দুর্নীতি থেকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। লড়াই করতে হবে একসঙ্গে। দিল্লিতে মোদীর লুট, রাজ্যে দিদির লুট চলছে। লড়াইকে ভেঙে দিতে হিন্দু-মুসলমান ভাগ করার চেষ্টা চলবে। সেই মতলব রুখতে হবে। ধর্মের ভাগাভাগি ঠেকিয়ে মোদী-মমতার লুট রুখতে হবে।
সোমবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ডিওয়াইএফআই’র সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি আড়াল করতে চাইছে তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’পক্ষই। সে জন্যই নবান্নে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে অমিত শাহকে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলেই ভাগ করতে নামছে বিজেপি-আরএসএস।’’
তৃণমূল-বিজেপি’কে লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন, ‘‘কে কতো টাকা পেলে আর কতো টাকা খেলে তার হিসেব দিতে হবে। চুপিচুপি হিসেব দিলে হবে না, গ্রামসভা ডেকে হিসেব দিতে হবে।’’
সোমবার সমাবেশে মাঠ উপচে গিয়েছে জমায়েতে। স্লোগান তুলে মিছিলের পর মিছিল এসেছে সমাবেশে, হাতে ডিওয়াইএফআই’র ঝাণ্ডা নিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখার্জি, সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী প্রমুখ।
নভেম্বর থেকে গ্রামে গ্রামে জনতার টাকার লুট রুখতে পদযাত্রা করছে সিপিআই(এম)। সেলিম বলেন, ‘‘মানুষ হিসেব চাইছেন। রাতের অন্ধকারে পঞ্চায়েতে হিসেবের খাতায় কারচুপি করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ পার পাবে না। হিসেব দিতে হবে।’’ তিনি মনে করিয়েছেন যে নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে গিয়েছে অনেকেই।
বিজেপি’র ভূমিকা ব্যাখ্যা করে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘নকল বিরোধী সেজেছে বিজেপি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কে? তিনিই তো মালদহে পঞ্চায়েতে ভোট লুট করিয়েছেন। তৃণমূলনেত্রীর হয়ে কাজ করেছিলেন।’’
তৃণমূল-বিজেপি সংযোগ প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘দিল্লিতে মোদীর লুট চলছে। পশ্চিমবঙ্গে চলছে দিদির লুট। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১০ টাকা। এখন হয়েছে ১২৩০ টাকা। ৪ গুন দাম বেড়েছে গ্যাসের। এক লিটার কেরোসিনের দাম এ রাজ্যে ছিল ১৪ টাকা। এখন ১০০ টাকা পার করে গিয়েছে। মোদী-মমতা একসঙ্গে দাম বাড়াচ্ছেন।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘কিসের না দাম বেড়েছে? পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে চড়চড়িয়ে। ওষুধের মারাত্মক দাম। খাবারের প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। কেনা সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্যে বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জি বড় থালায় লিখতেন ‘এত দাম খাব কী?’ এখন পিসি-ভাইপো বলছে, ‘এত টাকা রাখব কোথায়’।
ধর্মের নামে বিভাজনের বিপদ মনে করিয়েছেন সেলিম। ২০১৮’তে কাছের জেলা উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে দুই ছাত্র তাপস বর্মন ও রাজেশ সরকারের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। সেলিম বলেন, ‘‘বাংলা শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। দুই ছাত্রকে খুন করা হলো। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল আন্দোলন। বিজেপি-আরএসএস মাঝখানে ঢুকে পড়ে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করল। রাজ্যের সিআইডি আর কেন্দ্রের সিবিআই নামল। রাজেশ-তাপসের পরিবারকে গুজরাট নিয়ে যাওয়া হলো। প্রচার হলো। তদন্তে দোষীরা সাজা পেল না। বিজেপি’ও সাজা দেয়নি, তৃণমূলও দেয়নি।’’
একজোটে লড়াইয়ে গুরুত্ব দিতে সেলিম বলেন, ‘‘কিসে না টাকা খেয়েছে। আবাসে খেয়েছে, বার্ধক্যভাতায় খেয়েছে। ইমামভাতা, সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ, আদিবাসী হস্টেলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য টাকা, সর্বত্র দুর্নীতি। দুর্নীতির কারিগরদের ধরতে হবে। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হলেই ভাগ করতে নামছে বিজেপি। লড়াই একসঙ্গে মিলে করতে হবে।’’
Comments :0