Probandha — BANGLA GAN - PUJAR GAN / SHARAD MUKTADHARA

প্রবন্ধ — শারদ উৎসবে কর্পোরেট বৈভবে হারিয়ে গেছে পূজোর গান / শারদ মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha   BANGLA GAN -  PUJAR GAN  SHARAD MUKTADHARA

শারদ মুক্তধারা

প্রবন্ধ

সাম্প্রতিক বাংলা গান
সুরেন মুখোপাধ্যায়


শারদ উৎসবে কর্পোরেট বৈভবে হারিয়ে গেছে নতুন গান। শারদ উৎসবে নতুন গান চাই বলে কেউ দলগান তোলেনি। তবু জামা জুতো শারদ সংখ্যার সাথে বাঙালির হৃদয়ে গভীর ভাবে জড়িয়ে ছিল নতুন বাংলা গান। আধুনিক গানের সুসময় থেকে দুঃসময় এবং নব জাগরণের সংকেত এসেছে প্রধানত শারদ উৎসবের গানকে ঘিরে। গত শতকের দেশ দশক থেকেই বাংলা গানের রূপ বদল। জীবনমুখী, রিমিক্স, রিমেক কবিতাগীতির মতন নানা রূপ বদলের সঙ্গী হল বাংলা নতুন গান। পুজোর নতুন গানকে ঘিরেই বাঙালি দেখেছে কলের গান থেকে সিডি সিস্টেম। গলার রেকর্ড থেকে কম্প্যাক্ট ডিক্স ডিভিডি। দেখেছে বাদ্যযন্ত্রের বিবর্তন। শব্দ ধারণের নতুনতর প্রযুক্তি, সেই সঙ্গে গান ব্যবসায়ী ও শিল্পীদের পালাবদল। আধুনিক বাংলা গানের এ এক মাইলফলক।


রেকর্ড প্রকাশনার বড় পরব শারদোৎসব। ১৯১৪সালের শারদীয়া উৎসব উপলক্ষ্যে এমন ঘোষণা করে গ্রামোফোন কোম্পানি প্রকাশ করেছিল বাইষ্টি বাংলা গান। সঙ্গে দুটি কমিক। কালক্রমে গানের চরিত্র বদলেছে। বদলেছে আধার কিন্তু এর অচেনা আবেগ ভাসিয়ে দিয়েছে বাঙালির মন। মনে পড়ছে শৈশবের স্মৃতি। নতুন গান ভরপুর হয়ে থাকতো আমাদের উৎসবের দিনগুলি। উৎসবের অনেক আগে থেকেই আমাদের মনে জল্পনা শুরু হয়ে যেত- এবার কেমন হবে হেমন্তের গান। লতা - আশা কি এবার গান গাইবেন? কিংবা তরুণ মানবেন্দ্র শ্যামল প্রতিমা উৎপল কিভাবে ভরপুর করে তুলবেন আমাদের মন। এখনো বুকের মধ্যে স্পষ্ট শুনতে পাই মন্ডপে মন্ডপে বাহ্যে  আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা, রানাট, অবাক পৃথিবী, আকাশ প্রদীপ জ্বলে, উজ্জ্বল এক ঝাঁক পইড়া, ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে, কাজল নদীর জলে র মতন অজস্র সুখ স্মৃতি। ঢাকের বাদই বাজার আগেই এইসব উৎসবের গান বেঁধে দিয়েছে আমাদের দিন যাপনের সুর। একটা সময়কে চিহ্নিত করা হল বাংলা গানের স্বর্ণযুগ বলে। এভাবে চিহ্নিতকর্ণের সময় নিয়ে মতানৈক্য হতেই পারে। রবীন্দ্রনাথ যদি আধুনিক হন তা হলে অন্য কোন সময় কিভাবে স্বর্ণযুগ হতে পারে? তবু বলাই যায় রবীন্দ্র উত্তর যুগের মন কেমন করে অজস্র গানের কলি, সুর আমরা উপহার পেয়েছি উৎসবকে ঘিরে। এইসব গান শুনেই তো আমরা বড় হয়েছি। ভালো বসতে শিখেছি। হেসেছি কেঁদেছি। চোখ বুজে ভাবতে বসলে এখনো এক হ্যাক গান এসে ভিড় করে বুকে। শারদ উৎসবের এই সব গান আজ অনুরণিত হয় হৃদয়েট তারে। আর এটি সারদোৎসবের শারদ অর্ঘ্য।


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনটাও হয়ত বিফলে যায়। কৈশর থেকে যৌবনের সে অনুভব, বিস্কালে সে এ উভব আর থাকে না। তখনসার্ডিয়া গানের জন্য আলাদা একটা প্রত্যাশা ছিল। এখন আর নেই। তার চেয়েও বড় কথাউৎসব উপলক্ষ্যে নতুন গান আর বড় হচ্ছে না। হারিয়ে যাচ্ছে উৎসবের স্মৃতি।  মাইকে নতুন গান বেজে উঠলে শব্দ দুষনের অভিযোগ ওঠেনি। গান বলতে আমরা বুঝেছি সেটা বুকে ধাক্কা মারে, মনে বেঁধে। আর এখন কথা সুর ক্লিশে লাগে। তাই গান এখন শব্দ দূষণ। অবক্ষয়ের সূচনা গত শতকের শেষ পর্ব থেকে। বাংলা গানের কেন এই করুন পরিণতি? প্রায়ই সংগীত ব্যক্তিত্ব ভি বালসারা এই অবক্ষয়ের একটা ব্যখুয়া দিয়েছিলেন। তিনি নলেছেন - আসলে ব্যক্ত কোথায় এল বলছি, আগে একটাই কোম্পানি ছিল এইচ এম ভি। আমরা সবাই এইচ এম ভির মনোপলি নিয়ে চিৎকার করতাম। কিন্তু আজ বোঝতে পারছি সেই মনোপলিটা ছিল সংস্কৃতির স্তম্ভ। আহ অলিতে গলিতে রেকর্ড কোম্পানি। এইচ এম ভিতে রেকর্ড হতো। নিজস্ব জন্ত্রী ছিল। এইচ এম ভি র কুড়ি জন,  কলম্বিয়ার কুড়ি জন, নলিনী সরকার স্ট্রিটে ছিল রিহার্সাল রুম। একজন শিল্পী নিজস্ব গায়ন শৈলী ছাড়া তার আর কিছুই ভাবনাই ছিল না। আস্তে আস্তে শিল্পীর পেমেন্ট বাড়ল। চাপ পটল মিউজিসিয়ানদের ঘাড়ে। ফলে শিল্পী ও সহশিল্পী মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে শুরু করল। ব্যবধান এল। আজ এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে খুব কম কোম্পানি শিল্পীদের পয়সা দেয়। বাকি সকলে শিল্পীর ঘরেই চাপিয়ে দেয়া খরচের সমস্ত দায়।  শকল্পীকেই নির্বাচন করতে হয় সুরকার, গীতিকার ও সংগীতায়োজনের। খরচাটাও শিল্পীকেই করতে হয়। তাই আজকের শিল্পী শুধু শিল্পী নন প্রযোজকও। আগে রেকর্ড কোম্পানিগুলোর নিজস্ব মার্কেটিং টিম থাকত। ওদের কর্মকতারা ঠিক করতেন শিল্পীকে, শিল্পীর দায়িত্ব ছিল শুধু ভালোভাবে গানটা গাওয়ার। সুরকার গীতিকার কে হবেন সেই ভাবনা ছিল কোম্পানির। এই যে এত শিল্পীর বিকাশ এটা রকদিকে ভালো আবার বিপদও। শিল্পীর সংখ্যা তো কম নেই। তবে একটা কথা বলে দিই। আগরকার সেই পুজোর গানের উচ্ছাস উন্মাদনা আবেগ আর ফিরে আসবে না। শ্রদ্ধেও শিল্পীর সাথে সুর মিলিয়েই বলি বাংলা গানসেই আগ্রহ আর সৃষ্টি করতে পারছে না কেন? সেদিনের সব গানই যে সার্থক বা উচ্ছাস ছিল একথা বলা যাবে না। অনেক গানেই দেখেছি কথার দাবি মেটাতে পারছে না।  সুর ও সুরের সঠিক সিদ্দি হচ্চে না কথা। কিন্তু একটা বিষয় ছিল শিল্পী গাইতেন উপলব্ধি  থেকে। সে কারণে নানা দুর্বলতা সত্বেও বাংলা গান জনমনে হিল্লোল তুলেছে। সেই সুবাতাসটাই বাংলা গান থেকে হারিয়ে গেছে। হাজার প্রলোভনে বাংলা গান তাঁর মনের ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছে। শারদ উৎসবে নতুন বাংলা গান এক পথ হারা পথিক। তাই পথের সন্ধান নামতে হবে বাংলা গানকে। এটাই সময়ের দাবি।

Comments :0

Login to leave a comment