Howrah

অতিরিক্ত আবর্জনার চাপেই হাওড়ার ধস বললেন বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা

রাজ্য

কোন নিয়ম না মেনে অবৈজ্ঞানিক ভাবে দিনের পর দিন আবর্জনা ডাম্পিং করার ফলে মাটির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবার ফলেই ধস নেমেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা। সোমবার হাওড়ার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা। ডাম্পিং গ্রাউন্ড ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন তারা। কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে  সিদ্ধার্থ দত্ত ও তপন সাহা জানান, অতিরিক্ত আবর্জনার চাপেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ধস নেমেছে। আবর্জনার ভিতরে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস স্তূপীকৃত আবর্জনা পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি করেছে। আবর্জনার চাপে নরম হয়েছে নীচের মাটি। আর সেই ফাটল থেকেই এই বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানান বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা। এদিনও ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশে মানুষের বসবাসের ঘরে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘর বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসছেন মানুষজন। সোমবার সকালে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এসে ঘর বাড়ি খালি করার কথা বলা মাত্র প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন স্থানীয় মহিলা। স্থায়ী পুনর্বাসন না পেলে এলাকা ছাড়বেন না বলে জানান মহিলারা। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড চাওয়া মাত্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়! ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা কেউ এই অঞ্চল ছেড়ে যাবেন না। অপর দিকে বেলা বাড়ার সাথে আবর্জনা বোঝাই লরি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আসা মাত্র নতুন করে আবর্জনা আর ফেলতে দেওয়া হবে না বলে লরি আটকায় স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় স্থানীয়দের। যেখানে অতিরিক্ত আবর্জনার কারণেই এই ধস হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষ্যরা, সেখানে নতুন করে আবর্জনা ফেলা কোন মতেই মানা হবে না বলে জানান স্থানীয়রা। এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশেই আবার নতুন করে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। 
প্রতি দিন ৯০০ থেকে ৯৫০ টন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বেলগাছিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। যেখানে হাওড়া পৌর অঞ্চল ছাড়াও বেআইনিভাবে কমার্শিয়াল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য পদার্থ ফেলা হচ্ছে। ফলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অতিরিক্ত বিশাল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ জমছে। নিয়ম হচ্ছে প্রতি নিয়ত এই জমা বর্জ্যের জলীয় অংশ বার করে দিতে হয় এবং জমা জঞ্জালের নিচুস্তর পর্যন্ত পাইপ লাগিয়ে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস বের করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে তা সঠিকভাবে না করার ফলে জঞ্জালের চাপ বেড়ে গেছে ও ধস নামতে শুরু হয়েছে। আগামী দিনে সঠিক পরিকল্পনা না করলে এর থেকে আর ও বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 
চারদিন কেটে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবারেও এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আসেন রাজ্যের পৌর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি চলে যাবার পর আসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বাসিন্দাদের অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেশাগার করেই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে না দাড়িয়ে শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা পেতেই দুইজন এসেছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিকল্প পুনর্বাসন না পেয়ে কোনভাবেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যাবেন না বলে বলে জানান বেলগাছিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। 

Comments :0

Login to leave a comment