Water crisis

রাজ্য জুড়েই তীব্র জলের সঙ্কট, বহু জায়গায় অবরোধ, বিক্ষোভ

রাজ্য

 রাজ্যজুড়েই তীব্র জলকষ্ট, নাজেহাল সাধারণ মানুষ। কলকাতা সহ জেলায় জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষোভ বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধের ঘটনা। বারবার নলকূপ সারানো, পাম্প হাউস, পুকুর সংস্কারের আবেদন করেও হচ্ছে না কাজ। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত বা পৌরসভার পক্ষ থেকে মিলছে শুধুই প্রতিশ্রুতি। শুক্রবার হুগলির দেবানন্দপুরে রাস্তা অবরোধ করেন সেখানকার বাসিন্দারা। জলের সমস্যা না মেটালে গ্রামের কেউ পঞ্চায়েতে ভোট দিতে যাবেন না বলে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। 
এদিন জলের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে পুরুলিয়ার কাশীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা, জলপাইগুড়ি সদর সহ বিভিন্ন জেলার আরও নানা স্থানে। জলের পাম্প না সারিয়ে খরচের হিসেব দেখিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে চন্দ্রকোনায়। কলকাতাতেও প্রায় একই চিত্র, এলাকায় এলাকায় বাড়ছে ক্ষোভ। জলের চাপ কমে যাওয়ায় বহু বাড়িতে পর্যাপ্ত জল মিলছে না। জল না পেয়ে এদিন হুগলির দেবানন্দপুরে রাস্তা অবরোধ করলেন বাসিন্দারা। গত কয়েক মাস ধরে পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার দেবানন্দপুরের বিশালক্ষ্মীতলা, মালপাড়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ৪ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে জলের লাইনের জন্য। কিন্তু জল সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। অনেক বাড়িতে জল পৌঁছায় না। পঞ্চায়েত এলাকার জনপ্রতিনিধি এমনকি বিধায়ককেও জানানো হয়েছে কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার এলাকা ঘুরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জলের সমস্যা মেটানোর কিন্তু তাও কাজ হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা মানস বিশ্বাস বলেন, জলের সমস্যা না মেটালে গ্রামের কেউ পঞ্চায়েতে ভোট দিতে যাবেন না। 
সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বক্তব্য, আগে এই এলাকার লোকজন সরস্বতী নদীর জলের উপর ভরসা করতেন। এখন সেই জল ও ব্যবহার করা যায় না। গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় জল কলগুলি বিকল হয়ে আছে। পঞ্চায়েতের কোনও হেলদোল নেই। এদিন দেবানন্দপুরের পাশাপাশি রাজহাট এলাকাতেও পানীও জলের দাবিতে অবরোধ চলে বেশ কিছুক্ষণ।
এদিন বিক্ষোভ হয়েছে চন্দ্রকোনাতেও। নভেম্বর মাস থেকে এখানে অকেজো সজল ধারার মেশিন। বার দুয়েক সারানোর নাম করে খরচের হিসাব দেখিয়ে টাকা লুটের মারাত্মক অভিযোগ গ্রামবাসীদের। মিনি ডিপ টিউবয়েলও বন্ধ। গত তিন ধরে এলাকায় পানীয় জলের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় পুরো গ্রাম নির্জলা। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের যাদবনগর মৌজায় চন্দ্রকোনা টাউন থেকে মহেশপুর ও গড়বেতা যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। হাঁড়ি কলসি বালতি সহ পানীয় জলের দাবির পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন তাঁরা। সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত চলে অবরোধ। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে চলে তুমুল বিক্ষোভ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়  চন্দ্রকোনা থানার পুলিশ। পানীয় জল পৌঁছলেই অবরোধ উঠবে বলে জানান ক্ষিপ্ত জনতা। পরে বিডিও’র আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। 
এদিন পুরুলিয়া শহরের পাশাপাশি রাস্তা অবরোধ হয় কাশীপুর ব্লকের রঙ্গিলাডি গ্রামে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের দাবিতে আদ্রা-কাশীপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন সেখানকার মহিলারা। এদিন রঙ্গিলাডি গ্রামে সড়কের মাঝ বরাবর জলের দাবিতে ব্যানার লাগিয়ে রাস্তায় হাঁড়ি কলসি রেখে অবরোধ করেন তাঁরা। এর জেরে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাশীপুর থানার পুলিশ। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলে অবরোধ। অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জল সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, অনেক দূর থেকে তাঁদের জল আনতে হয়। বহুবার জলের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে লাভ না হওয়াতে তাঁরা রাস্তায় বসে প্রতিবাদে শামিল হলেন। এছাড়া এদিন জলের দাবিতে স্থানীয় মানুষজন জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন শহরের রেনী রোড এলাকার বাসিন্দারা। এদিন জলের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হয় সিপিআই(এম)। জলের তীব্র সমস্যার কথা স্বীকার করে নিলেন পৌরসভার চেয়ারপার্সন।  
পার্টির সদর পশ্চিম এরিয়া কমিটির ডাকে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে শামিল হন এদিন। সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বক্তব্য, যে পাম্প হাউসের সামনে আমরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি সেটি দীর্ঘ সময় ধরে অচল। পাম্পটি অচল হয়ে পড়ায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানীয় জলের তীব্র সঙ্কটে পড়েছেন, সেই পাম্পটি মাত্র দু বছর আগে বসানো। অবিলম্বে এলাকায় জল না পৌঁছলে আরো বৃহৎ আন্দোলনে পথে নামবে সিপিআই(এম)। 

 

Comments :0

Login to leave a comment