Post editorial DA

মরজি নয়, অধিকারই মহার্ঘ

সম্পাদকীয় বিভাগ

Post editorial DA


পার্থপ্রতিম বিশ্বাস 


চিরকূটের সাথে বাঙালির পরিচয় শৈশবে শরৎচন্দ্রের ‘মেজদা’ গল্পের সাথে। সাঁঝ বেলায় তেষ্টা পাওয়া থেকে থুথু ফেলার আরজি জানানোর জন্য কয়েক বার ম্যাট্রিক ফেল করা মেজদার চেম্বারে তৈরি থাকতো বিভিন্ন চিরকূট। সেই ‘শ্রীকান্তের’ স্রষ্টা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাঙালি এখন খাবি খেতে খেতে আবর্তিত হচ্ছে ‘অপার’ স্রষ্টা জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে! ফলে বার বার ফেল করা মেজদার মতো ফেল করা আর্থিক শৃঙ্খলার নেতা মন্ত্রীদের হাতে চিরকূটের বিবর্তন বাঙালি সাঁঝবেলায় নয়, বরং মাঝ বেলায় দেখছে বিধানসভার ভেতরে। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিরকূট ক্রীড়া মন্ত্রী বয়ে নিয়ে গিয়ে অর্থ মন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর বিদ্যুৎ চমকানোর মতো অর্থ মন্ত্রী চিরকূট দেখে সটান সভা মঞ্চে ঘোষণা করলেন রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির সংবাদ।  এ রাজ্যে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিতর্কের জল উত্তরোত্তর  ঘোলা হয়েছে সরকারের ভুমিকায় যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বকেয়া ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ‘ঘেউ ঘেউ’ ডাকের সাথে তুলনা শুরু করেছিলেন। ফলে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবি রাজ্যে মহার্ঘ হয়ে উঠছিল গত কয়েক বছর ধরেই। এই প্রেক্ষিতে কুচো ফুল ছেটানোর মতো চিরকূট বার্তায় মহার্ঘ ভাতা ঘোষণায় এই ভাতা বিতর্কের জল যে আরও ঘোলা হবে তাতে সন্দেহের অবকাশ রইলো না। 


দয়ার দান নয়, অধিকার 
রাজ্যে চলমান মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক কেবল বকেয়া ভাতা পরিশোধের পরিধিতে আবদ্ধ নেই। বরং সেই বিতর্কের পরিধিতে ঢুকে পড়েছে এই মহার্ঘ ভাতা পাওয়া কর্মীদের অধিকার নাকি সরকারের বদান্যতায় পাওয়া এক সুযোগ, এই প্রশ্ন। আর এই প্রশ্ন জনস্বার্থে তোলা রাম-শ্যাম-যদু-মধুদের প্রশ্ন নয় বরং সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কর্মীদের নিয়োগ কর্তা খোদ রাজ্যের সরকার। ফলে আবহমান কাল থেকে চলে আসা সরকারি কর্মীদের এই মহার্ঘ ভাতা তাঁদের বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ কিনা সেই নিয়েই মৌলিক প্রশ্ন তুলে বিতর্ক বাড়িয়েছে  রাজ্যের সরকার। 


রাজ্য সরকারের আওতাধীন কর্মীদের আইন মেনে নিয়োগ হয় সংবিধান প্রদত্ত সরকারি দায় পালনের জন্য। রাজ্যের ক্ষমতায় আসীন নির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক চরিত্র পর্যায়ে পর্যায়ে বদল হলেও সরকারের সাংবিধানিক দায় দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট। যত দিন রাজ্যে সরকার চলে ততো দিন সেই সরকারের যাবতীয় প্রকল্প রূপায়ণের কারিগর হয়ে ওঠেন এই সরকারি কর্মীরাই। ফলে সেই কর্মীদের বেতন কাঠামোর ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং সমতা রক্ষার প্রাথমিক দায় রাজ্যের নির্বাচিত সরকারেরই।  মহার্ঘ ভাতা যেটি স্থির হয় মুল বেতনের অংশ হিসাবে এবং বাজার দরের চড়াই উৎরাই সামাল দিতে সেটির ক্ষেত্রে দেশজুড়ে একটা সঙ্গতি থাকা কাঙ্ক্ষিত। কারণ খোলা বাজারে জিনিসপত্রের দামের ওঠা পড়া রাজ্যভিত্তিক নয় বরং দেশজুড়েই ঘটে অভিন্ন অর্থনীতির কারণে। কেন্দ্রীয় সরকার তার কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে খোলা বাজারের মুল্য সুচককে ভিত্তি করে। আর সেই কেন্দ্রীয় ভাতার হারকে অনুসরণ করে দেশের অঙ্গরাজ্যের বাকি সরকারগুলি। সন্দেহ নেই, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সমান নয়। ফলে অসমান আর্থিক সঙ্গতির কারণে অনেক সময় রাজ্যের সাথে কেন্দ্রের মহার্ঘ ভাতার ফারাক ঘটে যায়। ফলে সেক্ষেত্রে জমতে পারে বকেয়া ভাতার পরিমাণ। কিন্তু রাজ্যের সরকার স্বয়ং যদি তার কর্মীদের এমন ভাতা দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হয় তখন কর্মীদের বিপদের মাত্রা বাড়ে বই কমে না। ইতিমধ্যে রাজ্যের সরকার ‘স্যাট’ থেকে হাইকোর্ট সর্বত্র কর্মীদের মহার্ঘ ভাতাকে অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সরকারের মরজি নির্ভর অনুদানের তালিকায় ঢোকাতে তৎপর হয়ে ব্যর্থ হয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সরকারি ভাবনায় দুর্গাপূজায় পূজা কমিটিকে,  কিংবা পাড়ার ক্লাবগুলিতে সরকার যেমন মরজি হলে মাঝে মাঝে অনুদান দেয়, ঠিক তেমনটাই ভেবেছে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রেও। কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্তির অধিকারকে  চ্যালেঞ্জ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার বেনজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশের অঙ্গরাজ্যের কোনও সরকার এই প্রথম। ফলে সরকারের এমন পদক্ষেপেই স্পষ্ট কর্মী স্বার্থ  বিরোধী সরকারি নীতির অভিমুখ। ফলে বোঝা যাচ্ছে  মহার্ঘ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের অর্থাভাব  নয় বরং অনেক বেশি দায়ী সরকারের সদিচ্ছার  অভাব।  আজ শুধু মহার্ঘ ভাতা নয়, রাজ্যের সরকার এমন বহু অর্জিত অধিকারকে এখন সুযোগের তালিকায় ঢোকাতে চাইছে আর্থিক সঙ্কটকে ঢাল বানিয়ে।  
মাসোহারা নয়, মাস মাইনে 
সময়ের মহার্ঘ ভাতা ঠিক সময়ে দিতে না পারাটা নিঃসন্দেহে সরকারের আর্থিক ব্যর্থতা। উপর্যুপরি এমন আর্থিক বিশৃঙ্খলায় সরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের জীবন জেরবার হবে এতেও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ভাতা বিতর্কের জের কেবল মহার্ঘ ভাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বেতনের সাথে যুক্ত অন্যান্য ভাতায় সংক্রমিত হলে সেই বিপদ ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে যার সম্ভাবনা এ রাজ্যে অমুলক নয়। ফলে সেক্ষেত্রে বেতনের সাথে যুক্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা, কিংবা চিকিৎসা ভাতার মতো যাবতীয় ভাতাকেই সরকারি দয়ার দান  হিসাবে চালিয়ে দেওয়া যাবে। কার্যত তখন কর্মীদের মাস মাইনের পরিবর্তে  জমিদারের মরজি নির্ভর মাসোহারার মতো নতুন  ব্যবস্থার প্রবর্তন হতে পারে। বাস্তবে  এমন বিপজ্জনক সামন্ততান্ত্রিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটে চলেছে সরকারের গৃহীত নীতিতে। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন সামন্ত আদর্শে অনুপ্রাণিত সরকারের নীতিতে কেবল ভাতা নয়, কোপ পড়তে পারে কর্মীদের পেনশনের ক্ষেত্রেও। সেক্ষেত্রে কর্মীদের হালের মাস মাইনের সাথে অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে অবসরের পর আয়ের বুনিয়াদি পেনশন ব্যবস্থাও। পেনশন হল একজন কর্মীর কর্মজীবনে দেওয়া শ্রমের বিনিময়ে তাঁর প্রাপ্ত উপার্জনের বিলম্বিত রূপ। অর্থাৎ একজন কর্মীর ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের বিনিময়ে তাঁর প্রাপ্য বেতনের একাংশ সরকার জমা রাখে অবসরের পর সেই কর্মীর আয়ের সংস্থানের জন্য। ফলে অবসরকালীন ভাতা হিসাবে পেনশন কখনই সরকারের মরজি কিংবা সঙ্গতি নির্ভর অনুদান নয় বরং সেটা সেই কর্মীর কষ্টার্জিত আয়ের এক লভ্যাংশ। ফলে আর্থিক সঙ্কটের দোহাই দিয়ে আজ বাদে কাল যদি মহার্ঘ ভাতার মতো পেনশনকে মূল বেতনের অংশের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে যে শেষ বয়সে বিশ বাঁও জলে পড়বেন লক্ষ লক্ষ পেনশনার সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 

 

ইতিমধ্যে দেশের সরকার অবসর জীবনের একমাত্র সম্বল পেনশন তহবিলকে খোলা বাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে খোলা বাজারের আদানি–আম্বানিদের শেয়ার বাজারের ওঠা নামার মতো অবসরপ্রাপ্ত কোটি কোটি পেনশনভোগীর জীবনেও অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে ।  
মরজির শিকার  মানুষের অধিকার 
শুধু মহার্ঘ  ভাতা নয় , সরকারের এমন মরজি নির্ভর কর্মকাণ্ডের বলি হয়েছে রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাই। স্কুল সার্ভিস কমিশন কিংবা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের যাবতীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকারের মরজি মাফিক কমিটি গড়ে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা দু’হাত খুলে উপার্জন করেছেন স্কুলের চাকরি বিক্রি করে। এই নিয়োগ দুর্নীতির ব্যাপ্তি প্রমাণ করেছে যে সেই দুর্নীতি ছিল এক সংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ। অথচ এমন অপরাধে যুক্ত প্রভাবশালীরা জমিদারের মেজাজে ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গোটা ব্যবস্থার স্বচ্ছতাকে কলুষিত করেছেন। তাই ক্ষমতার দম্ভে এমন এক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী কখনও বলতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় টাকা দেন বলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাঁরাই শেষ কথা বলবেন। শুধু বললেন না করেও দেখালেন বিধানসভায় চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের আইন পাশ করে একেবারে জমিদারি মেজাজে।  বেতন খাতে মহার্ঘ ভাতার মতো বেতন বহির্ভূত খাতেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সরকারি অনুদান উত্তরোত্তর কমে চললেও সরকারের তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই। কারণ সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় হারিয়ে যাওয়া মহার্ঘ ভাতার মতো শিক্ষায় বরাদ্দ এখন পড়ুয়াদের অধিকার থেকে হারিয়ে গিয়ে সুযোগে পরিণত হয়েছে। মরজি নির্ভর সরকার পরিচালনার আরও এক নজির হয়ে উঠেছে  রাজ্যে  আবাস যোজনায় দুর্নীতি। দেশের সরকারের নীতিতে গরিব মানুষের বাড়ি পাওয়াটা ইতিমধ্যে অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও রাজ্যের শাসকদল সেই অধিকারকে মহার্ঘ ভাতার মতো  উপরি পাওনা বলেই  মনে করেছে। ফলে এমন উপরি সুযোগ বিলি করতে গিয়ে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবেছে স্থানীয় প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত। ফলে আবারও মহার্ঘ ভাতার মতো হারিয়ে গেছে বহু মানুষের জীবনে নিরাপদ পাকা বাড়িতে থাকার অধিকার। 
অগ্রাধিকারের কোপে ভাতার অধিকার
ইতিমধ্যে শাসক দলের নেতারা বকেয়া মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও কেন্দ্রের টাকা না মেলার কারণে এমন ভাতার বিলম্ব বলে যুক্তি হাজির করেছেন। এখানেই জরুরি প্রশ্ন হলো ‘ওজন বুঝে ভোজনের’। তর্কের খাতিরে সরকারি রাজকোষে যদি বিভিন্ন কারণে ঘাটতি  ধরাও যায়  সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া। কিন্তু নিত্যদিন খেলা- মেলা-উৎসবে যে পরিমাণ দান খয়রাতি সরকার ঘটিয়ে চলেছে তাতে আর যাই হোক রাজকোষ ঘাটতি মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুল অন্তরায় তেমনটা মনে হচ্ছে না। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সরকার পরিষেবা বৃদ্ধির নামে বিভিন্ন ভাতা চালু করে চলেছে অথচ সরকার কিংবা সরকার পোষিত সংস্থার কর্মীদের ভাতার ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছে যাবতীয় অনীহা। 

 

নির্বাচনী পাটিগণিতে এমন লাখ দশেক মহার্ঘ ভাতার প্রাপকেরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই সরকারের উপেক্ষা এবং অনীহার কোপে পড়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা সরকারি কর্মীদের নিশ্চিত আয়ের বিশেষ সুবিধাভোগী অংশ হিসাবে দাগিয়ে দিচ্ছেন সরকারের দায় ভুলিয়ে রাখতে। সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতাকে তেলা মাথায় তেল দেওয়ার শামিল বলে আম জনতার বিভিন্ন সরকারি ভাতা প্রদান অনেক জরুরি এমন যুক্তিও হাজির করা হচ্ছে। কোনও সন্দেহ নেই সরকার সমাজের অসংগঠিত ক্ষেত্রে  প্রান্তিক মানুষের প্রয়োজনে  বহুবিধ ভাতা চালু করতেই পারে কিন্তু কখনোই সেটা সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত কর্মীদের স্বীকৃত অধিকারের বিনিময়ে নয়। কারণ এই লাখ লাখ সরকারি কর্মীরাই সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়িত করে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে। ফলে কৌশলে মহার্ঘ ভাতার সাথে বিধবা ভাতা কিংবা বার্ধক্য ভাতার তুলনা টেনে বিরোধ বাড়ানো কোনও জনমুখি সরকারের লক্ষ্য হতে পারে না। একথা ঠিক যে বাড়ির রান্নার মাসি, কিংবা গাড়ির ড্রাইভারের মাস মাইনের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা কিংবা চিকিৎসা ভাতার বিভাজন নেই। আর নেই বলেই তাঁরা শোষিত। কাজেই যখন ইচ্ছে মরজি নির্ভর ঢঙে তাঁদেরকে ছাঁটাই করা যায় উপযুক্ত শ্রম আইনের অভাবেই। ফলে রান্নার মাসি কিংবা গাড়ির ড্রাইভারের দুঃখে সমব্যথী হওয়ার ভান করে মহার্ঘ ভাতা ঠেকিয়ে রাখা কোনও কাজের কথা নয়। প্রান্তিক মানুষের দুঃখে যদি শাসক সমব্যথী হতে চায় তবে সবার আগে সরকারের উচিত নিত্য প্রয়োজনের জিনিসপত্রের মুল্য বৃদ্ধির ওপর কড়া সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। অন্যথায় কাজের মাসি থেকে স্কুলের শিক্ষকের বেতন কিংবা ভাতা বৃদ্ধির বিকল্প কোনও পথ খোলা থাকে না। 
চেনা পথে দমন পীড়ন 
ইতিমধ্যে ন্যায্য বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, রাজপথে নেমেছেন, অবস্থান অনশনে শামিল হয়েছে সরকারি এবং  সরকার পোষিত সংস্থার কর্মীরা  যাঁরা এই ভাতা বৈষম্যের শিকার। ইতিমধ্যে দু’দিনের কর্মবিরতির পালিত হয়েছে। আর প্রত্যাশিতভাবে তাঁদের আন্দোলন ভাঙতে সরকার দমন পীড়নের পথ ধরেছে। নির্দেশিকা জারি করে হুমকি দেওয়া হয়েছে কর্মবিরতির পরিণতি হিসাবে চাকরি ছেদের, যেমনটা করা হয় এই আমলে কর্মীদের ধর্মঘট ভাঙার ক্ষেত্রে। পাশাপাশি চলেছে প্রতিবাদী কর্মীদের বদলি এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার প্রস্তুতি। ফলে চেনা পথেই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের নামে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে শাসকের পক্ষ থেকে। মহার্ঘ ভাতার দাবিতে কর্মীদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় সরকার তড়িঘড়ি মহার্ঘ ভাতা বিধানসভায় ঘোষণা করে খানিক স্বস্তি পেতে চেয়েছে। কিন্তু কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে কয়েক ফোঁটা ঠান্ডা জল পড়ার মতোই ফুটতে শুরু করেছেন অসম্মানিত কর্মীরা। কর্মীদের অসম্মান করে সরকারের সম্মান রক্ষা হয় কিনা তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ভবিষ্যতে।

Comments :0

Login to leave a comment