Barasat SFI DYFI

ব্যারিকেড ভেঙে, লাঠি রুখে বারাসতে আছড়ে পড়ল প্রতিবাদী জনস্রোত

রাজ্য

সুভাষ পাড়িয়াল: বারাসত 
 

মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের দেওয়ালে দৃপ্ত যৌবন লিখে এল রাজ্যবাসীর মনের কথা—  ‘চোর তৃণমূল’।
পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে উত্তর ২৪ পরগনার ছাত্র-যুব-মহিলাদের মিছিল পৌঁছে গিয়েছিল বারাসতে জেলা পরিষদ ভবনের গেটের সামনে। পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চালিয়েছে। আন্দোলনকারীদের স্লোগান থামেনি। আন্দোলনকারীকে কণ্ঠে লুটেরা-মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার স্লোগান যেমন ছিল, তেমনই ছিল ফসলের ন্যায্য মূল্যের দাবি, খেতমজুরের কাজ-মজুরির দাবি, সকলের কাজের দাবি, নারীদের সুরক্ষার দাবি। এদিন ১০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।
লুটেরামুক্ত পঞ্চায়েত গড়তে এদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ছাত্র-যুব-মহিলারা জেলা পরিষদ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ছিল মিছিলের আয়োজক। তীব্র রোদ মাথায় নিয়েই বেলা দু’টো নাগাদ বারাসত হেলাবটতলা থেকে জেলা পরিষদের উদ্দেশে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ মিছিল। অসহনীয় দহনকে অগ্রাহ্য করেই হাজারো আন্দোলনকারী এগোতে থাকেন জেলা পরিষদের দিকে। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক হয়ে ব্রিজ অতিক্রম করে ৩৫ নং জাতীয় সড়ক ধরে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পাশ দিয়ে মিছিল পৌঁছায় কোর্টের বাজারের সামনে। সেখানে মোতায়েন বিরাট পুলিশ বাহিনী ব্যারিকেড করে রেখেছিল। শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা পেয়ে ছাত্র-যুব-মহিলাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। উদ্ধত শাসকের ব্যারিকেড দুমড়ে মুচড়ে এগিয়ে যান তাঁরা। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ। তবুও পিছু হটেননি আন্দোলনকারীরা। বরং তাঁদের তেজের সামনে পিছু হটে পুলিশই। পুলিশ গিয়ে দাঁড়ায় জেলা পরিষদের দেওয়ালে। মিছিল ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে জেলা পরিষদের গেটে। ভিড়ের চাপে এদিন ভেঙে পড়ে জেলা পরিষদের গেটের একাংশ। তখনই ওই ধুন্ধুমার মুহুর্তেই আন্দোলনকারীদের কয়েকজন জেলা পরিষদের দেওয়ালে লিখে দেন ‘চোর তৃণমূল।’ এদিন পুলিশের নির্লজ্জ ভূমিকার জন্য নেতৃবৃন্দ জেলা পরিষদে ঢুকেও ডেপুটেশন দেননি। স্মারকলিপিটি সভায় পড়া হয়েছে। পরে ই-মেল মারফত স্মারকলিপি জেলা পরিষদে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
তৃণমূলের বেলাগাম দুর্নীতি রুখে এরাজ্যে লুটেরা-মুক্ত পঞ্চায়েত গড়তে এবং ফসলের ন্যায্য দাম, সারের ওপর ভরতুকি, নারীদের সুরক্ষা, সকলের জন্য ভাত ও কাজ, শিক্ষা শেষে চাকরির মতো বেশ কয়েকটি দাবিতে ছিল এদিনের অভিযান। আরএসএস-বিজেপি এবং তাদের দোসর তৃণমূলের সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার আহ্বানও ছিল মিছিলে। মিছিল শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফআই জেলা সম্পাদক সপ্তর্ষি দেব, এসএফআই জেলা সভাপতি দীপ্তজিৎ দাস ও সম্পাদক আকাশ কর, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা রুণু ব্যানার্জি প্রমুখ। সভাপতি ছিলেন সফিকুল সর্দার। সভায় সপ্তর্ষি দেব বলেন, বেকার যুবক, ছাত্র ও মহিলাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ প্রশাসন দেখলো। এবার এই দুর্নীতিপরায়ণ শাসককে চার্জশিট দেবেন রাজ্যবাসী।
এদিন পুলিশের লাঠির ঘায়ে কমপক্ষে ১০ জন আন্দোলনকারী আহত হন। লাঠির আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বারাকপুরের বাসিন্দা সুবর্ণ ধর। এদিন আরও ১০ জন ছাত্র-যুবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বারাসত স্টেশনের কাছ থেকে। সকলে যখন বাড়ির পথে তখনই পুলিশ ফের হামলা চালিয়ে এঁদের গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বারাসত থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ সভা হয়। 
 

Comments :0

Login to leave a comment