Bidi Workers

মজুরি বাড়বে কবে প্রশ্ন বিড়ি মহল্লায়

ফিচার পাতা

অনির্বাণ দে
বাজেটের কোপে বিড়ি মহল্লা। দাম বেড়েছে বাজারে। কিন্তু পাল্লা দিতে কোথায় আমদানি ? প্রশ্ন বিড়ি মুর্শিদাবাদের বিড়ি মহল্লার। বাজেট এসেছে, বাজেট গিয়েছে। আর বাজেটের আগে পরে এসেছে ভোটের পর ভোট। কিন্তু কেউ রাখেনি কথা। 
বেড়েছে চাল, ডালের দাম। মজুরি বাড়বে কবে ? প্রশ্ন সাগরদিঘির পাটকেলডাঙার মিলনতারা খাতুনের। সেই সমাবেশে গিয়েছিলেন বিড়ি শ্রমিক মিলনতারা। ফিরেছিলেন অনেক আশা নিয়ে। সেটা ছিল আগের বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি। হেলিকাপ্টারে উড়ে সাগরিদিঘি এসেছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তৃণমূলের ‘সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক’ তিনি। তৃণমূলের নির্বাচনী  মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি হবে ২৪০ টাকা। দেড় মাসের মধ্যে মজুরি বাড়বে বলে ঘোষণাও করেন তিনি। সাক্ষী রেখেছিলেন, তৃণমূলের বিড়ি মালিক নেতাদের। এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে এক টাকাও মজুরি বাড়েনি, বলছেন মিলনতারা।
সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন মিলনতারা। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই  তৃণমূল ছেড়েছেন। 
সামনে লোকসভা নির্বাচন। কয়েকদিন পরেই বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে দেওয়া হবে পাড়ায় পাড়ায়। বলছেন সাগরদিঘির কাবিলপুরের আসমানি খাতুন, টুসি বেওয়ারা। কেন ? অভিজ্ঞতা থেকে এটাই এতদিন দেখে এসেছেন। বলছেন তারা।
বর্তমানে জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। যিনি তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও। আক্ষরিক অর্থেই এলাকার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তিনিও একজন বিড়ি মালিক। সেটাই তার মূল পরিচয়। এক সময় শ্রম দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন জাকির। শুধু জাকির, খলিলুরই নয়। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানার পরিবারও বিড়ি মালিক। বিড়ি শ্রমিকদের শোষণ করেই চলে এলাকার সাংসদ থেকে জঙ্গিপুর মহকুমার অধিকাংশ  বিধায়ক, তৃণমূল নেতাদের মূল অর্থনীতি। অভিযোগ এভাবেই বিড়ি শ্রমিকদের শোষণ করে  একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ গড়ছেন বিড়ি মালিকরা। তাই, মজুরির প্রশ্নেও নীরব তৃণমূল। এটাই বলছে বিড়ি মহল্লা।
যদিও ভোটের আগেই শাসক দলের নেতারা বিড়ি শ্রমিকদের জন্য প্রতিশ্রুতি বিলোবেন। যদিও সেসবে বিশ্বাস করতে নারাজ সাগরদিঘি থেকে রঘুনাথগঞ্জের বিড়ি শ্রমিকরা। জোতকমলের খুরশিদা বিবির কথায়, ‘ভোট এলেই বিড়ি মালিকরা বলবেন, এতো দান-ধ্যান করি। তোমরা ভোট দাও। দানতো আমাদের টাকাতেই’। বিড়ি মালিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবি উঠলেই বলছেন লাভ নেই। কিন্তু মালিকদের অর্থ আর প্রতিপত্তি প্রতিদিন বেড়েই চলছে।  
এক হাজার বিড়ি বাঁধতে সময় লাগে প্রায় দেড় দিন। সেই বিড়ি বেঁধে কোথাও মেলে দেড়শো টাকা কোথাও একশো ষাট। তার উপর আছে, ‘ছাঁটপট্টি’ বিড়ি। অর্থাৎ হাজার বিড়ি পিছু দুমুঠো, তিন মুঠো বিড়ি বাড়তি দিতে হয়। যার কোনও মজুরিই পাওয়া যায় না। এটা তো দিনে দুপরে ডাকাতি। যা মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে হয়। একই অভিজ্ঞতা সুতির আসমা খাতুনের। আসমা প্রতিদিন দুই ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে বিড়ি বাঁধতে বসেন। স্বামী আসরাফ আলম থাকেন কর্নাটকে। কোভিডের পর স্বামীরও কাজ কমে গিয়েছে, বলছেন আসমা। এদিকে বিড়ির কাজও সপ্তাহে সাতদিন পাওয়া যাচ্ছে না। দুই ছেলেকে বড় করবো কীভাবে ? প্রশ্ন আসমার। কিন্তু কত মজুরি পাওয়ার কথা বিড়ি শ্রমিকদের? ২০২৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু সেই তালিকায় বিড়ি শ্রমিকদের কোনও উল্লেখই নেই। 
২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলীর বাইরের জেলাগুলিতে বিড়ি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়েছিল ২৬৭ টাকা ৪৪ পয়সা। কিন্তু সেই মজুরি কোনোদিনই পাননি শ্রমিকরা। ন্যূনতম মজুরি চালু করার জন্য রয়েছে রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তর। যদিও বিড়ি শ্রমিকদের দিকে নজর নেই সরকারের।
তাদের মজুরি নির্ধারিত হয় বিড়ি শ্রমিক সংগঠন ও বিড়ি মালিক সংগঠনগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে। 
২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ বারের মতো হয়েছে শ্রমিক মালিক দুই পক্ষের  চুক্তি। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে সেই চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী ১৭৮ টাকা মজুরি পাওয়ার কথা বিড়ি শ্রমিকদের। কিন্তু কমতে কমতে মজুরি এসে দাঁড়িয়েছে দেড়শো টাকার আশপাশে। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন মিলছে কাজ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছে বিড়ি মহল্লা।
সিআইটিইউ অনুমোদিত  ওয়েস্ট বেঙ্গল বিড়ি অ্যান্ড টোবাকো ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি জ্যোতিরূপ ব্যানার্জি জানিয়েছেন, নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ২ মার্চ থেকে ১০ মার্চ প্রতিদিন রাস্তায় নেমেছেন রাজ্যের বিড়ি শ্রমিকরা। দাবি, হাজার বিড়িপিছু ২৬৮ টাকা মজুরি দিতে হবে। সব শ্রমিককে পিএফএ’র আওতায় আনতে হবে। রাজ্যেজুড়ে কোথাও  শ্রম দপ্তর, বিডিও অফিসে দেওয়া হচ্ছে ডেপুটেশন।  ৪ মার্চ অওরঙ্গাবাদে বিড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের সামনে দিনভর বিক্ষোভে বসবেন শ্রমিকরা। ৬ তারিখ বিক্ষোভ হবে ধুলিয়ানে বিড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের সামনে। লড়াই ছাড়েননি শ্রমিকরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment