MD SALIM RESISTANCE

মোদীর মেরুকরণ, মমতার লুটেরও প্রতিরোধ রাজ্যে

রাজ্য

MD SALIM RESISTANCE ভোটলুট, অন্যায্য পৌরকরের প্রতিবাদে বরানগরে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল । ছবি: বলরাম বসু

দেশ বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রকে। বাঁচাতে হবে দেশের সংবিধানকে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকার এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে বিজেপি’কে। 

কেরালার কান্নুর পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত এই বোঝাপড়া ধরেই চলছে সিপিআই(এম)। পার্টির সর্বোচ্চ স্তর পার্টি কংগ্রেস। ঠিক হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই শক্তির সঙ্গেই চলবে লড়াই।

সিপিআই(এম)’র এই অবস্থান মনে করিয়েছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই লড়াই প্রতিদিন চলছে, বলেছেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরনোর পরও যত্রতত্র মিলছে পড়ে থাকা ব্যালট। সেলিম বলেছেন, ‘‘লুট-খুন-মিথ্যা মামলা-জরিমানা সব চাপাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিডিও অফিস হয়েছে বুথ দখল অফিস। আর সংবাদমাধ্যমের একাংশ এই ঘৃণ্য আক্রমণকে মহান করে দেখাচ্ছে। লড়াই এই সবের বিরুদ্ধেই জারি রয়েছে।’’

কেন দেশ বাঁচানোর লড়াই? 

সেলিমের ব্যাখ্যা, ‘‘দেশের ঐক্য-সংহতির ওপর মারাত্মক আঘাত নেমেছে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়ার পর থেকে। ঘৃণার চাষ হচ্ছে সর্বত্র। বিভাজন তীব্র করা হচ্ছে বিভিন্ন অংশে। আবার একই সঙ্গে মানুষের জীবিকার ওপরও নামছে মারাত্মক আঘাত। দেশ মানে দেশের মানুষ। মানুষের পক্ষেই এই লড়াই।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘দ্বেষ নয়, দেশকে বাঁচাতে হবে।’’ 

বুধবার কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সেলিম। বলেছেন, ‘‘দ্বিতীয়বার সরকারে এসে জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি সরকার। বাতিল করে ৩৭০ ধারা। তখনই আমরা বলেছিলাম দেশের ঐক্য বিপন্ন। এখন তা পরিষ্কার। এবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নিজে তুলেছেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিতর্ক। ফের ধর্মীয় মেরুকরণ করে ভোট জেতার কৌশল।’’ 

ফ্রান্স সফর থেকে ফিরেই দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিতর্ক তুলতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে ‘এক দেশে দুই আইন’ থাকবে কেন। বিয়ে, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক সংক্রান্ত দেশে বহু রীতি দেওয়ানি বিধিতে আইনসঙ্গত। অথচ ‘দুই আইন’ বলে মোদী হিন্দু বনাম মুসলিম মেরুকরণে শান দিয়েছেন। এই মোদীই মণিপুর ভয়াবহ হিংসা সম্পর্কে নীরব। বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির, রোজগারে আমজনতা কোণঠাসা হচ্ছে তাঁর সরকারের নীতিতে। 

সেলিম মনে সেই পরিস্থিতি মনে করিয়েছেন। বামপন্থীরা বলেছেন, এই লড়াইয়ে সম্ভাব্য শক্তিগুলিকে একজোট করার চেষ্টা চলবে। সেলিম বলেছেন, ‘‘মোদী আর দিদি দু’জনেই লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে। কেবল বাম নয়। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে একজোট করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে বামপন্থীরা। স্বাধীনতার আগে বা পরে বিভিন্ন অংশকে একজোট করে লড়াই চালিয়েছে কমিউনিস্টরা। সেই সঙ্গে শামিল করেছে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী অংশকে।’’ 

মোদীর ‘এক দেশ এক আইন’ স্লোগানকে ঠুকে সেলিম বলেছেন, ‘‘বিজেপি’র সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং শিশু নির্যাতন রোধ আইনে অভিযুক্ত। কুস্তিগিররা তাঁর গ্রেপ্তারির দাবিতে টানা আন্দোলন করলেন। জামিন অযোগ্য ধারায় দায়ের মামলা। অথচ তিনি খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এনআরসি-সিএএ’র প্রতিবাদ করায় উমর খালিদ জেলে। এই তো মোদীর এক দেশ এক আইন!’’

গণতন্ত্রের পক্ষেই লড়াই চলছে বাংলায়। বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ চালাচ্ছে লড়াই। সেলিম বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র প্রতীকে ছাপ দেওয়া ব্যালট রাস্তায় পড়ে নেই। বামফ্রন্ট প্রার্থীদের পক্ষে ছাপ দেওয়া ব্যালট রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘এমনও উদাহরণ আছে যেখানে সিপিআই(এম) প্রার্থী জিতছিলেন, গণনার মাঝে বিজেপি আর তৃণমূলের এজেন্ট গোছা ধরে বাকি সব ব্যালট একসঙ্গে গুনতে বলেছেন। সিপিআই(এম)’কে হাতে হাত মিলিয়ে হারিয়েছে তৃণমূল-বিজেপি।’’ 

ফলাফল ঘোষণায় কমিশনের হিসেব বদলে যাচ্ছে। সেলিমের অভিযোগ, ‘‘ফল ঘোষণার জন্য কমিশনের ওয়েবসাইটের দায়িত্ব আউটসোর্স করা হয়েছে দুর্নীতিতে জড়িত একটি সংস্থাকে। নিজের ওয়েবসাইটে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নেই।’’  

Comments :0

Login to leave a comment