রামশংকর চক্রবর্তী-তমলুক
ঘুর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুরে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার দিন রাত লাগাতার অতিভারি বৃষ্টি। শনিবারও দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি। শতাধিক মৌজা হঠাৎই জলমগ্ন হয়েছে। পুকুর, নালা, খালে জল উপচে কোথাও কোথাও রাস্তা ডুবে গেছে। কয়েকশ কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। আশ্রয়হীন বহু মানুষ। কিন্তু পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সম্পুর্ণ উদাসীন। নামেই ফ্লাড সেল্টার। কোনও পরিকাঠামো নেই। ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার পর ত্রিপলটুকু মেলেনি। ঝড় আসার আগে মাইকিং করে দায় সেরেছে প্রশাসন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে।
ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণও এখনও নির্দিষ্ট করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বলেছেন, ‘‘দুদিন ধরে সার্ভে হবে ব্লক গুলিতে। তারপর পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির রিপোর্ট দেওয়া যাবে।’’ তবে লাগাতার বৃষ্টির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকা গুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশী। যেমন খেজুরি, নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া প্রভৃতি। খেজুরির সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বৃষ্টিতে কাঁচা মাটির বাড়িগুলির ঘরের চালা ভেঙে পড়ছে। ওই এলাকায় প্রায় শতাধিক বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। খেজুরি ২ ব্লকের চক্রবেড়িয়া গ্রামের পল্টু সিং, শিবরাম মাঝির ঘর শুক্রবার রাতেই ভেঙে পড়ে। খেজুরি ১ ব্লকের কামারদা গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারদা বাড় পুটিমারি গ্রামের নুপুর দাস, কাকলি দাস, কৃষ্ণা দাস, মধুমালা দাস, সুচেতা বর ভুঁইয়া সহ এ রকম বহু বাড়ির একই অবস্থা। খুবই কষ্টে কোনওরকম মাথা গুঁজে থাকতে হচ্ছে। নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের নদী তিরবর্তী কেন্দ্যেমারি, সোনাচূড়া, কালীচরপুর, ভেকুটিয়ার কিছু অংশ, মহম্মদপুরের কিছু অংশ কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘটনা হল স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ন্যূনতম ত্রিপল বা ত্রাণ মেলেনি। কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের প্রায় শতাধিক মৌজা আবারও জলমগ্ন হয়েছে। দ্রুত এলাকার জল বের করার বিষয় নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি সোয়াদিঘী খাল এলাকা পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে ছিলেন কোলাঘাটের বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ। গত বর্ষার সময়কার নিম্নচাপজনিত প্রবল বর্ষন ও কংসাবতী ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার কারণে মৌজাগুলি বন্যা প্লাবিত হয়েছিল। কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দী হয়েছিল। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও শহীদ মাতঙ্গীনি ব্লকের জল নিকাশির বড় মাধ্যম সোয়াদীঘি ও বাপুর খাল। কিন্তু এই দুটি বড় খাল সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘদিন। তারউপর খালের উপর বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। ফলে জমা জল সহজে বের হতে পারেনা। জেলার পঁচিশটি ব্লকেই কমবেশি জল জমেছে লাগাতার বৃষ্টিতে। পূর্ব মেদিনীপুরের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এক মাসের ব্যবধানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষির। জেলার বিভিন্ন ব্লক এলাকাগুলিতে কৃষকদের কথামতো প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ধান জমি জলের ডুবে গিয়েছে। এগরা গ্রামীণ এলাকায় বাদাম চাষের জমিও জলমগ্ন। অন্যদিকে নন্দকুমার, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল, তমলুক গ্রামীণ প্রভৃতি এলাকায় পান বরোজগুলি ক্ষতিগ্রস্ত। পাঁশকুড়ায় বন্যায় আগেই সবজি ও ফুল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারের বৃষ্টির ফলে দফারফা হয়েছে সবজি ও ফুল চাষে। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া, খেজুরি প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলিতে সিপিআই(এম) নেতা কর্মীরা সহযোগীতা করেছেন। সারাভারত কৃষকসভা ও সারাভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কৃষিজ ফসলের ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করা ও গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একটু একটু করে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে পাঁশকুড়ার মানুষজন। কিন্তু নতুন করে কাঁসাই এর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা এখন। বৃষ্টিতে জলমগ্ন এলাকাগুলি থেকে জল বের হচ্ছেনা। আবারও কি বন্যার কবলে পড়তে হবে? আতঙ্কের প্রহর গুনছে বন্যার্তরা।
Cyclone dana
আশ্রয়হীন বহু, মেলেনি ত্রিপল, ক্ষোভ বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে
×
Comments :0