Probandha — SUVAM ROYCHOWDHARY / MUKTADHARA / 29 November

প্রবন্ধ — কৃষ্ণগহ্বর / শুভম রায়চৌধুরি / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha  SUVAM ROYCHOWDHARY  MUKTADHARA  29 November

মুক্তধারা

প্রবন্ধ

কৃষ্ণগহ্বর
শুভম রায়চৌধুরি

প্রচলিত ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি
হয়েছে এক মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। বিস্ফোরিত বস্তুপিণ্ড
মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের চেনা-জানা পদার্থ থেকে এই বস্তু
কিন্তু আলাদা। বিস্ফোরণের অপরিসীম তাপ ও চাপ এদের
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় ভেঙে রেখেছে। মহাকর্ষ বল এদের এক
জায়গায় টেনে জড়ো করছে। জন্ম নিচ্ছে নতুন নক্ষত্রমণ্ডলী।
সূর্যের মতো নক্ষত্র, সূর্যের চেয়ে আকারে বড় বা ছোট—
নক্ষত্রদের এক দিন মৃত্যু হবে। সূর্যের চেয়ে ছোট নক্ষত্রের
মৃত্যুর জবানবন্দি রচনা করেছেন সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, যাকে
আমরা জানি ‘চন্দ্রশেখর সীমা’ নামে।


বড় নক্ষত্রেরা ভেঙে যায় হকিং-এর নির্দেশ করা নিয়মে। সূর্যের
চেয়ে অনেক বড় নক্ষত্রেরা (সুপারনোভা) ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে শেষ
হয়। নক্ষত্রের অবশিষ্ট অংশ মহাকর্ষের টানে ছোট হতে শুরু করে।
বহু সূর্যের ভর এক সঙ্গে জুড়ে তৈরি হয় এক বস্তু যার ভিতরের
মহাকর্ষের টান এতখানি যে সেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে
পারে না। আর যেখান থেকে আলো পর্যন্ত আসতে পারে না, সে তো
অন্ধকার। একেই বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ব্ল্যাকহোল’ বা কৃষ্ণগহ্বর।
হকিং-এর উল্লেখযোগ্য কাজ কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে। পদার্থবিদ্যা
আনুযায়ী যদি দুটি কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বে কাছাকাছি আসে তবে একটা
অন্যটাকে গ্রাস করতে উদ্যত হবে। এই সময়ে প্রচুর শক্তি
বিকিরণ ঘটবে। আমরা জানি কিছু ফিরিয়ে দেওয়া কৃষ্ণগহ্বরের
ধর্মে নেই, তার প্রবল টান আলো উপেক্ষা করতে পারে না এখানেই
কাজ করলেন স্টিফেন হকিং ও পেনরোজ জুটি। তারা দেখালেন – এই
ফিরিয়ে না দেওয়াটা ঠিক নয়। কৃষ্ণগহ্বর কিছু ফিরিয়ে দেয়, যা ঘটে
শক্তি বিনিময়ের সময়ে। এই কাজ করতে গিয়ে ‘থিওরি অব
রিলেটিভিটি’ এবং ‘কোয়ান্টম মেকানিক্স’ মিলিয়ে দিলেন এরা।
‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ মহাবিশ্বে গ্রহ-নক্ষত্রের চলন সহ নানা
বিষয় ব্যাখ্যা করে । ‘কোয়ান্টম মেকানিক্স’ কণা পদার্থ
বিজ্ঞানীদের গভীরে গিয়ে কাজ করে। কৃষ্ণগহ্বর বিকিরণের তত্ত্ব
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নতুন দিশা যোগালেন হকিং – একটা ব্ল্যাক
হোল শেষ হয়ে যেতে সময় লাগবে একের পর ৬৭-টি শূন্য বসালে যে
সংখ্যা দাড়ায় তত বছর। এতদিন অপেক্ষা না করলে ব্ল্যাকহোল
উবে যাবে না।


মহাবিশ্বে কৃষ্ণগহ্বর নাকি সব কিছুই গিলে খায় ! স্টিফেন হকিং
থেকে সবাই প্রথম থেকে সে কথাই বারংবার বলেছেন। ১৯৯৭ সালে
হকিং একটা বাজি ধরেছিলেন, বলেছিলেন মহাবিশ্বে কৃষ্ণগহ্বর বলে
কিছু হয় না। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি এই বক্তব্য সংশোধন করে
নেন, তিনি পরে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দেন।
তার মৃত্যুর পর সংবাদ মাধ্যমের একাংশ থেকে বলা হয় যে তিনি
ব্ল্যাকহোলের আবিষ্কর্তা, এটা একেবারেই সঠিক নয়। হকিং এর
জন্মের আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ট্রেঞ্চে শুয়ে এক জার্মান
গণিতজ্ঞ কার্ল শোয়া্র্সচাইল্ড বের করে ফেলেছিলেন
‘ব্ল্যাকহোল’-এর সম্ভাব্য অস্তিত্ব। আসলে আইস্টাইনের
আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন
যে ব্ল্যাকহোলের মত সব কিছু শুষে নেওয়া মহাজাগতিক বস্তু থাকা
খুবই সম্ভব। তার মাপ কেমন হবে তাও তিনি আন্দাজ করে ছিলেন।
আজকের জ্ঞানে সেই মাপ হাস্যকর মনে হলেও ইতিহাসকে
অস্বীকার করা যাবে না। ব্ল্যাকহোল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন
মার্কিন পদার্থ বিজ্ঞানী জন হুইলার।
তা হলে হকিং কি করলেন ?
হকিং ঐ বস্তুর এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বললেন যা আগে জানা
ছিল না। ১৯৭৪-সালে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন তার তত্ত্ব বা থিওরি।
ব্ল্যাকহোল মানেই কালো নয়। কৃষ্ণ গহ্বর থেকেও বিকিরণ হতে
পারে এবং বিকিরণ করতে করতে একসময় শেষ হয়ে যায় এই ব্ল্যাক
হোল।


কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরে কি রয়েছে তা আমরা জানি না, সবটাই তত্ত্ব
নির্ভর। জেনারেল রিলেটিভিটির উপর ভিত্তি করে তার সাথে
কোয়ান্টাম তত্ত্বের সংযোগ ঘটিয়ে হকিং আভাস দিয়েছিলেন
ব্ল্যাকহোল থেকে বিকিরণ হতে পারে। এটাই খুব আশ্চর্যের কারণ
সাবেকি তত্ত্ব অনুযায়ী ব্ল্যাকহোল থেকে কিছুই বের হতে পারে না।
কিন্তু হকিং প্রথম প্রমাণ করেন – সাবেকি তত্ত্ব থাকলেও
পদার্থ এবং আলো যদি কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী আচরণ করে,
যদি কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মহাকর্ষের ক্ষেত্রে টেনে আনা যায়, তা
হলে দেখা যাচ্ছে ব্ল্যাকহোল থেকে কিছু বিকিরণ হতে পারে। এই
বিকিরণকে হকিং রেডিয়েশন বলা হয়েছে ।


ঘটনা হল হকিং রেডিয়েশন কিন্তু মরে যাওয়া তারা অর্থাৎ
ব্ল্যাকহোল থেকে বেরোতে দেখা যায়নি। দেখতে পাওয়ার কথাও নয়
কারণ এর তাপমাত্রা অত্যন্ত কম। মহাবিশ্বের সবজায়গায়
মাইক্রোওয়েভ রয়েছে, যাতে আমাদের মোবাইল চলে, এর তাপমাত্রা
তিন কেলভিন। ব্ল্যাকহোল থেকে হওয়া বিকিরণের তাপমাত্রা এক
ডিগ্রি কেলভিনেরও কম। সেই কারণে পরীক্ষিতভাবে হকিং
রেডিয়েশন সেভাবে ধরা পড়েনি, তবে একটি উপায়ে এই রেডিয়েশন
বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে, তাকে বলা হয় অ্যানালগ গ্র্যাভিটি বা
ফ্লুইড মেকানিক্যাল গ্র্যাভিটি ।
এতে অ্যানালগ ব্ল্যাকহোল বলে একটি জিনিস আছে, তা থেকে শুধু
রেডিয়েশন হয়। আসলে ব্ল্যাকহোল থেকে আলো বা অন্যান্য
পদার্থ যেমন বিকিরিত হতে পারে, তেমনই ওই তরল পদার্থের
অন্ধকূপ থেকে শব্দের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই চেহারা হকিং
রেডিয়েশনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তারফলে পরোক্ষভাবে একটা
পরীক্ষিত প্রমাণ এসেছে যে হকিং যা বলেছেন তা মোটামুটি ঠিক।
তাই হকিং-এর অবদান এই কসমোলজিতে অনবদ্য।
হকিং-এর ব্ল্যাকহোল সম্পর্কিত জনপ্রিয় বইটি হল ‘এ ব্রিফ
হিস্ট্রি অফ টাইম : ফ্রম বিগ ব্যাং টু ব্ল্যাক হোল’।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment