MUKTADHARA / PROBANDHA — DEBOJIT PAL — 3 JANUARY 2024

মুক্তধারা / প্রবন্ধ — আয়লা ঝড় / ৩ জানুয়ারি ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  PROBANDHA    DEBOJIT PAL   3 JANUARY 2024

মুক্তধারা  

প্রবন্ধ

আয়লা ঝড়
দেবজিৎ পাল

আমরা অনেকেই ঘূর্ণিঝড় আয়লার কথা ভুলে গেছি। কলকাতা থেকে ৫৯০ মাইল বা ৯৫০ কিমি দূরত্বে ভারত মহাসাগরে এই ঘূর্ণাবর্ত ২১-শে মে ২০০৯ সালে জন্ম নেয় এবং ২৫-শে মে বাংলা দেশের দক্ষিণ –পশ্চিমাংশে এবং ভারতের  
দক্ষিণ-পূর্বাংশে আছড়ে পড়ে। এই ঝড়ের মধ্যে আমি পড়ে ছিলাম, তার অভিজ্ঞতা বলার আগে ঝড়টি সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে চাই। 
এই ঝড়টির ‘আয়লা’ নামকরণ করেছিল মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদ-রা, আয়লা শব্দের অর্থ ডলফিন বা শুশুক জাতীয় জলচর প্রাণী। 
আয়লার ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার যা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডার’ থেকে ৫০ কিমি বেশি। ‘সিডার’-এর মতই আয়লা প্রায় ১০ ঘন্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে, তবে পরে বাতাসের গতিবেড় ৮০-১০০ কিমি হয়ে যাওয়ায়  
ক্ষয়ক্ষতি ‘সিডার’-র তুলনায় কম হয়েছিল। ভারতের আয়লার প্রকোপে ১৪৯ জন প্রাণ হারায়, এর মধ্যে দুজন বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এবং বাকি শতাধিক ব্যক্তি অতিবর্ষণ জনিত কন্যায় প্রায় হারায়। প্রবল ঝড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে গাছ  
উপরে রাস্তাঘাপ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঝড়ের দাপটে কোলকাতা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, কোলকাতা ও ২৪-পরগণা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়,  
প্রায় একলক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়। অন্তত ১০০টি নদীবাঁধ ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ৪০,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয় এবং ১,৩২,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়লার দাপটে অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
সংক্ষেপে এটা আয়লার একটি বিবরণ, তবে সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। সেদিন আমি, আমার মা ও বাবা ভট্টনগরে আমার মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম, বিকালে ভট্টনগর থেকে ফেরার  পথে  
আয়লার কবলে পড়ি।  
আমরা যখন  চকপাড়ার রাস্তা ধরে আসছিলাম তখন বাদলা হাওয়ার সাথে ধুলোয় চারদিক ভরে গিয়েছিল ও প্রকৃতি বিকট রূপ ধারণ করেছিল। তারপর শুরু হল প্রচন্ড ঝড়, হাওয়ার তীব্রতায় আমরা এগোতে পারছিলাম না। আমরা  
একটা খালি অটো পেয়ে তাকে ডাকছিলাম, কিন্তু সে প্রাণভয়ে আমাদের নিয়ে যেতে চাইল না। আমরা আতঙ্কের মধ্যে হেঁটে হেঁটে বেলগাছিয়ায় পৌঁছাই। আমাদের চোখের সামনে একটা লাইট পোস্ট একটা চলন্ত বাইকের উপর ভেঙ্গে  
পড়ল, দু’জন আরোহী নিহত হয়। তাদের কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। ইছাপুরে রাস্তা দিয়ে আসার সময় একটা প্রকান্ড বটগাছ রাস্তার উপর ভেঙ্গে পড়ে এবং যানবাহন সহ লোকজন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আমরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোনরকমে বাড়িতে ফিরে এলাম। কেউ কারও সাথে কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না। তারপর ঝড় আরও বাড়তে শুরু করল , সেই ঝড়ে টেলিফোন-বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ভোরের দিকে ঝড়ের  
বেগ কমতে শুরু করে । পরে জানতে পারি শহর গ্রামে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। 
সেদিনের কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠি। 

Comments :0

Login to leave a comment