গল্প
নতুনপাতা
লেনিন সরণি
সৌরভ দত্ত
টুকরো টুকরো পৃথিবীর কথা মনে পড়ছে বিবস্বানের –যুদ্ধ
চলছে–যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখল–ইউক্রেন-রাশিয়া–ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন–ভলগার তীরের স্নিগ্ধ বাতাস যেন এসে মিশছে গঙ্গায়–ছোট্ট ভ্লাদিমির ইলিচের এর দুঃসাহসিক অপরাজেয় কাহিনি সে শুনেছে মাস্টার মশাইয়ের কাছে–সে সময়কার পৃথিবীটা বেশ অন্যরকম ছিল–বন্ধুদের সাথে ডুবসাঁতার– সারাক্ষণ হইচই করে খেলে বেড়ানো–নরম তুলোর মতো বরফের বুকে স্লেজের আলিঙ্গন–ভালবাসাত ছোট্ট লেনিন।
বলিশে রেখে মাথা রেখে রুশ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে থাকে বিবস্বান–মনের ভিতর ইলিচের ছবিটা বড় হয়ে ওঠে–পুশকিন,তুর্গেনিভ,টলস্টয়ের লেখা পড়ে বড় হচ্ছিল ইলিচ–প্রাণবন্ত,চঞ্চল ছেলেটা বাদ দেয়নি চের্নিশেভস্কি,পিসারেভের মতো নিষিদ্ধ গণতন্ত্রীদের লেখাজোকা।'কী কর্তব্য' উপন্যাসের পাতায় চোখ রেখে সেদিন ভূমিদাস নিয়ে প্রশ্ন জন্মেছিল ইলিচের মনে।ভূমিদাস প্রথা, জার শাসনতন্ত্রের কালাকানুন মানতে পারেনি।গ্রামের মেহনতি মানুষ, শ্রমিকদের অবস্থা তখন শোচনীয়।আগ্নেয়গিরির লাভার স্রোতের মতো জেগে উঠছিল লেলিন।সেই থেকে ঘৃণা তৈরি হল শোষকের প্রতি।সেই ঘৃণাকে ব্রহ্মাস্ত্র বানালেন।দাদার আলেকজান্ডারের কাছ থেকে ছোট্ট ইলিচ প্রথম শুনল মার্কসবাদী সাহিত্যের কথা।হঠাৎ একদিন প্রগতিশীল মানুষজনদের সাথে মেশার জন্য কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল ইলিচকে।কারাগারের মোটা দেওয়াল সম্পর্কে সেদিন সতেরো বছরের তরুণ ইলিচ দারোগাকে বলেছিলেন–"দেওয়াল, তবে ঘুণধরা, ধাক্কা দিলেই ভেঙে পড়বে!" মুক্তির পথ খুুঁজতে খুঁজতে একদিন জনস্রোতে হারিয়ে গিয়েছিলেন লেনিন।ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর হয়ে উঠল লেনিনগ্রাদের লড়াই–লালফৌজের পোড়ামাটি নীতি–২১শে জানুয়ারি ১৯২৪ মৃত্যু হয় মহান বিপ্লবীর–২৩ শে জানুয়ারি কফিনে ডঢেকে তাঁর মৃতদেহ আনা হয় মস্কোয়।বিপ্লবীর মৃত্যু নেই,লেনিনের মৃত্যু নেই, তাঁর শিক্ষার মৃত্যু নেই।একশ বছর কাটল–চেতনার অন্তরালে বারবার বেঁচে উঠলেন তিনি।
মাস্টারমশাইয়ের ভাঙাঘরে অনেকগুলো বই–মস্কো প্রকাশন থেকে প্রকাশিত লেনিনের জীবনীর ৫৫ টা খণ্ড বুকে করে আটকে রেখেছিলেন তিনি–সোভিয়েত রাশিয়ার গল্প বলতে বলতে প্রসঙ্গান্তরে রবিঠাকুরের 'রাশিয়ার চিঠি'র কথা চলে আসত। টিউশন ক্লাসে 'রক্তকরবীর' বিশু পাগলের গল্প করত মাস্টার মশাই–অন্ধকারের রাজা আর যক্ষপুরীর ভিতরে পিঠে ৪৭ ফ এর দাগা নিয়ে বেঁচে থাকা ফাগুলালের মতো সর্বহারা মানুষগুলোর কথা।যারা বারো ঘন্টার পরে আরো অতিরিক্ত চার ঘন্টা খেটে মরে।
Comments :0