ব্রজাঙ্গনা','বীরাঙ্গনা','চতুর্দশপদী কবিতা ','হেক্টরবধ প্রভৃতির মাধ্যমে।মাইকেল শিল্পের বন্ধনকে মুক্ত করেছেন সনেটের মাধ্যমে।পেত্রার্কীয়, শেক্সপিয়রীয়),ট্যাসো সনেট ইংরেজি সাহিত্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্যতা লাভ করেছিল।মাইকেল বাংলা সনেটের প্রথম চিন্তক।যদিও তৎকালীন সময়ে গীতিধর্মী কবিতার ছায়া রবীন্দ্রনাথের 'নৈবেদ্য' কাব্যেও মিলবে।কিন্তু মাইকেলের সনেটগুলি রূপকধর্মী ও আশা-নিরাশার জারণে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে।সনেট রচনার পথিকৃৎ মধুসূদনের 'কপোতাক্ষ' নদ একটি উল্লেখযোগ্য সনেট।বক্তব্যের দিক থেকে পেত্রার্কীয় সনেটের অনুরণন এই সনেটে সুস্পষ্ট।চোদ্দপঙক্তির এই কবিতাটিতে মাইকেল লিখেছেন–"সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।/সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;/সতত(যেমতি লোক নিশার স্বপনে /শোনে মায়া-মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে।"এখানে চতুষ্কে–কখকখ মিল রক্ষিত হয়েছে।অষ্টকের এই প্রথম চার পঙক্তি শেক্সপিয়রীয় রীতিকে মান্যতা দিয়েছে।কবিতাটি ঘরে ফেরার বাসনা প্রিয় নদী কথা প্রকাশ পেয়েছে।কপোতাক্ষ নদের তীর যেন তাঁকে মহিমান্বিত করেছে।আমরা জানি যে অধুনা বাংলাদেশের কপোতাক্ষ তীরেই ২৫ শে জানুয়ারি যশোহরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে কবির জন্ম।ফ্রান্সে গিয়েও প্রিয় নদের সাথে নিজের সখ্যতার কথা ভুলতে পারেননি মধুসূদন।সেই নদীর প্রতি অনুরক্ততা ফুটে ওঠে মিশ্রবৃত্তরীতির এ কবিতায়।বিচ্ছেদের বেদনাও অন্তর্লীন রয়েছে কবিতায়।কপোতাক্ষ নদী কবির নস্টালজিয়ায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে–"কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?/দুগ্ধ-স্রোতস্রিনী তুমি জন্ম-ভূমি-স্তনে!" কবিতার পরতে পরতে মিশে রয়েছে রূপক অলংকার।আলোচ্যমান কবিতার তিনটি পঙক্তিতেই 'সতত' শব্দের অভিঘাত কবির নিঃসীম বেদনাকেই চিহ্নিত করেছে।বাংলা মহাকাব্যধারার সার্থক কবি মধুসূদন দত্ত।তাঁর রচিত 'মেঘনাদবধ' এক অনন্য মহাকাব্যের নিদর্শন।যা হাজার হাজার বছর বছর ধরে পথ পরিক্রমায় ক্লান্ত বাংলা কবিতার পাঠকের তৃষ্ণা মেটাবে।
Comments :0