MUKTADHARA | STORY — TERANGA | SOURISH MISHRA — 11 FEBRUARY 2024

মুক্তধারা | গল্প — গর্বের তেরঙা | সৌরীশ মিশ্র — ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA   STORY  TERANGA  SOURISH MISHRA  11 FEBRUARY 2024

মুক্তধারা

গল্প

গর্বের তেরঙা

সৌরীশ মিশ্র


বছর দশকের বনি চলেছে স্কুল। পিঠে তার স্কুল ব্যাগ। গলায় ওয়াটার বটল। সাথে চলেছেন ওর মা পূর্ণা।
বনি ভীষণই দুরন্ত। তাই, তাঁদের বাড়ির গলিটা থেকে বেড়িয়ে বাস-রাস্তায় পড়া মাত্রই পূর্ণা শক্ত ক'রে হাত ধরে আছেন তাঁর ছেলের। তবু, বনি লাফিয়ে-লাফিয়ে চলেছে। তাই ছেলেকে সামলাতে মাঝে মধ্যেই বকা দিচ্ছেন পূর্ণা।
"কি ভাবে হাঁটছিস বনি? ঠিক মতো হাঁট।"
তবে, পূর্ণার বকায় বিশেষ কাজ হচ্ছে না। বনি কয়েক পা ঠিক মতোন হেঁটে ফের লাফিয়ে-লাফিয়ে চলতে শুরু করছে।
ছেলে কথা শুনবে না এবং ওকে যতই বকা হোক না কেন সারা রাস্তাটাই এভাবেই যাবে ও, বুঝতে পেরে এই মুহূর্তে হাল ছেড়ে দিয়েছেন পূর্ণা। আর মা বকছে না দেখে আরো পূর্ণোদ্যমে লাফাতে-লাফাতে চলছে এখন বনি।
হঠাৎই সেই বনিই থমকে দাঁড়ায়।
"কি রে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?" ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন পূর্ণা।
"ঐ দ্যাখো মা, ওখানে কি পড়ে আছে! দাঁড়াও, নিয়ে আসি।" বলেই এক ঝটকায় পূর্ণার হাত ছাড়িয়ে সে ছুটে যায় রাস্তার একেবারে ধারে। রাস্তার উপর থেকে কুড়িয়ে নেয় কি যেন। তারপর ফের দৌড়ে এসে দাঁড়ায় মা-র কাছে।


"কি নোংরা তুলে নিয়ে এলি রাস্তা থেকে, ফ্যাল্, ফ্যাল্..." বলেছেন মাত্র পূর্ণা, তখুনি বনি কি কুড়িয়ে এনেছে সেই বস্তুটাতে চোখ যায় তাঁর আর তাতেই বাক্যটা শেষ করতে পারেন না তিনি। তাঁর ছেলে যে একটা কাগজের জাতীয় পতাকা, যেটা অযত্নে রাস্তার উপর পড়েছিল, সেটা কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে! 
দু'দিন আগে গেছে প্রজাতন্ত্র দিবস। এই ছোটো পতাকাটি নিশ্চয়ই ব্যবহৃত হয়েছিল কোথাও সাজানোর কাজে। সেখান থেকেই এখন খুলে পড়েছে রাস্তায়। মনে মনে ভাবে পূর্ণা। 
আর এদিকে বনি বলছে তখন, "দ্যাখো মা, ন্যাশনাল ফ্ল্যাগটা রাস্তায় পড়ে ছিল।  সেটা তো ঠিক না, তাই না? আমি নিয়ে এলাম। একটা স্টিক্ এটায় লাগিয়ে আমার পড়ার টেবিলের উপর রাখব। ভাল হবে না?"
"হ্যাঁ, খুব ভাল হবে। দে, ওটা ঝেড়ে পরিস্কার করে দিই।"
বনি কাগজে ছাপানো ফ্ল্যাগটা মায়ের হাতে দেয়। পূর্ণা সযত্নে ওঁর ওড়না দিয়ে মোছেন ফ্ল্যাগটা। তারপর, ছেলের হাতে ওটা দিয়ে বলেন, "ব্যাগে ঢুকিয়ে নে।"
বনি ফ্ল্যাগটা যত্ন ক'রে ঢুকিয়ে রাখে ওর পিঠের ব্যাগটা খুলে একটা বই-এর ভিতর।
ব্যাগটা ফের পিঠে নেয় বনি।
"চল্ এবার তাড়াতাড়ি।" ছেলেকে তাড়া দেন পূর্ণা।
"হ্যাঁ, চলো।" বলতে বলতেই মায়ের হাত ধরে বনি।
মা-ছেলে দু'জনে আবার হাঁটা লাগায় স্কুলের দিকে। 
এখনো বনি সেই আগের মতোনই লাফিয়ে-লাফিয়ে মায়ের হাত ধরে চলেছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment