UTTARKANNAYA AVIJAN

পুলিশের নির্মম আক্রমণ, জলকামান রুখেই উত্তরকন্যা অভিযান

রাজ্য

UTTARKANNAYA AVIJAN

অনিন্দিতা দত্ত


সরকার  অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করলে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার পরিবর্তন করার পথ অবলম্বন করা হবে।  সোমবার এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল শিক্ষক শিক্ষিকারা। জলকামানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ইতিহাস গড়লেন তাঁরা। উত্তরকন্যা অভিযানকে সামনে রেখে এবিটিএ ও এবিপিটিএ’র যৌথ উদ্যোগে সংগঠিত সুবিশাল মিছিলের ওপর আঘাত হানে মমতা ব্যানার্জি’র পুলিশ বাহিনী। 
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০কার্যকর করা চলবে না, শিক্ষাস্বার্থ বিরোধী এই বিল প্রত্যাহার করা সহ ১২দফা দাবিতে সোমবার উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন  শিক্ষক শিক্ষিকারা। সেই মিছিলের ওপর নির্মম আক্রমণ চালায় পুলিশ। বিক্ষিপ্তভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে শিক্ষক শিক্ষিকাদের  পায়ে লাথি মারা ও চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া করারও  অভিযোগ উঠেছে। 


শিক্ষকদের স্বচ্ছ নিয়োগ ও বকেয়া মহার্ঘ্যভাতার দাবিতে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল হন বহু শিক্ষক শিক্ষিকা। কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকাদের সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া সহ ৩৬ শতাংশ মহার্ঘভাতা প্রদান করার দাবিতে আসা শিক্ষক শিক্ষিকাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান চালায়। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি ও নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে এদিন দুপুরে উত্তরবঙ্গ জমায়েত ও উত্তরকন্যা অভিযান কর্মসূচিকে ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্র পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় শিলিগুড়ি শহরের তিনবাত্তি মোড় এলাকা। 


পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অনুমতি নেওয়া স্বত্ত্বেও কেন এদিন শিক্ষক শিক্ষিকাদের মিছিলের ওপরে প্রশাসনের জঘন্য আক্রমণ নামিয়ে আনা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এদিন বাসে ট্রেনে চেপে দলে দলে শিক্ষক শিক্ষিকারা এসেছেন। সকাল থেকেই শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, মালদা, উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা শিলিগুড়ি নৌকাঘাট মোড় ও পিডব্লিউডি মোড়ে জময়েত হতে শুরু করেন। 


পিডব্লিউ ডি মোড় থেকে দুপুর একটা নাগাদ শিক্ষক শিক্ষিকাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হয়। তিনবাত্তি মোড়ে কাছে পুলিশের তরফে বিশাল ব্যারিকেড গড়ে তুলে উত্তরকন্যা যাবার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। নৌকাঘাট পেরিয়ে মিছিল তিনবাত্তি মোড়ের দিকে এগোতেই প্রশাসনের তরফে  মিছিল আটকানো হয়।  মিছিল বাধাপ্রাপ্ত হতেই পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায়। ন্যায্য দাবি আদায়ে অভিযানকারীদের অনেকেই রাস্তার ওপর বসে পড়েন। শিক্ষক শিক্ষিকারা আবেদন জানিয়েছিলেন ন্যায্য দাবিতে উত্তরকন্যায় তারা দাবিপত্র পেশ করে আলোচনা করতে যাবেন। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন কোন কথা কানে তোলেনি। তিনবাত্তি হিন্দি জুনিয়ার স্কুল মাঠে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মিছিলকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা হয় প্রশাসনের তরফে। তাতেও কাজ না হওয়ায়  মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান চালায় পুলিশ। 
এরপর তিনবাত্তি জুনিয়ার স্কুলের মাঠে সভা করেন শিক্ষকরা। কয়েক হাজার শিক্ষক শিক্ষিকার উপস্থিতিতে পুলিসের বর্বরোচিত হামলার তীব্র ধিক্কার জানিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, পুলিসের ওপর নির্দেশ আছে যেকোন শান্তিপূর্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভেঙে দিতে হবে। শিক্ষা এবং পুলিসের দৃষ্টি দুইয়ের মধ্যে বৈরীতা আছে। আজকের ঘটনার পরে প্রমানিত হয়েছে এরাজ্যে সভ্য সরকার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। 

 


এছাড়াও সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এবিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন, এবিপিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবশেখর মন্ডল, এবিটিএ’র সভাপতি সুদিপ্ত গুপ্ত ও এবিপিটিএ’র সভাপতি মোহনদাস পন্ডিত। সুদীপ্ত গুপ্ত ও মোহনদাস পন্ডিতকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী সভার কাজ পরিচালনা করেন। 
সভা চলাকালীন এবিটিএ এবং এবিপিটিএ’র প্রতিনিধিদল উত্তরকন্যায় পৌঁছে প্রশাসনের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। 
স্বচ্ছতার সাথে শূন্য পদে শিক্ষক শিক্ষা কর্মী নিয়োগ, কেন্দ্রীয় হারে সমস্ত বকেয়া সহ ডিএ প্রদান,  প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করা সহ ১২দফা দাবিতে  মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।  প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন সুকুমার পাইন, সুজিত দাস, বিদ্যুৎ রাজগুরু, মহম্মদ আলাউদ্দীন ও শ্যামলী হালদাস।

ছবি রাজু ভট্টাচার্য
 

Comments :0

Login to leave a comment