Lokayukt Bengal

অস্তিত্বহীন করে রাখতে রাজ্যে মেয়াদ বাড়ল লোকায়ুক্তের

রাজ্য

Lokayukt Bengal

সরকারি পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ লোকায়ুক্তকেই পদে রেখে দিতে আইনে সংশোধন করছে রাজ্য সরকার। 

এতদিন লোকায়ুক্তের মেয়াদ ছিল তিন বছরের। ২০১৯ সালে লোকায়ুক্তের পদে প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়কে বসিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে লোকায়ুক্ত আইনের একটি সংশোধনী বিলে লোকায়ুক্তের পুনর্নিয়োগের সুযোগ করে দিয়ে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়াদ করে দেওয়া হয়েছে। 

মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নিচতলা পর্যন্ত পদাধিকারীদের দুর্নীতির তদন্ত করে শাস্তির সুপারিশ করার জন্য ২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিল পাস করিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার, পরের বছর তা রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেয়ে আইনে পরিণত হয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের তৈরি সেই আইনে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের সব মন্ত্রীরা, পৌরসভা থেকে শুরু করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব জনপ্রতিনিধিরা লোকায়ুক্তের তদন্তের আওতায় পড়তেন।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রথম লোকায়ুক্ত নিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি সরকারে আসার পরে দীর্ঘদিন লোকায়ুক্ত কার্যত অস্তিত্বহীন করে রেখেছিলেন। 

সুপ্রিম কোর্টের চাপে পড়ে রাজ্য সরকার ফের লোকায়ুক্ত নিযুক্ত করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তার আগে ২০১৮ সালে বিধানসভায় লোকায়ুক্ত আইনের সংশোধন করে মমতা ব্যানার্জি আইনটির ঢাল তরোয়াল কেড়ে নেন। নতুন আইন অনুসারে, জনশৃঙ্খলার (পাবলিক অর্ডার) সঙ্গে জড়িত কোনো বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবে না লোকায়ুক্তের কাছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হলে বিধানসভায় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাব পাস করাতে হবে। 

এরপরে মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়কে লোকায়ুক্ত পদে নিয়োগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। 

সদ্য যাত্রা শুরু করা লোকায়ুক্ত সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে যথাক্রমে অভিযোগ জমা পড়েছিল ৪৬ এবং ৭১টি। নিষ্পত্তি করা হয়েছিল যথাক্রমে ৩৪ এবং ৬৬টির। সমাজকর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামী তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্ন করলে তাঁকে জানানো হয়েছে, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ সালে রাজ্যে লোকায়ুক্তের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়নি। ২০১৫ সালে দুটি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৯ সালে ১১টি এবং ২০২০ সালে ৪টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু সরকারী পদাধিকারী একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও লোকায়ুক্ত শাস্তির কোনো সুপারিশ করেনি। আইন অনুসারে অভিযোগ জমা পড়ার একবছর পরে তা স্বাভাবিকভাবেই তামাদি হয়ে যায়, এভাবেই পরিণতিপ্রাপ্তি হচ্ছে অভিযোগের।

মঙ্গলবার বিধানসভায় সংশোধনী বিল এনে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি কম হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের লোকায়ুক্তের কাছে অভিযোগ কম। অন্যদিকে বিশ্বনাথ গোস্বামী মনে করেন, ‘লোকায়ুক্তের পারফরম্যান্স দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এই আইন সংশোধনীর ফলে লোকায়ুক্তের মাধ্যমে দুর্নীতির ওপর নজরদারি বলে কিছু থাকবে না।

Comments :0

Login to leave a comment