STORY — THIRTHANKAR SARKAR / NATUNPATA - 17 December

গল্প — আমার গবেষণাগারের গল্প / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY   THIRTHANKAR SARKAR  NATUNPATA - 17 December

নতুনপাতা

গল্প

আমার গবেষণাগারের গল্প
তীর্থঙ্কর সরকার 


আমি একটা গবেষণাগার বানিয়েছি। সেখানে আমি নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। আমার এই গবেষণাগারে আছে তিনটি কাচের বাটি, বাটিগুলি কিভাবে যেন আমাদের বাড়িতে জমা হয়েছিল, এগুলি ব্যবহার না হওয়ায় আমি গবেষণাগারে নিয়ে নিয়েছি। 
একটা কাপ, তার গায়ে মাপের দাগ কাটা, কতটা জল বা তেল নিলাম তা মাপা যায়। দুটো বড় কাচের গ্লাস। এ গুলি বাড়িতে আগে থেকে ছিল, আমি কেবল নিয়ে নিয়েছি। 
দু’টো প্লাস্টিকের চামচ, এগুলি চাউ-মিনের প্যাকেটের সাথে বাড়িতে এসেছে। 
একটা কাচের চামচ, এটা ঠাকুমার ওষুধের শিশিতে পেয়েছি। সব জিনিসগুলি আমি যত্ন করে জেঠুর কাছে পাওয়া একটা শক্ত-সুন্দর জুতোর বাক্সে গুছিয়ে রাখি। 
আমি প্রথম যে গবেষণাটা করি তার গল্প তোমাদের বলব। বিজ্ঞান বইতে পড়েছি গবেষণায় পরীক্ষা করতে হয়, ভালভাবে দেখতে হয়, সেটাকে নাকি পর্যবেক্ষণ বলে। তারপর সিদ্ধান্ত করতে হয়। 
আমার পরীক্ষাটা নুন, চিনি, জল এবং লেবু নিয়ে। সবাই জানে চিনির স্বাদ মিষ্টি, নুনের স্বাদ নোনতা। কিন্তু কিভাবে এটা জানে কেউই বলতে পারে না। ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে “দূর বোকা, এটা আবার শিখতে হয় নাকি, আমরা সবাই এমনি এমনি জানি”। আচ্ছা,  আমাদের যদি লিখতে শিখতে হয়, যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ শিখতে হয়, তা হলে কোনটার কি স্বাদ সেটা শিখতে হবে না ? ঠাকুমা কোন কিছুর উত্তর না দিতে পারলে বলে “বোকা, এটা জানিস না”।
নুন, চিনি দুটোই সাদা, দানা দানা। যা হোক আমি কিন্তু এখন দেখেই বলতে পারি কোনটা নুন, কোনটা চিনি। নুনের দানাগুলি ছোট, প্রায় গুড়ো গুড়ো, বেশি সাদা। চিনির দানাগুলি একটু বড়, চৌ-কোনা, একটু কম সাদা। 
যাহোক, পরীক্ষাটা শুরু করি। 
প্রথমে একটা গ্লাসে জল নিলাম। মুখে দিয়ে দেখলাম, জলটা নোনতা বা মিষ্টি কোনটাই নয়। জানলাম জলের কোন স্বাদ নেই। 
এবারে গ্লাসে এক চামচ নুন দিলাম, ভালভাবে  নেড়ে দিলাম যাতে মিশে যায়, এবার জিভে দিয়ে দেখলাম জলটা নোনতা হয়ে গেছে। দিদি কলেজে পড়ে, বলল এটাকে নাকি দ্রবণ বলে, মা বলে সরবত। আবার আরও এক চামচ নুন দিলাম, গুলে যাবার পর মুখে দিয়ে দেখলাম –এ্যাঃ, কি নোনতা, পুরীর সমুদ্রের জলের মত। 


আর একটা গ্লাসে জল নিয়ে এক চামচ চিনি দিলাম, গুলে যাবার পর মুখে দিয়ে খুব ভাল লাগল , মিষ্টি। আবার এক চামচ চিনি দিলাম, গুলে যাবার পর মুখে দিয়ে আরও মিষ্টি লাগল। আরও এক চামচ চিনি দিলাম, গুলে যাবার পর মুখে দিয়ে দেখলাম, মিষ্টি আরও বেড়ে গেছে। বুঝলাম এভাবে চিনি বেশি দিলে রসগোল্লার মত মিষ্টি হয়ে যাবে। 
এবার জলে নুন চিনি মিশিয়ে দেখব। মা বলল – তিন চামচ চিনির সাথে এক চামচ নুন এক গ্লাস জলে মেশাতে। মিশিয়ে দেখলাম, খেতে খুব ভাল হয়েছে। 
এবার এর মধ্যে লেবু কেটে খানিকটা রস চিপে দিলাম। খেতে খুব ভাল লাগল, টক-মিষ্টি-নোনতা। 
এবার আরও  খানিকটা লেবুর রস দিলাম। মেশার পর খেতে আরও ভাল লাগল, টকটা একটু বেড়ে গেছে। ভাবলাম লেবুর সব রসটা দিয়ে দেখি। 
খুব করে লেবু চিপে সবটা রস বের করে মেশালাম। 
মুখে দিয়ে দেখি – এ্যাঃ, তেতো হয়ে গেছে। 
সিদ্ধান্ত করলাম, লেবু বেশি চিপতে নেই, তা হলে তেতো হয়ে যায়।  
কিছু পরীক্ষা আছে অল্প সময়ে শেষ করা যায়। কিছু পরীক্ষা শেষ করতে অনেক সময় লাগে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা অনেকটা রান্না করার মত, কড়াই-তে বসিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। 
চুপিচুপি বলছি, কাউকে বলবে না, আমি একটা পরীক্ষা শুরু করেছি, তবে এটার জন্য একটা আতস কাচ লাগবে। ঐ যে সূর্যের আলোতে ধরলে কাগজ পুড়ে যায়, ছোট জিনিস বড় দেখায়, সেই কাচ। ছোট কাকার ঘাড় মটকাতে হবে।  জীবাণুদের একটা ঘর-বাড়ি বানাব। একটা কাচের বাটিতে খানিকটা আটা গুলে, থুতু মিশিয়ে দিদির খাটের তলায় রেখে দিয়েছি। এর ফলাফল পরে কোন লেখায় জানাব।

 
 

Comments :0

Login to leave a comment