Md Salim

ভাইপোকে গ্রেপ্তার না করলে সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযান

রাজ্য

অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিকে গ্রেপ্তার করে জেরা না করা হলে ইডি সিবিআই’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে সিপিআই(এম)’র বিশাল মিছিলের শেষে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে জনসমাবেশে তিনি বলেছেন, দুর্নীতি এবং টাকা পাচারে অভিযুক্ত এরাজ্যের এক ভাইপোকে হাজার হাজার পুলিশ পাহারা দিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ রাজ্যে প্রতিদিন বিস্ফোরণে প্রাণহানি হচ্ছে, দলবদ্ধ ধর্ষণ সহ নানা অপরাধ ঘটছে, পুলিশ প্রশাসন সেগুলো দেখতে পাচ্ছে না। এই অপরাধীদের দিয়ে মানুষের সম্পদ লুট থেকে ভোট লুট করানো হয়েছে। আমরা চাই না মানুষ মানুষ আইন হাতে তুলে নিক। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন দায়িত্ব পালন না করলে মানুষের ক্ষোভ তাদের ওপরেও গিয়ে পড়বে। 
এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সেলিম বলেছেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী কান্নাকাটি করছেন সাধের ভাইপোকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে। আমরা বলছি, ইডি সিবিআই’র হাতে সব প্রমাণ যখন আছে তখন ভাইপোকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতির অপরাধে ধৃত অন্যদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে হবে। নাগপুরের নির্দেশে তদন্ত শ্লথ করা হচ্ছে কেন? সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভাইপোকে গ্রেপ্তার করা না হলে ইডি সিবিআই’র দপ্তরে আমরা অভিযান করব। 
এদিন মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হল ময়দান থেকে জেলাশাসকের দপ্তর ও পুলিশ সুপারের দপ্তর অভিমুখে হাজার হাজার মানুষের মিছিল সহকারে অভিযান কর্মসূচি হয় সিপিআই(এম)’র জেলা কমিটির ডাকে। মেদিনীপুর শহরের দখল নেয় লাল ঝান্ডা। সেই মিছিলে পা মেলান মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, জেলা কমিটির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ সহ প্রবীণ পার্টি নেতা দীপক সরকার ও তরুণ রায়। কালেক্টরেট গেটের সামনে তিন মাথার মোড়ে ছয়টি লেন জুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত হয় মিছিল শেষে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় প্রতিটি বুথ এলাকা থেকে পার্টি কর্মী, পঞ্চায়েতের প্রার্থীরা সহ সাধারণ মানুষ শামিল হন এই কর্মসূচিতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পুলিশ প্রশাসনের মদতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুট করেছে তার প্রতিবাদে, পুলিশের সাজানো মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দপ্তরে। আগে থেকে জানিয়ে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা সহ পার্টির জেলা নেতৃত্বের একটি প্রতিনিধিদল এই স্মারকলিপি দিলেও জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার দপ্তরে হাজির ছিলেন না। 
বিক্ষোভ সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যে চোরদের নিরাপত্তায় আছে আইনের রক্ষকরা। প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে চোরদের দালালি করছে। পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা শাসকদলের দালালি করলে প্রোমোশন সহ অনেক কিছু পেতে পারেন, কিন্তু জনগণের করের টাকায় আপনাদের বেতন সহ গাড়ির তেলের টাকা বরাদ্দ হয়। আর সেই গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ টাকা, আবাস যোজনা টাকা লুট হচ্ছে, চাকরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, চোরদের পাহারা দিতে গিয়ে পুলিশ প্রতিবাদীদের ওপরে অত্যাচার করছে। এইসব বন্ধ না হলে শ্রীলঙ্কার মতো জনরোষের শিকার তাঁরাও হবেন। 
সেলিম বলেন, কয়লা পাচার, বালি পাচার, গোরু পাচার, চাকরি চুরি, সব দুর্নীতির টাকা গেছে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। ধর্মতলায় সাজানো মঞ্চে বলছে, আমি ফাঁসিতে যেতে রাজি। অথচ ইডি’র জেরায় যেতে রাজি নয়! ইডি সিবিআই’র ডাক এড়াতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিবালদের মতো উকিলদের বসিয়ে রেখেছে। 
তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভাইপোকে বাঁচাতে আরএসএস’এর প্রেসক্রিপশন মতো এরাজ্যে ওষুধ বিলি করছেন। সরকারি টাকায় ধর্মীয় ভাতা দিচ্ছেন, ধর্মীয় উৎসবে টাকা দিচ্ছেন, মন্দির গড়তে বরাদ্দ করছেন। অথচ ভেঙে পড়া সেতু, স্কুল ঘর মেরামতের জন্য টাকা নেই। সমাবেশে রবীন দেব বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধি ও কাজের আকালে সারা দেশের মানুষ ক্ষিপ্ত, কৃষক শ্রমিকের দুর্দশা বাড়ছে প্রতিদিন। আর এরাজ্যে কাজের অভাবে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে। বাংলাকে ছারখার করে দেওয়া তৃণমূল এরাজ্যে বিজেপি’র ছক অনুযায়ী কাজ করছে। 
সুশান্ত ঘোষ বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় আমাদের প্রার্থী সহ কর্মী সমর্থকদের নামে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। জামিন অযোগ্য ধারা সহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে অনেকের নামে। সংখ্যাটা কয়েক হাজার। এমন দলদাস প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমাদের কমরেডরা সংগঠন করছেন। আগামী দিনেও এর বিরুদ্ধে সব ধরনের লড়াই জারি থাকবে এবং মানুষকে সমবেত করেই সেই লড়াই প্রসারিত করতে হবে। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment