মুক্তধারা
অন্যকথা
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
পল্লব মুখোপাধ্যায়
‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’। এই এক কবিতায় সকলের বাক্রুদ্ধ
হয়ে গিয়েছিল। বাংলা ভাষার প্রতি একটি শ্রেণির ছুতমার্গ যে এ ভাবে লেখার ছলে তুলে
ধরে কটাক্ষে বিদ্ধ করা যায়, বাঙালিকে দেখিয়েছেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার।
১৯৫০ সালের ৯ এপ্রিল ভবানীপ্রসাদ জন্মগ্রহণ করেন হাওড়া জেলার জগাছা থানার
অন্তর্গত দাশনগরের কাছে দক্ষিণ শানপুর গ্রামে। তাঁর বাবা নারায়ণচন্দ্র মজুমদার
এবং মা নিরুপমা দেবী। কবির শৈশব জীবন কাটে তাঁর গ্রামেই ।
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। বিশিষ্ট এই কবি ও ছড়াকার
হাওড়া জেলার শানপুর গ্রামের কালিতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়-এ একজন শিক্ষক হিসেবে
তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত
হয়েছিলেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতাচর্চা এবং লেখায় মনোনিবেশ করেন তিনি। তাঁর লেখা বহু
ছড়া, গল্প পড়ে বড় হয়েছে ছোটরা। ছোটদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল বিশাল, পাশাপাশি
বড়দের জন্যেও লিখতেন তিনি। ‘ছাগলের কাণ্ড’, ‘রঙ বদলের ব্যাপার স্যাপার’, ‘বাংলাটা
ঠিক আসে না’ - এ রকম তাঁর লেখা বহু ছড়া ও কবিতা জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁকে
অনেকেই সুকুমার রায়ের উত্তরসূরি বলে মনে করতেন। তাঁর হাতে সুকুমার রায়
শতবার্ষিকী পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। পেয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর
রায়চৌধুরী পুরস্কার। এ ছাড়াও আরও বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি ।
তিনি প্রধানত ছোটদের উপযোগী মজার মজার ছড়া-কবিতা লেখায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন
। তাঁর প্রকাশিত ছড়ার সংখ্যা কুড়ি হাজারের বেশি। ছড়া নিয়ে তিনি নিরন্তর নানান
রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসতেন । পেয়েছেন শিশুসাহিত্য পরিষদ
পুরস্কার, অভিজ্ঞান স্মারক, ছড়া সাহিত্য পুরস্কার-সহ একশোর বেশি পুরস্কার।
কবির প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মজার ছড়া’, ‘সোনালী ছড়া’, ‘কোলকাতা
তোর খোল খাতা’, ‘হাওড়া-ভরা হরেক ছড়া’, ‘ডাইনোছড়া’ প্রভৃতি। তিনি সত্যজিৎ রায় ও
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখেছেন ‘ছড়ায় ছড়ায় সত্যজিৎ’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ নইলে অনাথ’।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার নেই । কিন্তু শীতের উত্তুরে দামাল হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে ভাষা
দিবসের প্রাক্কালে তাঁর লেখা এক অমোঘ কবিতার মর্মস্পর্শী কটি চরণ -
&‘‘ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস বলে
‘ডিবেট করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।’’
Comments :0