উৎসবে অনুভবে
মণ্ডা মিঠাই
দুর্গোৎসবের আড়ালে শিল্পীর সাধনা ও অর্থনীতির আলো
অরিজিৎ মিত্র
নতুনপাতা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩
বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। শরতের আকাশে সাদা কাশফুল দুলতে শুরু করলেই বাঙালির মনে জাগে আনন্দের ঢেউ। ঢাকের বাদ্যি, আলোকসজ্জার ঝলক, মণ্ডপে ভিড়, প্রতিমার মহিমা—সব মিলিয়ে এ যেন এক অন্য পৃথিবী। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, এই অপূর্ব উৎসবের অন্তরালে কারা আছেন? দেবী দুর্গার রূপমাধুর্য, মণ্ডপের কারুকাজ, কিংবা আলো-ঝলমলে শহরের সাজ—এসব কিছুই আসলে সম্ভব হয়েছে এক অজস্র শিল্পীর শ্রম, ঘাম এবং সাধনার ফলে। আবার এই উৎসবই আমাদের অর্থনীতিকে নতুন গতিপথ দেয়, অসংখ্য মানুষের জীবনে আনে উপার্জনের সম্ভাবনা। তাই দুর্গোৎসব আসলে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি শিল্প আর অর্থনীতির এক মহামিলন।
শিল্পীর অবদান
প্রতিমার শিল্প
প্রতিটি দুর্গা প্রতিমার সামনে দাঁড়ালেই মনে হয় দেবী যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। চোখে করুণাময় দৃষ্টি, হাতে অস্ত্র, মহিষাসুর বধের ভঙ্গি—সবকিছু এত জীবন্ত যে দর্শক মুগ্ধ হয়ে যায়। অথচ এই জীবন্ত ভাবনার জন্মদাতা হলেন সেই শিল্পী, যিনি খড়, বাঁশ আর মাটি দিয়ে দেবীর দেহ গড়ে তুলেছেন। কুমোরটুলির অন্ধকার গলি কিংবা গ্রামবাংলার ছোট্ট কারখানায় দিনের পর দিন মাটির সঙ্গে লড়াই করে তিনি প্রতিমাকে জীবন্ত করে তোলেন।
শ্রম ও সাধনার ফল
শিল্পীর জীবন সহজ নয়। মেঘলা দিনে কিংবা ঝড়বৃষ্টির রাতে, তাঁকে নিরন্তর কাজ চালিয়ে যেতে হয়। প্রতিটি রেখা, প্রতিটি আঙুলের বাঁক, প্রতিটি চোখের দৃষ্টি—সবই তাঁর ধৈর্য ও পরিশ্রমের ফসল। অজস্র রাত জেগে, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলে, তাঁরা গড়ে তোলেন সেই প্রতিমা যা সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হই।
মণ্ডপশিল্পের বিস্ময়
শুধু প্রতিমা নয়, দুর্গাপূজার মণ্ডপও এক আশ্চর্য সৃষ্টিকর্ম। রাজপ্রাসাদ, মন্দির, গুহা, কিংবা সমসাময়িক কোনো থিম—সবই শিল্পীর কল্পনা থেকে বাস্তবে আসে। বাঁশ, কাঠ, কাপড়, তোরণ, আলো—এইসব উপাদান দিয়ে গড়ে ওঠে একেকটি স্বপ্নরাজ্য। মানুষ ভিড় করে আসে সেই স্বপ্নরাজ্যে প্রবেশ করতে, ছবি তুলতে, সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
অদৃশ্য নায়ক
তবুও দুঃখের বিষয়, উৎসব শেষে যখন প্রতিমা বিসর্জনের জলে ভেসে যায়, আলো নিভে যায়, মণ্ডপ ভেঙে পড়ে, তখন শিল্পীর নামটুকু থেকে যায় বিস্মৃতির অন্ধকারে। সমাজ তাঁর সৃজনশীলতাকে উপভোগ করলেও তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান প্রায়ই দেয় না। দুর্গোৎসব তাই আমাদের চোখ খুলে দেয়—দেবীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উচিত শিল্পীর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করা।
সমাপ্ত আগামীকাল
নতুন বন্ধু , নবম শ্রেণী কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা কল্যাণ নগর খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
Comments :0