সাহসী রামমোহন
সাঁঝবাতি পাল
হ্যাঁ তার সাহস ছিল অদ্ভুত। খুব ছোটবেলায় তাকে কে যেন বলেছিল "কারও অনিষ্ট কোরো না, তুমি নিজে যা ভালো মনে করো তাই করে যাও। কারণ অন্যের অনিষ্ট করার মত পাপ আর নেই" একথা খুব মনে রেখেছিল সে। যেখানেই কিছু পছন্দ হত না তার,সে চিৎকার করে উঠত। শুধু তাই নয়,শেষ পর্যন্ত লড়ে যেত সেই বিষয়টি শুধরোতে।
লোকটার নাম রামমোহন, চেহারা ছিল বলিষ্ঠ। উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, মাথা অস্বাভাবিক বড়।শোনা যায় প্রতিদিন ১২ সের দুধ পান করত। একেবারে খেতে পারত একটি আস্ত পাঁঠার মাংস। এই লোক হঠাৎ শুরু করে ধর্মচর্চা। ব্যাস,শুনেই ক্ষেপে উঠলো ধর্মসচেতন মানুষরা। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হল। এই কথা কানে যেতে রামমোহন হেসে বললো- "আমাকে মারবে? কলকাতার লোক আমাকে মারবে? তারা কি খায়!"
এরকমই একবার, কলকাতাবাসীর ইচ্ছে হলো এখানে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা হোক। রামমোহন অস্থির হয়ে উঠলো। চিঠি লিখে আর্জি জানালো ...সংস্কৃত আয়ত্ত করতে সারাজীবনও যথেষ্ট নয়। এই বোঝা ছাত্ররা কি করে বইবে? তাছাড়া জীবনে পথ চলতে কাজে লাগবে এমন জ্ঞান দিতে ছাত্রদের গণিত,পদার্থবিদ্যা,শারীরবিদ্যা এরকম বিষয় শেখানো উচিত, সংস্কৃত নয়।
লোকজন বিভ্রান্ত! সংস্কৃত ভাষা বিশারদ রামমোহন নিজেই বারণ করছেন সংস্কৃত শিক্ষা দিতে! এই নিয়ে যখন অশান্তি তুঙ্গে, বিদ্যাসাগর সংস্কৃত শিক্ষালাভের সময়কে সীমিত করতে, এবং বিষয়টি সহজ করতে লিখলেন উপক্রমনিকা। অশান্তি থামলো। কে জানে..এরকম কিছুই হয়তো চেয়েছিলেন রামমোহন।
তবে এখানেই শেষ নয়...
অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হত বুড়ো জমিদারের সঙ্গে, কদিন পরে বুড়ো যেত মরে! অন্ধকার ঘনিয়ে আসতো বাচ্চা মেয়েটির কপালে। গ্রামের লোক,বুড়োর সঙ্গেই চিতায় জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতো তাকে। চিৎকার ঢাকতে বাজানো হত ঢাক-ঢোল। জোর করে বেঁধে,ভাঙ-সূরা খাইয়ে, বাঁশ দিয়ে মেরে অচেতন অবস্থায় চিতার আগুনে ছাই করে দেওয়া হত নিষ্পাপ মেয়েটির জীবন। মেয়ের দুর্বল বাপ-মা ছিল নিরুপায়। তাদের বোঝানো হত, এমন কাজ করলেই সতীর স্বর্গলাভ নিশ্চিত, নয়তো ঘোর অমঙ্গল। এই কথা শুধু বোঝানো যায়নি রামমোহনকে। রীতিমত আবার লড়াইয়ে নেমে পড়লো সে। শাস্ত্রবিচার করে দেখালো, কোথাও বলা নেই এই বিধান। এই পত্রিকায় লেখালিখি, ওই বই প্রকাশ, এখানে-সেখানে চিঠি পাঠিয়ে আর্জি, অবশেষে অনেক লড়াইয়ের পর জিতে গেল রামমোহন। পাশ হল সতীদাহ নিবারণ আইন।
এভাবেই লড়ে গিয়েছিল লোকটা। সারাজীবন সমাজ, প্রতিবেশী,আত্মীয় স্বজন সবার কাছে অত্যাচার সহ্য করেও লড়ে গেল শেষ পর্যন্ত।
কারণ?
মনে নেই ? কবিগুরু বলেছিলেন-
"মহাপুরুষ যখন আসেন, তখন বিরোধ নিয়েই আসেন, নইলে তার আসার কোনো সার্থকতা নেই।"
সাঁঝবাতি পাল
রানী বিনোদ মঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়
দ্বাদশ শ্রেণী
রঘুনাথপুর, ঝাড়গ্রাম
ফোন - ৮৬৩৭৩৫৬৯৯৭
Comments :0