Md Salim meeting

ধর্মের ভাগাভাগি ঠেকিয়ে রুখতে হবে মোদী-মমতার লুট: সেলিম

রাজ্য

 তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলেই ভাগ করতে নামছে বিজেপি-আরএসএস। তাই দুর্নীতি থেকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে একসঙ্গেই। দিল্লিতে মোদীর লুট, রাজ্যে দিদির লুট চলছে। লড়াইকে ভেঙে দিতে হিন্দু-মুসলমান ভাগ করার চেষ্টা চলবে। সেই মতলব রুখতে হবে। ধর্মের ভাগাভাগি ঠেকিয়ে মোদী-মমতার লুট রুখতে হবে। সোমবার মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে ডিওয়াইএফআই’র সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন গণআন্দোলনের নেতা ও সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, দুর্নীতি আড়াল করতে চাইছে তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’পক্ষই। সেজন্যই নবান্নে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে অমিত শাহকে। 
ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে রবিবার হরিশচন্দ্রপুরে রাজ্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মশালা শুরু হয়েছিল। সোমবার দু’দিনের এই কর্মশালা শেষে হরিশচন্দ্রপুর বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় প্রকাশ্য সমাবেশ। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন যুবনেতা ও বর্তমানে গণআন্দোলনের নেতা আভাস রায়চৌধুরি, ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, জেলা সম্পাদক অরূপ পোদ্দার। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মোস্তাক আলম। 
সোমবার সমাবেশে মাঠ উপচে গিয়েছে জমায়েতে। স্লোগান তুলে মিছিলের পর মিছিল এসেছে সমাবেশে, হাতে ডিওয়াইএফআই’র ঝান্ডা নিয়ে সমাবেশে এসেছেন ব্যাপক সংখ্যায় যুবক-যুবতী, সাধারণ মানুষ। যদিও এই সমাবেশে গেলে মিলবে না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে, আগের দিন রাতে হরিশচন্দ্রপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এভাবেই শাসিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বামেদের কর্মসূচিতে গেলে আবাস যোজনার তালিকা সহ লক্ষীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রী প্রভৃতি প্রকল্প থেকে নাম কাটা যাবে, এই বলে ভয়ে দেখানো হয়েছে সবাইকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সুলতাননগর সাইরা গ্রামে সোমবার বিক্ষোভও দেখান বাম কর্মী-সমর্থকরা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ভয় পেয়ে এসব কাজ করছে তৃণমূল। বামপন্থী কর্মী আনসারুল হক বলেন, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের কর্মসূচিতে যেতে ভয় দেখাচ্ছে মানুষকে। আসলে ওরা জানে যে আমাদের নেতৃত্বের বক্তব্য শুনলে মানুষের কাছে ওদের ধাপ্পাবাজি প্রকাশ হয়ে যাবে। তাই মরিয়া হয়ে উঠেছে ওরা। কিন্তু এভাবে মানুষকে আটকানো যাবে না। যারা যাওয়ার তারা যাবেই।
এদিন সমাবেশে তৃণমূল-বিজেপি’কে লক্ষ্য করে মহম্মদ সেলিম বলেন, কে কত টাকা পেলে, আর কত টাকা খেলে, তার হিসেব দিতে হবে। চুপিচুপি হিসেব দিলে হবে না, গ্রামসভা ডেকে হিসেব দিতে হবে। নভেম্বর থেকে গ্রামে গ্রামে জনতার টাকার লুট রুখতে পদযাত্রায় ব্যাপক সংখ্যায় শামিল হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। মহম্মদ সেলিম এদিন সেকথা উল্লেখ করে বলেন, মানুষ হিসেব চাইছেন। রাতের অন্ধকারে পঞ্চায়েতে হিসেবের খাতায় কারচুপি করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ পার পাবে না। হিসেব দিতে হবে। তিনি মনে করিয়েছেন যে নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে গিয়েছে অনেকেই। 
বিজেপি’র ভূমিকা ব্যাখ্যা করে সেলিমের মন্তব্য, নকল বিরোধী সেজেছে বিজেপি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কে? তিনিই তো মালদহে পঞ্চায়েতে ভোট লুট করিয়েছেন। তৃণমূলনেত্রীর হয়ে কাজ করেছিলেন।
তৃণমূল-বিজেপি সংযোগ প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, দিল্লিতে মোদীর লুট চলছে। পশ্চিমবঙ্গে চলছে দিদির লুট। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১০ টাকা। এখন হয়েছে ১২৩০ টাকা। ৪ গুণ দাম বেড়েছে গ্যাসের। এক লিটার কেরোসিনের দাম এ রাজ্যে ছিল ১৪ টাকা। এখন ১০০ টাকা পার করে গিয়েছে। মোদী-মমতা একসঙ্গে দাম বাড়াচ্ছেন।’
সেলিম এদিন বলেন, কিসের না দাম বেড়েছে? পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে চড়চড়িয়ে। ওষুধের মারাত্মক দাম। খাবারের প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। কেনা সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্যে বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জি বড় থালায় লিখতেন ‘এত দাম খাব কী?’ এখন পিসি-ভাইপো বলছে, ‘এত টাকা রাখব কোথায়’।
ধর্মের নামে বিভাজনের বিপদ মনে করিয়ে দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। ২০১৮’তে কাছের জেলা উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে দুই ছাত্র তাপস বর্মন ও রাজেশ সরকারের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। সেলিম বলেন, বাংলা শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। দুই ছাত্রকে খুন করা হলো। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল আন্দোলন। বিজেপি-আরএসএস মাঝখানে ঢুকে পড়ে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করল। রাজ্যের সিআইডি আর কেন্দ্রের সিবিআই নামল। রাজেশ-তাপসের পরিবারকে গুজরাট নিয়ে যাওয়া হলো। প্রচার হলো। তদন্তে দোষীরা সাজা পেল না। বিজেপি’ও সাজা দেয়নি, তৃণমূলও দেয়নি। 
একজোটে লড়াইয়ে গুরুত্ব দিতে মহম্মদ সেলিম বলেন, কিসে না টাকা খেয়েছে। আবাসে খেয়েছে, বার্ধক্যভাতায় খেয়েছে। ইমামভাতা, সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ, আদিবাসী হস্টেলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টাকা, সর্বত্র দুর্নীতি। দুর্নীতির কারিগরদের ধরতে হবে। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হলেই ভাগ করতে নামছে বিজেপি। লড়াই একসঙ্গে মিলে করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯২৭ সালের ১৭ ও ১৯ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত শহীদ রাজেন্দ্র লাহিড়ী, রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, ঠাকুর রওশন সিং’র আত্মবলিদান  দিবস। এদিন এই ঘটনা স্মরণ করে ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ উপলক্ষে একটি পোস্টার সেটের উদ্বোধন করেন নেতৃবৃন্দ। যুব নেতৃবৃন্দ আগামীদিনে আরও ব্যাপক সংখ্যায় যুবদের আন্দোলন কর্মসূচিতে শামিল করার শপথ সমাবেশে ঘোষণা করেন।

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment