Editorial

নতুন ‘থিম’ জলনগরী

সম্পাদকীয় বিভাগ

কলকাতা কর্পোরেশনের সর্বজ্ঞ মেয়র এবং অবশ্যই তৃণমূল সরকারের একমাত্র পোস্টওয়ালা প্রধান যে কতটা অযোগ্য, অপদার্থ, অপরিণামদর্শী এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন এক রাতের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেছে। এটাও প্রমাণ হয়ে গেছে এতদিন ধরে উন্নয়নের যেসব ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে এবং আত্মপ্রসাদলাভের যেসব গর্বিত ঘোষণা করা হয়েছে, সবটাই মিথ্যার নৈবেদ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। মননে যারা অসত্যের ফেরিওয়ালা, লুটতরাজের বেপরোয়া হিস্যাদার এবং ক্ষমতার কুৎসিত কাঙাল - তাদের দ্বারা আর যাই হোক সুশাসন হয় না, উন্নয়ন হয় না। তার জন্য প্রয়োজন নিঃস্বার্থ জনসেবার একটি দরদি মন, ব্যক্তি-পরিবার, দলের ঊর্ধ্বে মানুষের জন্য সৃষ্টির নির্মাণে উল্লাসে মেতে ওঠার মতো জাগ্রত রাজনৈতিক চেতনা। এর কোনোটারও ছিটেফোঁটা এদের মধ্যে নেই। ফল যা হবার তাই হয়েছে। আগামীদিনে আরও ভয়ঙ্কর কিছু হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। এবার অন্তত কলকাতা তথা রাজ্যের মানুষ কায়মনোবাক্যে এটা বলা শুরু করুন, এ আপদ বিদেয় হলে বাঁচি।
হাফপ্যান্ট আর টি শার্ট পরে সাজানো বাইট দিয়ে দায়মুক্ত হওয়া যায় না। তেমনি অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়েও নিজের অপদার্থতা আড়াল করা যায় না। অযোগ্যতা ও অপদার্থতা এতটাই মাত্রাতিরিক্ত যে এরা বুঝে উঠতেই পারছে না কী হলো, কেন হলো, কীভাবে হলো। তাই সকাল থেকে অনর্গল আবোলতাবোল প্রলাপ বকে গেছে। এ ওর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নি‍‌জেকে বাঁচাতে চাইছে। একজনকে অন্যজনকে বলির পাঁঠা বানিয়ে আত্মরক্ষার পথ খুঁজছে। কলকাতা যে লন্ডন পেরিয়ে ইতিমধ্যে ভেনিস হয়ে গেছে সেটা বোঝার ফুরসতই মিলছে না। একজন আবার আবিষ্কার করেছেন, গঙ্গার জল বেড়ে গেছে তাই কলকাতা ভাসছে। আর একজন বলছেন, সব দায় সিইএসসি’র। তাদের বিদ্যুতেই পৃষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত দশ জন সহনাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সত্যিই এদের উর্বর মস্তিষ্কের প্রখর বুদ্ধির তারিফ করতে হয়! কিন্তু বলা হলো না দলের তহবিলে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছিল এই বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছ থেকে। সেই টাকা সুদে আসলে ফেরত পেতে হলে উন্নত ও সুরক্ষিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ফাঁকি তো দিতেই হবে। মেয়র মশাই জীবনে প্রথম আবিষ্কার করলেন গঙ্গার জল বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা।
কিছুকাল আগে মুখ্যমন্ত্রী সগর্বে ও সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা নিকাশি ব্যবস্থার ভোল পালটে দিয়েছেন। বাম আমলে একটু বৃষ্টি হলেই সর্বত্র জল জমে যেত। এখন ৯৯ শতাংশ কাজ সেরে ফেলেছি। দু’-একটা ওয়ার্ডে যেটুকু কাজ বাকি, সেটাও হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর সংস্কারের প্রকল্পে ড্রেন পরিষ্কার হয়েছিল না বোজানো হয়েছিল, তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না! মেয়র নিশ্চয় জানেন কলকাতার জল পশ্চিমে গঙ্গায় পড়ে না, পূর্বদিকে যায়। যে পথ দিয়ে যায় সেই নালা, খাল, জলাশয় বেশিরভাগই ভরাট করে প্রোমেটারের ব্যবসা হচ্ছে আর নেতাদের পকেট ভারী হচ্ছে। আগে বৃষ্টির জলের একটা বড় অংশ পুকুর, জলাশয়, খানা, ডোবা, নিচু জমি ধারণ করত। বাকিটা নর্দমা, খাল দিয়ে বয়ে চলে যেত। এখন সেসব লুট হয়ে গেছে। জল ধারণের ও বয়ে যাবার পথ নেই। নিকাশি প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা কোথায় কীভাবে হাপিস হয়ে গেছে কেউ জানে না! অতএব এমনটা তো হবারই ছিল। ত্রিফলায় ভাইপোর ব্যবসায় মুনাফা করে কিন্তু জল সরার রাস্তা প্রশস্ত হয় না। কলকাতার উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ৭৫/২৫ শতাংশে ভাগ হয়ে যায়, তাহলে বৃষ্টির জল ড্রেনের বদলে রাস্তা দিয়ে বাইরে অথবা গোটা কলকাতাকেই জলনগরীর রূপ দেবে। এবার পুজোয় মেয়র-মুখ্যমন্ত্রী জুটির এটাও সম্ভবত নতুন থিম!

Comments :0

Login to leave a comment