farmers selling unripe potatoes

অপরিণত আলু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন সীমান্তের কৃষক

রাজ্য

সার, বীজের দাম বাড়লেও চাষের খরচ কমেছে, বলছে রাজ্য

দশ টাকাতেই অপরিণত আলু বেচে দিচ্ছেন কৃষক, বাজারে সেটাই কেজি প্রতি ২২-২৫

চাষের কাজে দরকারি কোনও কিছুরই দাম কমেনি। তবু মমতা ব্যানার্জির সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বছর আলু চাষের খরচ কমেছে। কমেছে গত বছরের তুলনায়। কমেছে গত তিন বছরের তুলনায়।
আলু চাষ এখনও শেষ হয়নি। সিঙ্গুরের আলুচাষি সুশান্ত সাঁতরার কথায়, ‘‘এখনও আলু তোলার আগে কাজ বাকি আছে। ফলে আরও কিছু খরচ বাকি। এখনই বলা যাবে না মোট কত খরচ হলো।’’ আগের বছরের থেকে কম হতে পারে? সুশান্ত সাঁতরার কথায়, ‘‘চাষের খরচ আবার কমলো কবে? সারের দাম, ওষুধের দাম, জন(লেবার)-র দাম, সবেরই খরচ বেড়েছে। ফলে গতবারের থেকে খরচ বেশিই হবে।’’
কিন্তু তৃণমূলের সরকার তা মনে করছে না। প্রতি বছর আলু চাষের আগে সরকার রাজ্যে শাখা আছে এমন ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কুইন্টাল পিছু আলু চাষের খরচ নির্ধারণ করে। যা মূলত কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে কিংবা চাষের জন্য কৃষকের ঋণের পরিমাণ ঠিক করায় কাজে লাগে। ‘‘চাষের আগে এবং চাষের পরের বিভিন্ন উপাদানের অবস্থা বিবেচনা করে এই দাম ঠিক হয়’’, এমনই জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক। রাজ্যে শাখা আছে এমন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘এবারও দশটি জেলায় চাষের অবস্থা বিশ্লেষণ করে আলুর কুইন্টাল পিছু চাষের খরচ এবং মজুত রাখার খরচ ঠিক করা হয়েছে।’’ যে দশটি জেলায় অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই জেলাগুলি হলো কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, হুগলী, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম। এছাড়া রাজ্যের আরও কিছু জেলায় আলু চাষ হয়।
কত দাম ঠিক হয়েছে? 
রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ’বছর প্রতি কুইন্টালে আলু চাষে খরচ হবে ৫৮৯টাকা। এছাড়া আলু হিমঘরে মজুত রাখার খরচ হবে প্রতি কুইন্টালে ৩০৩টাকা। অর্থাৎ চাষ এবং মজুত, এই দুই খাতে এক কুইন্টাল আলুর জন্য কৃষকের খরচ হবে ৮৯২টাকা। গত বছর তা ছিল ৯০৯ টাকা। 
অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে কৃষকের খরচ কমে গেছে ১৭টাকা!
রাজ্য সরকারের হিসাবে দেখা যাচ্ছে তারা মনে করছে আলু মজুত রাখার খরচ কিছু বেড়েছে। কিন্তু আলু চাষের খরচ কমছে এবং তা লাগাতার। অর্থাৎ জমি তৈরি করা, বীজ, বিভিন্ন রকমের সার, ওষুধ অর্থাৎ রাসায়নিক, ফসল পাহারা দেওয়া, খেতমজুরদের মজুরি, সেচের খরচ, এই সবেরই খরচ কমেছে রাজ্যে। তা লাগাতারই কমছে। কী করে এই কথা বলছেন. প্রশ্ন করেছেন পালটা, হুগলীর এক তৃণমূলী বিধায়ক। নাম তিনি প্রকাশ করতে চান না। তবু তাঁকে তাঁরই সরকারের চার বছরের হিসাব জানানো হয়েছে। 
সেই হিসাব বলছে, ২০২২ সালে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আলু চাষে খরচ হবে ৬৩৭টাকা। ২০২৩ সালে ঠিক হয়েছিল ৬১২টাকা। ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে হয় ৬২৬টাকা। আর এই বছর তা নেমে এসেছে ৫৮৯ টাকায়। অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে ২০২৫-এ আলু চাষের খরচ কুইন্টাল পিছু ৪৮টাকা কমছে বলে তৃণমূলের সরকার মনে করছে।
সরকারের এই মনে হওয়ার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই বলেই কৃষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশের সীমান্তের একটি ব্লক কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ। কোচবিহারের যে চারটি ব্লকে আলু চাষ হয়, তার একটি মেখলিগঞ্জ। সেই ব্লকের কৃষক জানাচ্ছেন, ‘‘আলু পুষ্ট হওয়ার অপেক্ষা করছি না। ৫০-৫২ দিন হলে এখনই আলু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি। কেজিতে ১০-১১টাকা পাচ্ছি।’’ কেন? সেই কৃষকের কথায়, ‘‘৭০ দিন হওয়ার পর আলু যখন তুলব, তখন যদি দাম না পাই? দাম পাবো, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।’’ লাভ থাকছে কত? কৃষকের কথায়, ‘‘এক কুইন্টালে লাভ থাকছে শ’খানেক টাকা। তবে মজুরির দাম উঠছে না।’’
তবে যে সরকার বলছে চাষের খরচ কমেছে? ‘‘সার, বীজ কিনেছি কালোবাজারে, আগের বছরের থেকে বেশি দামে। খরচ কী ভাবে কমবে?’’ জবাব স্পষ্ট।
পুনশ্চ! বুধবার মফস্বলের বাজারে খুচরো আলুর দাম ঘোরাফেরা করেছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। কলকাতার কোনও কোনও বাজারে তাই কেজিতে ২৮টাকা ছুঁয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment