Md Salim

ইডি, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি সেলিমের

কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জির কোম্পানি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশি নিয়ে তদন্তকারী এজেন্সি ইডি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দুই পক্ষেরই রাজ্যবাসীর কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সোমবার তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারে ১৮ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা নেই! যখন শিক্ষক নিয়োগ সহ অপরাধের টাকা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের মাধ্যমে পাচার হচ্ছিল, তখন উনি কী করছিলেন বলুন। আর ইডি জানাক, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের লোক যে কোম্পানিতে যুক্ত, সেখানে তল্লাশিতে কী পাওয়া গেল। কেন ইডি হেপাজতে নিয়ে জেরা করছে না মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোকে? কেন তাঁকে চুপিসারে বিদেশে গিয়ে টাকা রাখার বন্দোবস্ত করে আসতে দেওয়া হলো? 
এদিনই মুখ্যমন্ত্রী ইডি’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বলেছেন, ‘‘ছেলেটা দু’দিন হলো ফিরেছে, এর মধ্যেই এজেন্সি চলে এল। আমাদের বাড়িতে রোজ অত্যাচার করছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই খেদ প্রসঙ্গেই সেলিম বলেছেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মাসির গল্প উনি পড়েননি? যথাসময়ে সঠিক শিক্ষা না দিয়ে পিসি কী করছিলেন? আমরা যখন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা পাচারের কথা বলেছিলাম, তখন মানহানির নোটিস পাঠিয়েছিল। এখন ইডি তল্লাশি করছে ১৮ ঘণ্টা ধরে। বিদেশি বান্ধবীদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে কে গোরুপাচার থেকে শিক্ষক নিয়োগের টাকা পাচার করছেন, সবই যখন ইডি জানাতে পারছে, তখন হেপাজতে নিয়ে জেরা করছে না কেন? জেরায় ডাকার কথা শুনলেই ওঁদের প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে! চোর-দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত সরকারি টাকায় আইনজীবী বসিয়ে রাখছে? মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে সেটিং করতে পারেন, কিন্তু আমরা এই অপরাধচক্রের শেষ দেখতে চাই।’’ 
এই রাজ্যের যাবতীয় লুট ও দুর্নীতির সঙ্গে জনগণের জীবনজীবিকার দুর্দশা, জনগণের অধিকারের উপরে আক্রমণ ইত্যাদি যুক্ত হয়ে আছে বলে বামপন্থীরা দুর্নীতির অবসান এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির দাবিতে লড়াই জারি রাখবে বলে জানিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, আগামী ৩১ আগস্ট বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে খাদ্য আন্দোলন ও গণআন্দোলনের শহীদ দিবস পালন করা হবে কলকাতার ধর্মতলায়। চার দিক থেকে চারটি মিছিলের জমায়েত হবে সেখানে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই(এম)’র ৭ কর্মী সহ ৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সহ আরও অনেকে খুন হয়েছেন এই সময়কালে। সব শহীদকে স্মরণ করা হবে। র্যা।গিং থেকে রিগিংয়ের প্রতিবাদ হবে ৩১ আগস্টের সমাবেশে। ব্রিটিশ শাসনে ঔপনিবেশিক নীতির জন্য দুর্ভিক্ষে মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল, কমিউনিস্টরা লঙ্গরখানা খুলে ত্রাণে ঝাঁপিয়েছিল। পরে স্বাধীন ভারতে খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন হয় বামপন্থীদের নেতৃত্বে। কালোবাজারি বন্ধে গণবণ্টন, কৃষকের থেকে ন্যায্য মূলে ফসল সংগ্রহের দাবি তখন থেকে জানিয়ে আসছে বামপন্থীরা। খাদ্য সুরক্ষা শিকেয় তুলে কেন্দ্র আর রাজ্যের সরকার এখন সেসব বন্ধ করতে চাইছে। মানুষকে নিরন্ন রেখে আদানিদের মতো কোম্পানির হাতে চালকল তুলে দিতে চাইছে। মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। রাজ্যের মানুষকে কাজের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ মানুষ যাতে না করতে পারেন, তার জন্য শাসক দলের গুন্ডা-মস্তানরা আক্রমণ করছে, পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, পঞ্চায়েতের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দখলদারি কায়েম রাখতে ভোট লুট করেছে, এমনকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সব গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে মস্তানরাজ চালানো হচ্ছে। এই সব কিছুর প্রতিবাদ হবে ৩১ আগস্টের সমাবেশে। 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাদবপুরে ছাত্রখুনের ঘটনায় সিপিআই(এম) এবং এসএফআই-কে দায়ী করে যে মন্তব্য করেছেন, সেই সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, নিম্ন শ্রেণির মিথ্যাচার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনিই পুলিশমন্ত্রী। উনি বলুন, এখনও পর্যন্ত পুলিশ যে বারো জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে কে সিপিআই(এম) কিংবা এসএফআই কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী ভালোই জানেন, যাদবপুরে কারা মুখে গামছা বেঁধে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, কালেক্টিভ ইত্যাদি নামে এসএফআই এবং সিপিআই(এম)’র বিরোধিতা করে, তৃণমূল কাদের দিয়ে যাদবপুরে এবিভিপি-কে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। তাদের আড়াল করতেই মুখ্যমন্ত্রী নিম্ন শ্রেণির মিথ্যাচার করেছেন। আরএসএস’র ছক অনুযায়ী সংগঠিত বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনকে আক্রমণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি’র হয়ে যাদবপুরে হামলা করেছিলেন, সেই বাবুলকে তিনি মন্ত্রীসভায় নিয়েছেন। সারা দেশে জেএনইউ থেকে জামিয়া মিলিয়া, সর্বত্র এই ছকেই চলছে আরএসএস এবং বিজেপি। সেলিম বলেন, পুলিশের তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া যেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় প্রভাবিত না হয়। ছাত্রখুনে দোষীরা শাস্তি পাক। তৃণমূল এবং বিজেপি, রাজভবন এবং নবান্ন সবাই মিলে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা ভেঙে দিচ্ছে বলেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই, উচ্চশিক্ষা ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের লক্ষ্য সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে পাঠিয়ে বেসরকারি হাতে সব তুলে দেওয়া।
সেলিমের আরও অভিযোগ, অপরাধীদের বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী বারবার এই ধরনের মিথ্যাচার করেছেন। এর জন্যই কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ, বগটুই কোথাও অপরাধীরা শাস্তি পায়নি। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে ধর্ষিতার অভিযোগ না নিয়ে পুলিশ তাঁকেই বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে বলেছে। হাথরসের মতো ঘটনা ঘটছে এরাজ্যে। 
সেলিম বলেন, শুধু রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানেও র্যাৃগিং ঘটছে গণতান্ত্রিক পরিচালন ব্যবস্থা না থাকার কারণে। খড়্গপুর আইআইটি’তে আসামের ফয়জান আহমদ নামে এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তার মা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করিয়েছেন এবং তাতে খুনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ফয়জান আহমদের মা এবং পরিবারের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেনি তৃণমূল সরকার। উলটে তারা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত ঠেকাতে হাইকোর্টে পরিবারের আবেদনের বিরোধিতা করেছিল। 
উল্লেখ্য, আগামী ২৯ আগস্ট যাদবপুরে ‘স্বপ্ন খুন’-এর প্রতিবাদে সমাবেশ ডেকেছে এসএফআই। সেলিম নীলোৎপল বসু এবং সুজন চক্রবর্তী সহ আরও অনেক যাদবপুরের প্রাক্তনী ওই সমাবেশে অংশ নেবেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment