Tapas Saha arrest

তল্লাশির পরে আটক আরেক তৃণমূল বিধায়ক

রাজ্য

দুপুর পেরিয়ে রাত, চলছে টানা তল্লাশি ও জেরা। চারদিন আগে সেই বড়ঞার তৃণমূলী বিধায়ক জীবন সাহাকে গ্রেপ্তারের আগে সেই বাড়ি ঘিরে তল্লাশি, জেরার ছবিই যেন ফের উঠে এল। এবার তেহট্টে তৃণমূলী বিধায়ক তাপস সাহার বাড়িতে চলছে রাতভর তল্লাশি জেরা। 
রাতেই তাপস সাহাকে গাড়িতে চাপিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা বেতাইয়ে যান। অন্যদিকে তাপস সাহার আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়াল সহ ঘনিষ্ঠ তিনজনের হাওড়ার বাড়িতে রাতেই হানা সিবিআই-এর তদন্তকারী আধিকারিকদের আরও তিনটি দলের। রাতেই তৃণমূলী বিধায়ক তাপস সাহার গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা বাড়ছে। 
কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেই তেহট্টের কড়ুইগাছির বাসিন্দারাই সংবাদমাধ্যের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছিলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি। যোগ্য ছেলেমেয়ের বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে চাকরি  বিক্রির চক্র চলেছে। আমরাও কিছু জানাতে চাই।
আদালতের নির্দেশের তিন দিনের মাথায় নদীয়ার তেহট্টে তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বাড়িতে, বিধায়ক অফিসে ম্যারাথন তল্লাশি ও জেরা সিবিআই-এর। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দফায় দফায় জেরার পরে তৃণমূলী বিধায়ক তাপস সাহাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। জানা গেছে গাড়িতে চাপিয়ে বিধায়ক তাপস সাহাকে নিয়ে  যাওয়া হয় বেতাইয়ে ডক্টর বি আর আম্বেদকর কলেজে। এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তিনি। রাত নটা নাগাদ জানা যায় এই তৃণমূলী বিধায়ককে আটক করেছে সিবিআই, রাতেই সম্ভবত শাসক তৃণমূলের এই বিধায়ক গ্রেপ্তার হতে চলেছেন। 
শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটার সময় পাঁচটি গাড়িতে করে ১২জন সিবিআই আধিকারিক পৌঁছায় তেহট্টের কড়ুইগাছিতে বিধায়ক তাপস সাহার বাড়িতে। বাড়ি লাগোয়াই তাঁর বিধায়ক অফিস। এখান থেকেই চলছে প্রাইমারি, এসএসসি-র পাশাপাশি একাধিক সরকারি দপ্তরে, দমকলে নিয়োগ দুর্নীতির কারবার।
যদিও সিবিআই দুপুরে তেহট্টে পৌঁছানোর আগেই এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা অভিযোগ করে বিধায়ককে সন্দেহজনক ভাবে এদিন দুপুরেই বাড়ির পিছনে পুকুর পাড়ে দেখা গেছে। একটি ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে সোশাল মিডিয়ায়। তবে কি বড়ঞার বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহার মতো তেহট্টে তাপস সাহাকাণ্ডে সেই পুকুর রহস্য? স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়ে চাঞ্চল্য।
তল্লাশির আগে তাপস সাহার বাড়ি ও বিধায়ক কার্যালয় ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়ির পিছনে পুকুর চত্বরেও মোতায়েন হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেখানেই পুকুরের পাড়ে একটি গাছের পাশে নজরে আসে কিছু পোড়া কাগজপত্রর ছবি। এদিন সকালেই তা পোড়ানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখান থেকেও বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। তাহলে এদিন সকালেই কোন নথি পোড়ানো হয়েছে? তদন্তকারী সংস্থার তরফে যদিও এদিন বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
তবে জীবন সাহার গ্রেপ্তারিতে যেভাবে সিবিআইয়ের অসতর্কতায় বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফলে নথি নষ্ট করার চেষ্টা চলে তারপরে এদিনের তল্লাশিতে সতর্ক সিবিআই বাড়িতে ঢুকে আগেই তাপস সাহার দু’টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে নেয়। এদিন প্রথমে তাপস সাহার বিধায়ক কার্যালয়ে হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেখানকার বেশ কিছু নথি খতিয়ে দেখা হয়। পরে বিধায়ক কার্যালয়ের ঠিক পাশে তাঁর বাড়িতে তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই সদর দরজা তালাবন্ধ করে দেন তদন্তকারীরা। সেখান কিছুক্ষণ তল্লাশি চালানোর পরে বিকালে ফের তাঁকে অফিসে নিয়ে আসা হয়। অফিসে থাকে চারটে ভল্ট ভাঙে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেখান থেকেও বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়। তারপর ফের তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয়।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে বারোজনের তদন্তকারী আধিকারিকদের মধ্য গোরু পাচারকাণ্ডের তদন্তকারী আধিকারিকও রয়েছেন। তাহলে কি নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি গোরু পাচারকাণ্ডেও জেরার মুখ এই তৃণমূলী বিধায়ক? 
এদিকে সন্ধ্যায় যখন তেহট্টের বাড়িতে তল্লাশি ও জেরা চলছে সেই সময়তেই সিবিআই আধিকারিকদের আরও তিনটি দল একযোগে হাওড়া শ্যামপুরে তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালায়। শ্যামপুরেই বাড়ি তাপস সাহার আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়ালের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। প্রবীর কয়ালের আত্মীয় শ্যামল কয়লা এবং সুনীল মণ্ডল নামে আরেক ঘনিষ্ঠের বাড়িতেও হানা সিবিআইয়ের, এদিন রাতেই। জানা যায় তাপস সাহাকে জেরা করেই মেলা তথ্যের ভিত্তিতে এই হানা। 
গত বছরই তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসে। অভিযোগ তোলেন তৃণমূলেরই শ্যামনগরের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যকে ইউসুফ মিলিটারি। দলের কর্মীদের একাধিক চিঠি যায় এমনকি অভিষেক ব্যানার্জির অফিসেও। সরকারি চাকরির টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক ও তাঁর আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়াল। সিবিআই তদন্ত ঠেকাতে তড়িঘড়ি সেই তদন্ত হাতে নেয় সিআইডি। তদন্তে নেমে প্রবীর কয়াল সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিওএ তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহাকে গ্রেপ্তার করেনি সিআইডি।
এরপরে গত মঙ্গলবার এই তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগের মামলায় সিবিআই’কে তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মামলায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই নির্দেশ দেন। চাকরির বিনিময়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাপস সাহার বিরুদ্ধে, মামলাও হয়। সেই দুর্নীতির তদন্ত করছিল রাজ্য পুলিশ। শুধু ৫ কোটি নয়, তাপস সাহার বিরুদ্ধে এর আগে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রায় ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment