ELECTORAL BOND

রাজ্যসভাকে এড়াতে পরপর অর্থ বিল এনে বদল কর্পোরেট অনুদান বিধিতে

জাতীয়

Electoral bond cpim supreme court bengali news

সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে খারিজ হয়েছে নির্বাচনী বন্ড। সিপিআই(এম) সহ বিরোধীরা বারবার জানিয়ে এসেছেন, দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা দিতেই এই স্কিম চালু করেছে কেন্দ্র, যাতে বেনামে সরকারি তহবিলে অনুদান জোগাতে পারে কর্পোরেট সংস্থাগুলি।

নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প কার্যকর করতে একাধিক আইনে বদল এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। নির্বাচনী বন্ডকে কার্যকর করতে এই সংশোধনীগুলি ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের অর্থবিলের মাধ্যমে আনা হয়েছিল। ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার পরে ২০১৮ সালে সংসদে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিল আনে কেন্দ্র।

অর্থ বিলের মাধ্যমে সংশোধনী আনার কারণ ছিল। রাজ্যসভায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের গরিষ্ঠতা ছিল না। অর্থ বিলে লোকসভার মতামতই চূড়ান্ত, যেখানে বিজেপি’র গরিষ্ঠতা নির্ণায়ক। তাই পরপর অর্থ বিল এনে চালু হয় এই নির্বাচনী বন্ড।  

আগে কোনও রাজনৈতিক দলের তহবিলে ২০হাজার টাকার বেশি অনুদান জমা পড়লে দাতার নাম এবং ঠিকানা প্রকাশ্যে আনতে হত। গোটা প্রক্রিয়া কর ব্যবস্থার অন্তর্গত ছিল। একইসঙ্গে একটি সংস্থা একটি আর্থিক বছরে কত টাকা নির্দিষ্ট একটি দলের তহবিলে দান করতে পারবে, তারও ঊর্ধ্বসীমা ছিল। 

কিন্তু দুটি অর্থ বিলের মাধ্যমে গোটা প্রক্রিয়ায় বদল আনা হয়। ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৬১ সালের আয়কর আইন এবং ২০১৩ সালে পাশ হওয়া কোম্পানি আইনে বদল আনা হয়। সংশোধনীর মাধ্যমে অনুদানের ঊর্ধসীমা তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তহবিলে কোন সংস্থা কত টাকা অনুদান দিল, সেই হিসেব প্রকাশ্যে আনার জন্যও আইনজনিত বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হলো। 

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে সংশোধনীগুলিও বৈধতা হারাল। তারফলে আগের আইনগুলি ফের কার্যকর হয়ে গেল বলেই মনে করছে আইনজ্ঞ মহল। 

আইন কিভাবে বদলেছিল মোদী সরকার?

১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৯-সি ধারা অনুযায়ী একটি আর্থিক বছরে একটি রাজনৈতিক দল কোথা থেকে কত টাকা অনুদান পেয়েছে, সেই সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট পেশ করতে হতো। ২০ হাজার টাকার বেশি মূল্যের যে কোনও অনুদানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। একইসঙ্গে স্পষ্ট করতে হত, অনুদান ব্যক্তির থেকে মিলেছে, নাকি কোনও সংস্থার থেকে। ২০১৭ সালের সংশোধনীতে বলা হয়, যদি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার বেশি অনুদান মেলে, তাহলে দাতার পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য নয় রাজনৈতিক দলগুলি। 

একইভাবে বদল আনা হয় ২০১৩ সালে পাশ হওয়া কোম্পানি আইনেও। এই আইনের ১৮২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আর্থিক অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে একাধিক বিধিনিষেধ মানতে হত। ১৮২(১) ধারা অনুযায়ী, একটি আর্থিক বছরে একটি রাজনৈতিক দলকে কতটাকা অনুদান দেওয়া যাবে, তার ঊর্ধ্বসীমা ছিল। আইনে বলা ছিল, বিগত ৩টি আর্থিক বছরে সংস্থার মোট লাভের ৭.৫ শতাংশের বেশি অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া যাবে না। 

কোম্পানি আইনের ১৮২(৩) ধারা অনুযায়ী, সংস্থাগুলিকেও জানাতে হত তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে কিনা। দিয়ে থাকলে সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ্যে আনতে হত সংস্থাগুলিকে। ২০১৭ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে আনা সংশোধনীর মাধ্যমে অনুদানের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, কর্পোরেট সংস্থাগুলিও আর বাধ্য নয় রাজনৈতিক অনুদান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে। 

নির্বাচনী বন্ডের পথ সুগম করতে বদল আসে ১৯৬১ সালের আয়কর আইনেও। এই আইনের ১৩এ(বি) ধারায় বলা হয়, স্বেচ্ছা অনুদানকে কোনও রাজনৈতিক দলের আয় হিসেবে ধরা হবে না। কিন্তু ২০ হাজার টাকার বেশি অনুদান সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। সেই রেকর্ডে দাতার নাম এবং ঠিকানা থাকা চাই। 

আয়কর আইনের এই ধারায় বদল আনা হয়। বলা হয়, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ২০হাজার টাকার বেশি অনুদান মিললে আর দাতার নাম ঠিকানার রেকর্ড রাখতে হবে না কোনও দলকে। সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনে ১৩এ(ডি) ধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয়, ২ হাজার টাকার বেশি অনুদান কেবল নির্দিষ্ট কতগুলি পদ্ধতিতেই দেওয়া যাবে। সেই নয়া পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয় নির্বাচনী বন্ডের উপর। 

বৃহস্পতিবারের সুপ্রিম রায়ে বৈধতা হারিয়েছে ১৩এ(বি)’র সংশোধনী এবং ১৩এ(ডি) ধারা। 

Comments :0

Login to leave a comment