Tripura LF Cong

জনজমায়েতেরও ডাক দিল বামফ্রন্ট, কংগ্রেস

জাতীয়

 বিজেপি’র পরাজয় অবধারিত। হতাশায় নিমজ্জিত কর্মীদের চাঙা করতেই বুথফেরত সমীক্ষা। বললেন, সিপিআই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এক আবেদনে তিনি বলেন, অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে মানুষ যে ভোট দিয়েছেন, তাকে ভন্ডুল করার যে কোনও চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। গণতন্ত্র এবং শান্তির শিবিরের সমস্ত সৈনিকদের তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, গণনা কেন্দ্রে যারা কাউন্টিং এজেন্ট হিসাবে থাকবেন, গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করাই তাদের দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে ত্রিপুরার ৪০ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে তাঁরা যাচ্ছেন। 
জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, জনগণের কাছে আমার আবেদন, ইতিমধ্যেই বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও আবেদন জানানো হয়েছে সকাল ৮টা থেকে ২১টি গণনা কেন্দ্রের বাইরে জমায়েত হোন। ষড়যন্ত্রকারী কোন বেশে আসবে আমরা জানি না। কিন্তু মানুষই শেষ কথা বলে এটা আমরা জানি। মানুষ যেখানে সঙ্ঘবদ্ধ, মানুষ যেখানে বেশি বেশি আসবে, সেখানে ষড়যন্ত্রকারী যে কৌশলেই আসুক, জনগণের কলরবে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, গত পাঁচ বছরের মতো কোনও হিংসা, সন্ত্রাসের ঘটনা যাতে রাজ্যের কোথাও না হয়, তা দেখতে হবে বলেও তিনি কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। 
উল্লেখ্য, সোমবার নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ের ভোট শেষ হওয়ার পরে চারটি সংস্থা বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করে। পাশাপাশি ভোট শেষ হওয়ার আগেই ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একটি বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। তাতে ৬০টির মধ্যে বিজেপি’কে ৪৯টি আসন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গতবারের থেকেও বেশি। জাতীয় স্তরের সংস্থাগুলির সমীক্ষার কোনও কোনোটিও বিজেপি’র বিপুল জয় দেখিয়েছে। এদিনের বার্তায় জীতেন্দ্র চৌধুরি এইধরনের সমীক্ষার নিরপেক্ষতা এবং সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।  
তিনি বলেন, বুথফেরত সমীক্ষা শুরুতে যারা করতেন বাস্তবতা থাকত, পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে রাজনীতিকে অর্থবল, বাহুবল এবং আরও বিভিন্ন কায়দায় কবজা করার বেপরোয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে। তারই সূত্র ধরে ওপিনিয়ন পোল এবং এক্সিট পোলের আর কোনও নিরপেক্ষতা নেই। তিনি বলেন, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই সোমবার বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ওপিনিয়ন পোলও করে গিয়েছিলেন। সময়ের আগেই রাজ্য সরকারের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে। এরা প্রায় একই সুরে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে কথা বলেছে। রাজ্যের পরিস্থিতি মানুষ যেমন দেখছেন তার বাইরে গিয়ে তাদের উপরে এই মতামত চাপিয়ে দিয়েছেন। ২০১৮ সালে বিজেপি যত আসন জিততে পারেনি, তার থেকেও বেশি আসন জিতবে বলে দেখানো হচ্ছে। 
তিনি বলেন, একটা রাজ্যের ভোট হলেও ঘটনার প্রেক্ষিতে সর্বভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা যাবে কিনা, তা এই নির্বাচনের সময় আলোচ্য হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র রক্ষা, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা, স্তব্ধ উন্নয়নকে চালু করা, অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ যাতে কথা বলতে পারে তার চ্যালেঞ্জ হিসাবে এই নির্বাচন উপস্থিত হয়েছিল। এটার পক্ষে বামপন্থীরা এবং অন্য সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। অন্যদিকে, বিজেপি গণতন্ত্র নিধনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। মানুষ পাঁচ বছর ধরে দেখেছে যে কীভাবে লোকসভা, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, নগর পঞ্চায়েত এবং সর্বশেষ বিধানসভার চার আসনের উপনির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন করে, মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দিয়ে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দিয়ে, দিবালোকে সন্ত্রাসের অমাবস্যা নামিয়ে এনে ছাপ্পাভোটের সংস্কৃতি নামিয়ে এনেছিল। এভাবেই তারা ভেবেছিল সন্ত্রাসনির্ভর এবং কিছু দলদাস আমলাকে ব্যবহার করে আরেকটা প্রহসনাত্মক নির্বাচন করে বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হবে। বিপরীতে সিপিআই (এম) সহ বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস মানুষকে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার আহ্বান জানায়। নির্বাচন কমিশনও ভালো ভূমিকা নিয়েছে। ফলে নানা চেষ্টা করেও বিজেপি সন্ত্রাস কায়েম করতে পারেনি। কারণ, ত্রিপুরার মানুষ সাহসে ভর করে ভোট দিয়েছেন। ৯০ শতাংশের বেশি। ভোটদানের পর থেকে গোটা ত্রিপুরা রাজ্যে মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। ফলে বিজেপি হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে বলাবলি চলছিল মিডিয়াকে ব্যবহার করে শাসক দলকে চাঙা করার এক্সিট পোল আনবে। বুথফেরত সমীক্ষা সেই কাজই করার চেষ্টা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment