দুর্নীতির সাম্রাজ্য ভাঙতে সিবিআই-ইডি ব্যর্থ হলে জনতা ছেড়ে কথা বলবে না, দুর্নীতির মাথাদের বিচার হবে জনতার আদালতে। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় সিআইটিইউ’র একটি অনুষ্ঠানে গণআন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গ্রামে গ্রামে জনরোষের মুখে পড়ছেন "দিদির দূতরা"। মানুষের রোষানলে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে, কয়লা পাচার, গোরু পাচার, চালচুরি, তোলাবাজি, কাটমানি একটা দুর্নীতির সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছে, আমরা এই দুর্নীতির সাম্রাজ্যকে ভাঙতে চাইছি। গ্রামের মানুষ জাগছেন। আমরা বলেছি গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও। মানুষ চোরেদের তাড়াতে জোটবদ্ধ হচ্ছে। সততার প্রতীকের সাইনবোর্ডটা এখন ছিঁড়ে কুঁচিকুঁচি হয়ে গেছে। ইডি, সিবিআই যদি দুর্নীতির সর্বোচ্চ মাথাকে না ধরে, জনতার আদালতে এদের বিচার হবে।
সিআইটিইউ’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির কাঁচরাপাড়া পৌরাঞ্চলের উদ্যোগে এদিন জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভবন নির্মাণের জন্য অর্থপ্রদান করা হয়। কাঁচরাপাড়ার শেঠজি ভবনে এদিনের অনুষ্ঠানে এর জন্য মহম্মদ সেলিমের হাতে ছয় লক্ষ এক হাজার টাকা তুলে দেন সিআইটিইউ’র রাজ্য কমিটির সদস্য শম্ভু চ্যাটার্জি। তিনিই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় সেলিম বলেন, রাজ্যের মানুষ দেখছেন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করেও শিক্ষকতার চাকরি পাননি। দিনের পর দিন তাঁরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন। অথচ তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা টাকা নিয়ে সাদা খাতা জমা দেওয়া প্রার্থীদেরও শিক্ষক পদে নিয়োগ করেছে। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে রাজ্যটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলছে। শিক্ষামন্ত্রী থেকে শিক্ষা দপ্তরের মাথারা নিয়োগ দুর্নীতির জন্য জেল হাজতে। এটা রাজ্যের কলঙ্ক। এই দুর্নীতির আসল মাথাকে ধরতে হবে। কালীঘাটের মাথাকে না ধরলে এই দুর্নীতির আসল তথ্য সামনে আসবে না।
সেলিম বলেন, লুটের রাজত্ব কায়েম রাখতে, গণতন্ত্রের নিধনে তৃণমূল ও বিজেপি সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে। গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। গোটা দেশে দুর্নীতির পথে ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিজেপি’র ফান্ডে জমা পড়ছে। এরপর দ্বিতীয় হচ্ছে তৃণমূল দল, এরা গত বছরে পাঁচশো কোটি টাকা এই নির্বাচনী বন্ডের নামে পেয়েছে। দুর্নীতিতে দোসর তৃণমূল ও বিজেপি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস’র বিরুদ্ধে কোনও কথা বলে না। বিজেপি আর তৃণমূল মিলে মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে, প্রতিবাদীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই দুই অপশক্তিকে রুখতে বামপন্থীদের শক্তিশালী করতে হবে।
জ্যোতি বসুর অবদান স্মরণে রেখে আজকের লড়াইকে শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে সেলিম বলেন, সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, মানব কল্যাণে, শ্রমিক শ্রেণির লড়াই আন্দোলনে গোটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন জ্যোতি বসু। সম্প্রীতি, ঐক্য, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তিনি কঠোর ও অবিচল ছিলেন। ভূমিসংস্কার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রসারে তিনি অবদান রেখে গিয়েছেন। তাঁর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রকে পূর্ণ রূপ দিয়ে আগামী দিনের লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
সভায় গণআন্দোলনের নেতা এবং জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সম্পাদক রবীন দেব বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই জ্যোতি বসু রেলশ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাথুরাম গডসের হাতে গান্ধীজী খুন হলে জ্যোতি বসু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইতে তা আজও প্রাসঙ্গিক। এখন দেশ শাসন করছে সেই নাথুরাম গডসের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারীরা। সিআইটিইউ’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গার্গী চ্যাটার্জি বলেন, জ্যোতি বসু শ্রমজীবী মানুষের নেতা ছিলেন। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে তিনি সারাজীবন লড়াই আন্দোলন করে গেছেন। তাঁর নামাঙ্কিত সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে আমরা সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের কাছে যাবো, জেলায় আরও দুই জায়গায় অর্থসংগ্রহ করে তুলে দেওয়ার কর্মসূচি হবে।
Md Salim at kachrapara
দুর্নীতির মাথাদের বিচার হবে জনতার আদালতে, বললেন সেলিম

×
Comments :0