Post Editorial Coordination Committee

সজীব কর্মতৎপরতার মধ্যেই কোঅর্ডিনেশন কমিটি

সম্পাদকীয় বিভাগ

Post Editorial Coordination Committee


আগামী ২৪-২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মচারী সমিতিসমূহের রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিংশতিতম রাজ্য সম্মেলন। যে কোনও সংগ্রামী সংগঠনের কাছে রাজ্য বা যে কোনও স্তরের সম্মেলনই কোনও আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়। শুধুমাত্র নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্যই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, তাও নয়। 

 

কোনও একটি সম্মেলনের অন্তর্বস্তুর সিংহভাগ জুড়ে থাকে পূর্ববর্তী সম্মেলনের পরবর্তী পর্বে সংগঠন-আন্দোলন সম্পর্কে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের যথার্থতা এবং তা রূপায়ণের সাফল্য ও অসাফল্যের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন। আবার সাংগঠনিক কার্যকলাপ বা আন্দোলন-সংগ্রাম— কোনোটিই যেহেতু পরিস্থিতি নিরপেক্ষ নয়, বরং পরিস্থিতির সাথে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে আবদ্ধ, তাই পরিস্থিতি সম্পর্কিত আলোচনাও, সম্মেলনের অন্তর্বস্তুর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই আলোচনাও নিছক কোনও ‘অ্যাকাডেমিক’ আলোচনা নয়। কোনও একসময়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি (সারা দুনিয়া, নিজ দেশে এবং রাজ্যে) সর্বদাই বহু ইতিবাচক ও নেতিবাচক উপাদানের সমাহার। কখনও নেতিবাচক উপাদানগুলি প্রাধান্য বিস্তার করে, আবার কখনও ইতিবাচক উপাদানগুলি প্রাধান্য বিস্তারের জায়গায় চলে আসে। 

বলাবাহুল্য পরিস্থিতির অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল উপাদানগুলিকে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ-সাপেক্ষে ইতিবাচক বা নেতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। স্বভাবতই ‘নেতি’কে মোকাবিলা করে ‘ইতি’কে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই সম্মেলন মঞ্চ থেকে গৃহীত হয় আগামীদিনের কর্মসূচি। ১৯৬২ সালে কলকাতার ত্যাগরাজ হলে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলন থেকে এপর্যন্ত রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি এইভাবেই এগিয়েছে।


পরিস্থিতি উপযোগী সাংগঠনিক কার্যক্রম গ্রহণ ও সংগ্রাম আন্দোলন পরিচালনার দক্ষতা এবং সম্মেলন মঞ্চগুলিকে সংগঠন-আন্দোলন পুনর্নবীকরণের কাজে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারার ফলেই সংগঠন কখনও গতিরুদ্ধ হয়ে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়নি। বিশতম রাজ্য সম্মেলন যা জলপাইগুড়ি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে, পূর্বের উনিশটি সম্মেলনের মতই উল্লিখিত মাপকাঠিগুলির নিরিখে সাফল্যের শীর্ষে উন্নীত হবে এই বিশ্বাস সংগঠনের সর্বস্তরে রয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলায় এবারই প্রথম রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে। এর আগে কলকাতা সহ অন্যান্য জেলায় রাজ্য সম্মেলনগুলি হলেও, জলপাইগুড়ি জেলার সংগঠন এই গুরুদায়িত্ব আগে কখনও পায়নি।

 

 

 তাই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতেই, প্রবল উদ্যম ও উদ্দীপনায় শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই এই সম্মেলনের বার্তা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের এই সংগঠনের গঠনকাল থেকেই ঘোষণা ছিল— ‘‘আমরা কারও গোলাম নই, জনগণের সেবক’’। এই ঘোষণার বার বার প্রমাণিত হয়েছে খরা, বন্যা সহ বিভিন্ন দুর্যোগ মহামারীকালে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে। সাম্প্রতিক অতীতে করোনা মহামারীর সময়ে দুঃস্থ, জীবিকাহীন মানুষদের মধ্যে খাদ্যবণ্টন, বনবস্তী ও দুর্বল আয়ের মানুষদের মধ্যে কম্বল সহ শীতবস্ত্র বণ্টন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত করা, অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের কাজ করেছে সংগঠন। একই সাথে, সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের সুরক্ষিত রাখা ও তাদের কর্মস্থলে পৌঁছানোর যানবাহনের ব্যবস্থা ইত্যাদির জন্য বার বার জেলা প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎকার করা হয়েছে। মানুষের প্রয়োজনের সময়ে উপযুক্ত ভূমিকা পালনের অতীত ঐতিহ্য পরম্পরাকে মাথায় রেখেই সম্মেলনের বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেবার প্রচার প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হ‍‌য়েছে। 


নয়া উদারবাদী অর্থনীতির অভিঘাত সারা দেশের সাথে সাথে আমাদের জেলাতেও এসে পড়েছে। চা বলয়, কৃষি বলয় সহ অপরাপর অংশের মিশ্র সংস্কৃতির মানুষদের বসবাস আমাদের জেলায়। তাদের জীবনেও প্রভাব ফেলেছে নয়া উদারবাদী অর্থনীতি। দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনের সামাজিক বোঝাপড়া, সম্প্রীতি-ঐক্য। অনগ্রসরতা মূল কারণ যে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, এই সত্য চাপা দেওয়া একান্ত জরুরি শাসকের কাছে। ফলে, দিশাহারা মানুষ একান্ত নিজস্ব পৃথক রাজ্যের তত্ত্বে বিভ্রান্ত হচ্ছে। অনুদান নয়, চাই স্থায়ী সম্মানজনক জীবিকা, দশককালের ক্লেদ ঝেড়ে ফেলে মুখরিত হোক শিক্ষাঙ্গন। কৃষিসহ সমস্ত পেশার মানুষের রোজগার নিশ্চিত হোক, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও প্রসারিত হোক গণতন্ত্র ও সম্প্রীতি— এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিপালিত হচ্ছে একগুচ্ছ কর্মসূচি।


গত ১৫ মে, ২০২২ স্থানীয় জেলা পরিষদ হলে অভ্যর্থনা কমিটি গঠিত হবার পর ৮ জুলাই, ২০২২ জননেতা কমরেড জ্যোতি বসু’র জন্মদিনে রক্তদানের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রচার প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি পর্বের সূচনা ঘটে।
৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় কলাবাড়ি চা বাগান, তোদেগাঁও (মাল) সহ ৫টি প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হয় যেখানে কোনও প্রকার স্বাস্থ্য পরিষেবা একান্তই অমিল। একই সাথে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গাডরা গ্রামসহ ৩টি স্থানে পশু চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়। শারোদৎসবের দিনগুলিতে জনবহুল স্থানে বিভিন্ন সময়ে ৮ দিন ব্যাপী হেলথ স্টল এবং মাল ও জলপাইগুড়িতে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা শিবিরের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ২ দিনে ৪টি ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে প্রথিতযশা মনোবিদ, চিকিৎসক, ঐতিহাসিক ও অধ্যাপকদের আলোচনা সমৃদ্ধ মননশীল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার জনবিন্যাসের কথা মাথায় রেখে ধূপগুড়ি শহরে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে লোকসঙ্গীতের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্কুল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের যুক্ত করে দু’টি পৃথক বয়সভিত্তিক গ্রুপে নির্ধারিত বিষয়বস্তু কেন্দ্র করে অঙ্কন প্রতিযোগিতার চারশতাধিক ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতার ৭৫ ও সংবিধানের উপরে আধারিত স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়স্তর পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আয়োজিত কুইজ প্রতিযোগিতা দু’টি আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রী ও অনুসন্ধিৎসু মানুষদের দ্বারা প্রাকাশিত হয়েছে।

 


এছাড়া, জেলার চা শ্রমিকদের জ্বলন্ত দাবিসহ কৃষক-ছাত্র-যুবদের দাবিগুলিকে নিয়ে গ্রামাঞ্চল চা বলয়কে যুক্ত করে ২০তম সম্মেলনের বার্তা সর্বত্র নিবিড়ভাবে পৌঁছে দেবার লক্ষ্য নিয়ে প্রত্যেকটি ব্লক এলাকায় ও শহরে ৫টি বাইক‌র্যা লি, ৪টি ম্যারাথন দৌড় (১টি মহিলাদের সহ), ২টি পদযাত্রা সংগঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচির ক্ষেত্রে জেলার গণআন্দোলনের কর্মী নেতৃত্ব এবং সাধারণ জনগণ অকুণ্ঠ সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে জেলা শহরের সর্বত্র লাল পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার, তোরণে সমগ্র জলপাইগুড়ি (প্রয়াত তরুণ মজুমদার নগর) সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে। সম্মেলন প্রাঙ্গণে থাকছে বুকস্টল, চিত্র প্রদর্শনী (তেভাগার ৭৫বর্ষ ও প্রয়াত সত্যজিৎ রায়কে কেন্দ্র করে) ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চ। অর্থাৎ সম্মেলনের অন্তর্বস্তুতে যেমন থাকবে সংগঠনকে শক্তিশালী করা, আন্দোলনকে বেগবান করা, ঐক্যকে সুদৃঢ় করা এবং চেতনাকে শাণিত করার প্রসঙ্গ, তেমনই প্রস্তুতি ও প্রচারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বহিরঙ্গের কেন্দ্রে রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিপালনের তাগিদ।
গত কয়েকমাস ধরে রাজ্য সম্মেলন কেন্দ্রিক বহুমাত্রিক কর্মসূচি ঐ জেলার অপরাপর অংশের মানুষকেও ইতেমধ্যেই আলোড়িত করেছে। ফলে এক সফল সম্মেলনের মঞ্চ কার্যত প্রস্তুত।
 

Comments :0

Login to leave a comment