পঞ্চায়েত ভোটের পর রক্তারক্তি মনে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর? তাঁর সরকার রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠালো না কেন? ভোট লুটে জড়িত পুলিশ সুপার, জেলাশাসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? বেঙ্গালুরুতে বিরোধী বৈঠক ঘিরে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে এভাবেই পালটা প্রশ্ন ছুঁড়লেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সেলিম জানিয়েছেন জেলা এবং ব্লকস্তরে বামপন্থীরা জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের দপ্তর ঘেরাও হবে। আগস্টে হবে সুলভে খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন।
সেলিম বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ভোট লুটের বিরুদ্ধে সমাবেশ হবে। পুলিশ এবং প্রশাসনের নির্লজ্জ ভূমিকার বিরুদ্ধে আরও তীব্র করা হবে জনমত।’’ সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি’র বিরুদ্ধেও তীব্র হচ্ছে মানুষের ক্ষোভ।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলার বুকে তৃণমূল নতুন করে সন্ত্রাস ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’’
বুধবার কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সেলিম। সোম এবং মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে হয়েছে বিজেপি বিরোধী ২৬ দলের বৈঠক। কংগ্রেস, বামপন্থীদের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসও বৈঠকে যোগ দেয়। বামপন্থীদের সক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবারই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রসঙ্গ তোলেন। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের কর্মীরা রক্তাক্ত তৃণমূলের সন্ত্রাসে, তা’হলে একত্রে বৈঠক কেন, এই মর্মে তোলেন প্রশ্ন।
সেলিম বৈঠক প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘দেশ বাঁচাতে এই বৈঠক। আমরা বারবার বলছি, বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও। তৃণমূল হটাও রাজ্য বাঁচাও। সিপিআই(এম) নিজের অবস্থানেই রয়েছে। বরং উল্টোপথে হাঁটতে হচ্ছে তৃণমূলকে। ‘একলা লড়ব’ বলেও এখন বিরোধীদের যৌথ মঞ্চে শামিল হতে হচ্ছে। আরএসএস চেয়েছিল কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)’কে বাইরে রেখে মমতা আলাদা ফ্রন্ট খুলুন। মমতা সেই চেষ্টা করলেনও। কিন্তু তা সফল হয়নি।’’ তিনি বলেন, মমতা এবং মোদীর মাথাব্যথার কারণ আসলে বামপন্থীরা।
সেলিম বলেন, ‘‘অভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় স্তরে হবে। কিন্তু জাতীয় স্তরে কোনও নির্বাচনী জোট হবে না। রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতির বৈচিত্র রয়েছে। তাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। এই অবস্থানেই রয়েছে সিপিআই(এম)।’’
বৈঠকের গোড়ার দিন, গত সোমবারই, সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও এ কথাই বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়বে বামফ্রন্ট। যেমন কেরালায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সরাসরি লড়াই সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন জোটের।
বুধবার কলকাতায় মিছিল করে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষের মতো দলের নেতারা বেঙ্গালুরু বৈঠক প্রসঙ্গে তুলেছেন বারবার। তৃণমূলের দুর্নীতি, সন্ত্রাসের পরেও কেন বৈঠক, মোদীর সুরেই তুলেছেন সেই প্রশ্ন।
সেলিম মনে করিয়ে দেন যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে গ্রামে গ্রামে দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়েছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ। তৃণমূল-বিজেপি যোগসাজশের একের পর এক নমুনা দেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়ের পরও নারদ, সারদা তদন্ত বন্ধ কেন? কেন নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ঢিলেমি।’’ সন্ত্রাস প্রসঙ্গে সেলিম সরাসরি বলেন, ‘‘বিজেপি’র সাংসদদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাঙড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধ চলছে। বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী সেই ভূমিকা নিচ্ছেন। চোপড়ায় খুন করা হলো ছাত্র কর্মী মনসুর আলমকে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার মিছিলে। দার্জিলিং লোকসভার মধ্যে পড়ে এই এলাকা। সাংসদ বিজেপি’র। তিনি কোথায়? সন্ত্রাসের কোনও এলাকায় বিজেপি সাংসদদের পাওয়া যায় না কেন?’’ বাংলা ভেঙে আলাদা রাজ্যের প্রচারক অনন্ত মহারাজকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তৃণমূল বিরোদী প্রার্থী দেয়নি রাজ্যসভার ভোটে। বস্তুত একটি আসনেও পালটা প্রার্থী নেই। যোগসাজশের নমুনা হিসেবে এই ঘটনাও সামনে আনেন সেলিম।
জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারের মতো আধিকারিকরা নিযুক্ত হন কেন্দ্রীয় কর্মী বিষয়ক, জন অভিযোগ এবং পেনশন মন্ত্রক থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও চাইতে পারে জবাবদিহি। সেলিম বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের কর্মী বিষয়ক মন্ত্রক বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পঞ্চায়েত ভোট লুটে জড়িতদের থেকে জবাবদিহি চাইল না কেন?’’ তৃণমূলের দুর্নীতিতেও বিজেপি’র সমর্থন মনে করিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘সাংসদদের হাত পেতে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। তার মধ্যে এখন বিজেপি নেতা সে সময়ের তৃণমূল মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও রয়েছেন। কেন্দ্রে সরকার তখন বিজেপি’র। লোকসভার এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান তখন দলেরই প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর। শাস্তির আবেদন পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়নি।।’’
Comments :0