জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। তার মধ্যেও কোনোরকমে নিজেকে টিকিয়ে রাখছে নিম্ন আর মধ্যবিত্ত মানুষ। এই আগুন বাজারে নিত্যদিনের পুষ্টির কথা ভাবাও বিলাসিতা। সেখানে মিড-ডে মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথাপিছু নামমাত্র বরাদ্দ বাড়ালো কেন্দ্রীয় সরকার। ‘পিএম পোষণ’ প্রকল্পে ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলেছে এই নতুন ধার্য মূল্যে।
বুধবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন পিএম পোষণ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের দরুন মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মাথাপিছু ৯ টাকা ২৯ পয়সা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বরে পূর্বের তুলনায় বরাদ্দ সামান্য বাড়ানো হয়েছিল। আগে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৮ টাকা ১৭ পয়সা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে জিনিসপত্রের এত দাম, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি কি পাবে? কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতি অনুসারে সাধারণভাবে জম্মু-কাশ্মীর সহ কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলি (দিল্লি ও পুদুচেরি ছাড়া) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বাদে সব রাজ্যকেই এই অর্থের ৪০ভাগ দিতে হয়। বাকি ৬০ভাগ টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান হিসাবে সে রাজ্য পেয়ে থাকে।
বুধবার নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি (এবিটিএ)’র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন এই প্রসঙ্গে বলেন, "এই মূল্য কোনোভাবেই যথাযথ নয়। বাজার অনুযায়ী প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম পর্যন্ত মাথাপিছু অন্তত ১০ টাকা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত মাথাপিছু অন্তত ১৫ টাকা করা উচিত।" তিনি আরও বলেছেন, যে এমন অনেক প্রাথমিক স্কুল আছে, যেখানে মাত্র হাতে গোনা পড়ুয়া, সেখানে ১০ টাকাও যথেষ্ট হবে না। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করতে হয়। তাই সরকারকে এদিকটায় বিশেষ নজর দিতে হবে এবং এমন স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সংগঠনের দাবি, বিষয়গুলি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করুক সরকার এবং বরাদ্দ বাড়ানো হোক।
এরই মাঝে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়ে। গত ১৩ বছর ধরে শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল অন্যান্য ব্যবস্থারও যা অবনতি ঘটিয়েছে এই সরকার, তাই এই ঘোষণার পর যে শাসক দলের নেতাদের পকেট আরো ভারীই হবে। এমনই মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। তাঁর কথায়, "যখন এই বরাদ্দ ৪-৫ টাকার মধ্যে ছিল, তখন রাজ্যে দিকে দিকে মিড-ডে মিলের টাকা চুরি, চাল চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এখন টাকা বাড়ছে, ফলে খাবারের মান কতটা উন্নত হবে বলতে পারছি না, কিন্তু ওদের ‘উন্নয়ন’ হবেই।" বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে তিনিও জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির কম সংখ্যক পড়ুয়ার সমস্যার কথা। যে সকল বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা অত্যন্ত কম, সেখানে মাথাপিছু ১৫টাকা করা হলে সমস্যা কিছুটা কম হবে বলে তাঁর মত।
তবে বাজার মূল্য বিবেচনা করে প্রতি বছর মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন, এএসএফএইচএম। তাঁদের বক্তব্য, "গত কয়েক বছর ধরে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়েনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আকাশছোঁয়া হয়েছে। সে তুলনায় বরাদ্দ বৃদ্ধি অতি নগণ্য।" প্রশ্ন, বর্তমান বাজারে একটি কাঁচা ডিমের মূল্য ৭টাকার কাছাকাছি। সপ্তাহে অন্তত একটি গোটা ডিম ছাত্র-ছাত্রীদের মিড-ডে মিলে দেওয়ার কথা। ৬ টাকা ১৯ পয়সা দিয়ে কিভাবে পুষ্টিকর খাদ্য জোগান দেওয়া যায়? তাঁদের দাবি, অল ইন্ডিয়া প্রাইস ইনডেক্স (এআইপিআই) অনুযায়ী প্রতিবছর মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে মিড-ডে মিল পরিচালনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
Nominal allocation increased in mid-day meal
নামমাত্র বরাদ্দ বাড়ল মিড-ডে মিলে, চড়া বাজারকে মোকাবিলা কোন পথে?
×
Comments :0