NATUNPATA / MONDA MITHI / NEW FRIEND — RISIRAJ DAS — 13 JANUARY 2024

নতুনপাতা / মণ্ডা মিঠাই — বীরেশ্বর বিবেকানন্দ — ঋষিরাজ দাস / ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA  MONDA MITHI  NEW  FRIEND  RISIRAJ DAS  13 JANUARY 2024

নতুনপাতা  

মণ্ডা মিঠাই

বীরেশ্বর বিবেকানন্দ
ঋষিরাজ দাস
 

"জাগো জাগো দীর্ঘ রজনী প্রভাতপ্রায়। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। মহা ঢেউ উঠেছে।........ আর ভয় পেয়ো না, সবচেয়ে গুরুতর পাপ ----ভয়!"
                     -----  বিবেকানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও শিক্ষা মানুষের ইতিহাসে এক আশ্চর্য প্রকাশ।তিনি চিরকালের নবীন এবং সকলের আত্মীয়। কারণ তার যা সবচেয়ে নিগূঢ় পরিচয় ঈশ-প্রেম ও মানব প্রেম তা কোন কালে পুরনো হয় না। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের যখন আবির্ভাব ঘটল ,ভারত তখন সর্ববিষয়ে অবনত পরাধীনতার কলঙ্কে  কালিমালিপ্ত। জনসাধারণের ভবিষ্যৎ তখন অন্ধকারময়।ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রান্তে স্বামী বিবেকানন্দের কন্ঠের অমোঘ আহ্বানে ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে গিয়েছিল এবং দুঃস্বপ্নের সুদীর্ঘ রজনীর অবসান ঘটেছিল। ১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি পৌষ সংক্রান্তির সকালবেলায় সূর্য ওঠার ঠিক কয়েক মিনিট আগে বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবীর সংসারে কোল আলো করে যে নরেন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল,সে-ই কালক্রমে হয়ে উঠল সমগ্র বিশ্বের স্বামীজি। মানুষই স্বামীজির কাছে ভগবান। মানুষের মধ্যেই তিনি ভগবানকে খুঁজে পেয়েছেন। তাই মানুষের সেবাই তাঁর কাছে প্রকৃত ধর্ম।  কেবল জনসাধারন কে শিক্ষিত করা, তাদেরকে  উন্নত করাই জাতীয় জীবনের গঠনের পন্থা এ কথা তিনি প্রতি মুহূর্তে বলে গেছেন। তাঁর মতে, দরিদ্র লোকেরা যদি শিক্ষার নিকট পৌঁছাতে না পারে তবে শিক্ষাকেই চাষীর লাঙ্গলের কাছে, মজুরের কারখানায় এবং অন্যত্র সব স্থানে যেতে হবে। সন্ন্যাসীরা সাধারণতঃ জগতকে বর্জন করে । স্বামীজি ব্যতিক্রম, স্বামীজি জগতের মানুষকে আপন করে বরং তার মধ্যে থাকতে চেয়েছিলেন। তাঁর কাছে 'শিব জ্ঞানে জীব সেবা' প্রথম এবং শেষ কথা। কিন্তু সেই সেবা তিনি বাহ্যিক ফুল চন্দন দিয়ে করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন মানুষকে শিক্ষা দিয়ে মানুষকে মনোবল দিয়ে, মানুষকে অন্ধকার কুসংস্কারাচ্ছন্নতা থেকে, দুর্বল মনের ভীরুতা থেকে তুলে এনে তাকে প্রকৃত মানুষ করে তুলতে। বিবেকানন্দ মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন ধর্ম এমন একটি ভাব যা পশুকে মানুষে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে। তিনিই তো প্রথম আমাদেরকে 'অমৃতের পুত্র' বলে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু জীবনের চরম অভিজ্ঞতা দিয়ে বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন খালি পেটে ধর্ম হয় না। ভারতের সমুদয় দুর্দশার মূল কারণ, জনসাধারণের দারিদ্রতা। ধর্ম কর্ম করতে গেলে আগে কুর্মা দেবতার পূজা চাই ।পেট হচ্ছে সেই কুর্মা। একে আগে ঠান্ডা না করলে ধর্ম কর্মের কথা কেউ নেবে না তা তিনি খুব ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন হিন্দুদের ধর্ম ভাতের হাড়িতে ঢুকে আছে, কেবল ছুতমার্গের সমাজ দর্শন। তিনি তাঁর গুরু ভাইদেরকে পথনির্দেশ করে বলেছিলেন, আগে ভেতরের শক্তি জাগ্রত করে দেশের লোককে নিজের পায়ে দাঁড় করানো উচিত। উত্তম অশন- বসন,উত্তম ভোগ আগে করতে শেখানো উচিত। তারপর সকল প্রকার ভোগের বন্ধন থেকে কি করে মুক্ত হতে পারবে তা তাদের শিক্ষা দিতে হবে। প্রথমে অন্ন সংস্থান ও পরে ধর্ম লাভ করতে শেখানো উচিত।

নারীর মধ্যে বিবেকানন্দ দেবীকে দেখেছিলেন।মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার না হলে কিছুই হবার জো নেই তা তিনি অন্তর থেকে অনুভব করেছিলেন। নিজের সংসারে নিজের মা, খুড়িকে সমাজে অবহেলিত হতে দেখেছেন। সংসারের এক কোণে পড়ে থেকে তাদেরকে শুধু সংসারের  জোয়াল টানতে দেখেছেন। মেয়েদেরকে পুজো করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে যে জাতের মধ্যে মেয়েদের পুজো নেই সেই দেশ বা জাত কখনো বড় হতে পারেনি। তিনি একদা বলেছিলেন যে, আমাদের জাতের যে এত অধঃপতন ঘটেছে তার প্রধান কারণ এইসব শক্তি মূর্তির অবমাননা করা। তিনি বিশ্বাস করতেন যেখানে স্ত্রী লোকের আদর নেই,সম্মান নেই সে দেশের কখনো উন্নতির আশা নেই । এর জন্য আগে এদেরকে তুলতে হবে এবং নারীদের জন্য আদর্শ মঠ স্থাপন করারও তিনি চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন।

স্বাধীনতার আগুন বিবেকানন্দকেও স্পর্শ করেছিল। কিন্তু তাঁর স্বাধীনতা চিন্তা,ভারতকে গড়ে তোলার পদ্ধতি ছিল অন্য রকম। বিবেকানন্দ মনে করতেন, নির্বোধ যুবকগন ইংরেজ গণের থেকে অধিক ক্ষমতা লাভের জন্য যে সভা সমিতি ,বোম বাঁধা, গুপ্ত বৈঠক করে  তাতে ইংরেজরা হাসে। যে অপরকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়, সে কোন মতে স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্য নয়। তাই তিনি চেয়েছিলেন মানুষকে অধিক ধর্মনিষ্ঠ করে শিক্ষা দিয়ে পৌরহিত্যের পাপ দূরীভূত করে সমাজের নানা শ্রেণীর বৈষম্য দূর করে, গরিবকে খাবার দিয়ে তাকে সুযোগ দিয়ে আরো উন্নত মানব ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে। সেই ধর্ম দিয়েই তিনি সমাজের স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর সার্বভৌমিকতার চিন্তা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন,"ভুলিও না --নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।"

রবীন্দ্রনাথ বলতেন," যদি তুমি ভারতকে জানতে চাও, বিবেকানন্দ কে জানো। তার মধ্যে সবকিছুই ইতিবাচক, নেতিবাচক কিছু নেই।" তাই তাঁর ১৬১ তম জন্মতিথিতে তাঁর চরণে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই এবং আমাদের প্রতি তাঁর 'তোমরা বীর হও'-এই আশীর্বাদকে সত্য করে তোলার অঙ্গীকার করি।

সপ্তম শ্রেণী
কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ
খড়দহ, উত্তর চব্বিশ পরগনা
মজুমদার ভিলা, কল্যাণ নগর, খড়দহ, উত্তর চব্বিশ পরগনা
৮৫৮২৮৩৫৬৫৩

Comments :0

Login to leave a comment