Md Salim

চোরের বিরুদ্ধে চোররা লড়বে না, মানুষ লড়ছেন লাল ঝান্ডা হাতে, শ্রমজীবীর ঐক্যের ডাক সেলিমের

জেলা

 পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় চোপড়ায় সিপিআই(এম)’র কর্মীদের ওপরে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৯ বছরের যুবক মনসুর আলম। শহীদ কমরেড মনসুর আলমের স্মরণে বৃহস্পতিবার চোপড়ার গেন্দগছ গ্রামে সভা অনুষ্ঠিত হয় সিপিআই(এম)’র চোপড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে। হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদী সমাবেশের চেহারা নেওয়া সভায় সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েতে লুট চালিয়েছে, চোপড়ার চা বাগান সহ সম্পদ লুট করেছে, তারপরে ভোটে জিততে পারবে না বুঝে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে সিপিআই(এম) কর্মীদের ওপরে গুলি চালিয়ে কমরেড মনসুর আলমকে খুন করেছে তৃণমূল। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদকে এভাবে থামাতে পারবে না, এই জনসমাবেশই তার প্রমাণ। 
চোপড়ার গেন্দগছ গ্রামের এসএসকে ময়দানে এদিন মানুষের ঢল নামে শহীদ মনসুর আলমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। গত ১৫ জুন দুষ্কৃতীদের গুলিতে তাঁর শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। শিলিগুড়িতে হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসা চলার পরে তিনি প্রাণ হারান, তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফেরে গেন্দগছ গ্রামে। মনসুর আলমের মা মারিয়ম বেগম আজও ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। এদিন তিনিও সভামঞ্চে এসেছেন। সন্তানহারা মা’র মতোই ভাষা হারিয়েছেন বাবা মৈনুল হক। মনসুর আলমের দাদু গিয়াসুদ্দিন বলেছেন, আমার নাতির খুনিরা এখনও বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুনিদের বিচার চাই। এদিন কমরেড মনসুর আলমের ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থীরাও। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে কীভাবে মহিলাদের মারধর করেছে, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে তা বললেন ২ নং জেলা পরিষদের পদ প্রার্থী তামিনা খাতুন। মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারা মোমেনা খাতুন জাকির হোসেনরা কেঁদে ফেলেছেন তৃণমূলের প্রাণঘাতী হামলার উল্লেখ করতে গিয়ে।
এই সমাবেশেই মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েতের প্রধান পদ, উপপ্রধান পদ লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লুটেরার দল পঞ্চায়েতে মানুষের সম্পদ লুট করে মনসুরকে খুন করে পার পেয়ে যাবে না। মানুষকে বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত চালানো যাবে না, লুটেরাদের স্বার্থে নয় মানুষের স্বার্থ অনুযায়ী পঞ্চায়েতের প্রকল্পের টাকা খরচ করতে হবে। তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে চোপড়ার মানুষকে। তৃণমূলের গুন্ডা মস্তানদের মানুষ আর ভয় পাচ্ছে না, ওদের আশ্রয় দিচ্ছে পুলিশ। মানুষের করের টাকায় চলা পুলিশ আইন মেনে চলার বদলে তৃণমূল নেতাদের কথায় উঠছে বসছে। সেই জন্যই হরিহরপাড়া, আউশগ্রাম, নবগ্রাম, লালগোলা, চোপড়া সহ রাজ্যে মোট ৬০ জনকে খুন হতে হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসাত্মক ঘটনায়। আমরা বামপন্থীরা শহীদদের স্মরণে সভা করছি হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে। তৃণমূল ভোট লুট করতে যে ভাড়াটে বাহিনী তৈরি করেছিল তাদের কর্মীদেরও মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু তৃণমূল আজ তাদের স্মরণও করছে না। লুটেরা তৃণমূলের ঝান্ডা ধরা আর লাল ঝান্ডা ধরে লড়াই করার এটাই ফারাক। তেভাগা আন্দোলনের শহীদ কমরেড বাচ্চা মুন্সির চোপড়ায় মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না তৃণমূল এবং বিজেপি।
সেলিম বলেন, বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করছে বাম কংগ্রেস। তৃণমূল যখন দেখছে এরাজ্যে তাদের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ বেঙ্গালুরুতে গিয়ে হাজির হয়েছে বিরোধী ঐক্যের মঞ্চে। আমরা বলছি তৃণমূল চোর, বিজেপি’ও চোর। চোরের বিরুদ্ধে চোরের লড়াই হয় না, জোটও হয় না। এরাজ্যে সংখ্যালঘু আদিবাসী প্রান্তিক গরিব মানুষ নিজেদের অধিকারের জন্যে লড়াই করছে লাল ঝান্ডা হাতে। তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার মধ্য দিয়েই লড়াই হবে লোকসভা নির্বাচনে। তৃণমূল আর বিজেপি নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াই দেখানোর নাম করে নাটক করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মদত না থাকলে ইডি সিবিআই’র তদন্ত চলা সত্ত্বেও ভাইপো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল কীভাবে? কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সেটিং মানুষের কাছে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 
এদিন সমাবেশে সেলিম ছাড়াও পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার ভাষণ দেন। তিনি বলেন, চোর খুনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। পার্টির জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হকও বলেন, গরিবের অধিকার রক্ষায় লড়াই জোরদার করা হবে। এছাড়াও কংগ্রেস নেতা অশোক রায় বলেন, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা একসঙ্গে লড়াই করছে পঞ্চায়েতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। ভয় পেয়ে ওরা আমাদের আক্রমণ করেছে। এই লুটেরাদের দল কীভাবে পঞ্চায়েত চালাবে মানুষ বুঝে নেবে। 

 

Comments :0

Login to leave a comment