Story — RAHUL CHATTAPADHAYA / NATUNPATA

গল্প — সুমি আর একটা ফড়িং / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

Story  RAHUL CHATTAPADHAYA  NATUNPATA

গল্প

সুমি আর একটা ফড়িং

রাহুল চট্টোপাধ্যায়


বাইরে খুব রোদ্দুর। রোদে গাছপালা সব ঝলসে যাচ্ছে। তবু ঐ ফড়িওটার বিশ্রাম নেই। ও ঘুরে চলেছে এদিক ওদিক। কুন্দফুলের সবুজ পাতাটার ওপর ফড়িংটা বসে আছে লম্বা ডানাদুটো ছড়িয়ে। ডানাগুলো রঙবাহারি। হলুদ আর খয়েরিতে মেশানো ডানায় কালোর ফুল। সুমু খেলতে খেলতে দাঁড়িয়ে দেখে। ডানাগুলো মাঝেমাঝে তিরতির করে কাঁপছে আবার স্থির হচ্ছে। একবার ফড়িং উড়তে চেষ্টা করছে আবার বসে পড়ছে। বেশ মজা লাগছে সুমুর।

সুমুদের ছাদে বাগান আছে। অনেক ফুল সেখানে। সাদা, গোলাপী হলুদ, লাল, রঙের মেলা বসে। সুমুর মা গাছে জল দেন। গাছগুলোকে চান করিয়ে দেন। ফুলগুলোকে যত্ন করেন। সুমু মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। সেও গাছ আর ফুলের যত্ন করে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। প্রজাপতি ফড়িং যখন আসে তখন তাদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয় তার। আজ ঐ ফড়িং দেখে খুব ভালো লাগলো সুমুর। মনে হল ফড়িং বুঝি তার জন্যই এসেছে। ফড়িং নড়াচড়া করে আর সুমির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুতেই সবুজ পাতাটা থেকে ওড়ে না। সুমি হা হা করে হাসে ফড়িং ডানা নাড়ায়। সুমি নাচলে তিরতির করে ডানা নড়ে ফড়িঙের। সুমি কথা বললে ফড়িং চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। সুমি বকে ফড়িঙকে — কি রে ফড়িং তোর কি বাড়ি নেই? পড়া 
নেই তোর? তোর কি ইস্কুলে যেতে হয় না? "
ফড়িং কোন উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বসে। সুমি আবার চেঁচিয়ে উঠে বলে- 'কি রে এবার কি লাঠি এনে মারতে হবে তোকে? ফড়িং আবার অন্যদিকে ঘুরে বসে। সুমি এবার সত্যিই তার বইটা এনে ফড়িঙের সামনে ধরে আর বলে- এই বইটা পড়, পড়তেই হবে তোকে নয়তো খুব বকবো — 
ফড়িং এবার ডানাটা কাঁপলো । সুমি ভাবলো, এবার ফড়িং ভয় পেয়েছে নয়তো ওর পড়ার কথা মনে পড়েছে। সুমি আবার হা হা করে হাসতে লাগলো। 
ফড়িং তখন সত্যিই উড়তে শুরু করলো। সে উড়লো সুমিদের বাড়ির সীমা পেরিয়ে বিস্তৃত আকাশে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আর তাকে দেখা গেল না। সুমি
তাকিয়ে দেখতে থাকলো আকাশের এ দিক ও দিক। আকাশের রঙ তখন তীব্র হলুদ। সুমি বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না। মনটা ভার খারাপ হয়ে 
গেল। যদি ফড়িং আর কখনো না আসে, যদি তাদের পাশের পপিদের বাড়ির ছাদে এসে বসে। ওদের ছাদেও তো অনেক গাছ, অনেক ফুল! সুমি 
বোধহয় বেশি থকে ফেলেছে ফড়িঙকে।


সুমি কান্নাভেজা চোখে ছুটে যায় মায়ের কাছে। মা সুমির চোখ মুছিয়ে দেন, বলেন — সুমি, কাঁদিস না, ফড়িং আবার আসবে ও চলে গেছে ইস্কুলে ওকে তো 
পড়তে হবে, শিখতে হবে কেমন করে আরও ভালো উড়তে হয়।' 
সুমির কান্না খামে। চোখ মুছতে মুছতে আবার সে দৌড়ে চলে যায় গাছগুলোর কাছে।

 

 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment