STORY — DIGANTA DEB / NATUNPATA

গল্প — মিনুর সাথে দেখা হলো না তার / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY  DIGANTA DEB  NATUNPATA

গল্প
মিনুর সাথে দেখা হলো না তার
দিগন্ত দেব

    সাওতা গ্রামের ছোট মেয়ে মিনু। গত ছয় মাস স্কুল যায়নি সে। তার থেকে বছর পাঁচেকের বড় তার দাদা । বাড়ি থেকে দূরে গহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, দাদার স্কুল। কদিন আগে দাদা দেখে এসেছে গেটে বড়ো তালা ঝুলছে পাঠশালা বন্ধ। দীর্ঘ লকডাউনের মাস। সবদিক কেমন থমথমে নিশ্চুপ। মিনুর গ্রামে লকডাউনের মাঝে বর্ষাতে মাঠে ফসল ফলেছে ঠিকহ। কিন্তু সেই সময় ফসল নিয়ে যে মাতামাতি তা দেখা যায়নি। ঘরবন্ধি সময়ে এবার ফসলও উপেক্ষিত। বন্দি দশায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সবাই । ছোট মিনু তা উপলব্ধি করতে পারেনি । এই হঠাৎ প্রাণহীন গ্রামের মধ্যে সে কাটিয়ে ফেলেছে প্রায় ছয় সাত মাস। 
   খেলার মাঠে গ্রামের ছেলে মেয়েদের খেলতে আসতে দেখেনি মিনু বহুদিন হলো। রাস্তাঘাট জনবিরল । ঝিলের পাড় ধরে গ্রামের এই হাটটাও বসেনি অনেকদিন । তাই সরু অলি গলি বেয়ে ভেসে আসেনি জামা কাপড়ওয়ালা হাঁকা হাঁকি বা বাঁশিয়ালার সুর। বোঝেনি মিনু - কিছুই বোঝেনি। কিন্তু এই শরতেও তার গ্রামের মাঠের কাশবনে কাশগুচ্ছ দুলতে দেখেছে সে। আকাশে ভেসে যায় রোজ পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। পুজোর গন্ধ বাতাসে ম ম করছে।

   কিন্তু মিনুর এবারের পূজাটা একটু অন্যরকম। কারণ, বাবা এখন সকালে উঠে কাজে যায় না। তাই বাবার কাছে রেলগাড়ি চড়ার গল্পও শোনা হয় না। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ। বাবা এইজন্য এবার বলেছে,"এবার পূজায় আর কলকাতা যাবো না ঘুরতে।" কলকাতায় গেলে নাকি শরীর খারাপ হবে। লিলুয়ার একটা ঢালাই কারখানায় কাজ করে মিনুর বাবা। হঠাৎ লকডাউনে কারখানা বন্ধ। খাদ্য-খাদকের শৃঙ্খলে একটা বেকায়দা টান পড়লো। উপার্জনটা থেমে গেল। বাধ্য হয়ে মিনুর বাবা সকালবেলা করে গ্রামের রাস্তা দিয়ে রোজ হেঁকে যায়- শাপলা নেবে - কচুর শাক আছে - নেবে - নাহলে পরিবারটা ভেসে যেত। এ কোনো কিছুরই আক্ষরিক সংজ্ঞা জানা নেই মিনুর। ঘুরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অভাব- আধপেটা- সর্বহারা তবুও মানুষ বাঁচে। অস্তিত্বের জন্য জীবনসংগ্রাম মানুষের অভিযোজন গত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মিনুর দাদু বাঁচল কই? করোনার অবাধ থাবা একবার ছুঁয়ে গেছে মিনুর পরিবারকে। নিয়ে গেছে মিনুর দাদুকে। এভাবেই পাড় ভেঙে জল ঢুকে সব ভাসিয়ে দেয় হয়তো...... 
   তবুও প্রকৃতি বড় নিষ্পাপ বড় অনুঝ। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই নীল আকাশে সাদা মেঘগুলো নানান আকৃতি নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে অবলীলায়। কাশফুল গুলো দুলছে মাঠে। পাখিগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে রোজ প্রাণ পাচ্ছে নিজের মতো করে। 


  এবার আর পুজো নেই মিনুর। ভালো থাকার নিষিদ্ধ ইশতেহারে থমকে গেছে জীবন। স্তব্ধ করে দিয়েছে ছোট মিনুকে। বর্ণহীন জীবন বড় অসহায়। এই বছর মিনুদের উৎসবহীন শারদ।
আমার ছুটি অবেলাতে দিনদুপুরে মধ্যখানে 
কাজের মাঝে ডাক পড়েছে কেন যে তা কে বা জানে....

 

Comments :0

Login to leave a comment